ঘটা করে সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিলেন মমতা
- শুভজ্যোতি ঘোষ
- বিবিসি বাংলা, দিল্লি

ছবির উৎস, এপি
জমির পর্চা এবং ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে নিচ্ছেন কৃষকরা।
ভারতে পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে টাটা শিল্পগোষ্ঠীর কারখানার জন্য ১০ বছর আগে অধিগৃহীত প্রায় ১০০০ একর জমি বুধবার আবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
গত মাসে এই জমি ফেরানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর বুধবার সিঙ্গুরে এক বিশাল উৎসবের মধ্যে দিয়ে কৃষকদের মধ্যে নয় হাজারেরও বেশি জমির পর্চা বিলি করেছেন তিনি। তুলে দিয়েছেন ক্ষতিপূরণের চেক।
তবে মুখ্যমন্ত্রী সেই সঙ্গেই জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্প ও কৃষি দুইই চায় - এবং টাটা বা বিএমডব্লিউ কারখানা গড়তে চাইলে রাজ্যের অন্যত্র সরকার তাদের জমির ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে সাড়ে তিন দশকের বামপন্থী শাসনের অবসান ঘটিয়ে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার পেছনে এককভাবে যে ইস্যুটির সবচেয়ে বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়, সেই সিঙ্গুরের কৃষিজমি আন্দোলন আজ একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করলো বলা যেতে পারে।
আরো দেখুন:
সিপিএম সরকার জমি অধিগ্রহণ করার ঠিক ১০ বছর পর সিঙ্গুরের কৃষকদের হাতে ফের জমির মালিকানা তুলে দিলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।
সিঙ্গুরের পাশে যে জাতীয় সড়ক আটকে তিনি জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে একদিন ধরনায় বসেছিলেন, বুধবার ঠিক সেখানেই বিশাল মঞ্চ থেকে রীতিমতো উৎসবের পরিবেশে মমতা ব্যানার্জি কৃষকদের হাতে জমির পর্চা তুলে দেন।
সেই মঞ্চ থেকেই বাংলার জয়গান গেয়েছেন শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়, আর মুখ্যমন্ত্রীকে সাবাস জানিয়েছেন দেশের অগ্রণী পরিবেশকর্মী মেধা পাটেকর।

ছবির উৎস, এপি
সিঙ্গুরে উৎফুল্ল মমতা সমর্থকরা
সিঙ্গুরের আন্দোলনকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করে মিস পাটেকর বলেন, "মানুষের জল-জঙ্গল-জমির ওপর যে চিরন্তন অধিকার, সিঙ্গুরে তাকেই মা-মাটি-মানুষের তকমা দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি - এবং সেই আন্দোলনকে সফল করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ক্ষমতায় আসার পরও এই রাজনৈতিক দলটি তাদের অঙ্গীকার ভোলেনি, এটাও প্রায় এক নজিরবিহীন ঘটনা।"
মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁর বক্তৃতায় যেমন তাঁর সিঙ্গুর আন্দোলনের সহকর্মীদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তেমনি তার সরকার যে শিল্পের বিরোধী নয় সেটাও বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
যে টাটা শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে গত পাঁচ বছর ধরে তার সরকার মামলা লড়েছে, এমন কী তারাও যে পশ্চিমবঙ্গে স্বাগত সে কথাও এদিন বারবার উল্লেখ করেছেন মমতা ব্যানার্জি।
তিনি বলেন, "টাটাবাবুরা হয়তো এখানে কারখানা করতে পারেননি, কিন্তু আমরা বিষয়টা স্পোর্টিংলি নিতে চাই। আমি তাদের এক মাস সময় দিলাম, ভেবে দেখুন পশ্চিমবঙ্গে কারখানা করবেন কি না। যদি রাজি থাকেন, তাহলে গোয়ালতোড়ে সরকার নিজের ল্যান্ডব্যাঙ্ক থেকে এক হাজার একর জমি দেবে। কিন্তু কারও জমি কেড়ে নিয়ে সরকার কারখানা করতে দেবে না।"
পাশাপাশি সিঙ্গুরের কৃষকদেরও তিনি কথা দিয়েছেন, ফিরিয়ে দেওয়া জমি সরকার আবার চাষের যোগ্য করে দেবে - এবং যতদিন সেটা না-হচ্ছে তারা ক্ষতিপূরণও পেতে থাকবেন।
তবে সিঙ্গুরের সবাই যে আনন্দোৎসবে শরিক হতে পেরেছেন তা কিন্তু নয়। ছেলের চাকরির আশায় যিনি একদিন স্বেচ্ছায় টাটা কারখানার জন্য জমি দিয়েছিলেন বিফল বাঙাল নামে এই ব্যক্তি যেমন বিবিসিকে বলছিলেন, "যারা জমি দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন আজ তাদের কাছে আনন্দের দিন, আমাদের জন্য নয়!"
তিনি আরও বলছিলেন, "আমরা সবাই ভেবেছিলাম টাটার মতো বড় একটা সংস্থায় এলাকার ছেলেদের চাকরিবাকরি হবে। আমার পরিবারেরও হয়তো কেই পাবে। কিন্তু তা আর হল কই? ফলে আজকের উৎসব নিয়েও আমাদের মাথাব্যথা নেই।"
ফলে সিঙ্গুরে আশা আর আশাভঙ্গ, দুরকম কাহিনীই মিশে আছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি রাজ্য - যেখানে উপযুক্ত জমির খুবই টানাটানি - সেখানে সিঙ্গুর এক্সপেরিমেন্টের চূড়ান্ত ফল হয়তো জানা গেল, কিন্তু রাজ্যে শিল্পের জন্য জমির সংস্থান কীভাবে হবে সেই বিতর্ক হয়তো থামল না।