'আত্মহত্যা-দাঙ্গা ঠেকাতে সতর্ক ছিল তামিল পুলিশ'
- অমিতাভ ভট্টশালী
- বিবিসি বাংলা, কলকাতা

ছবির উৎস, ARUN SANKAR
শোকার্ত জয়াললিতা ভক্তদের উন্মত্ততা ঠেকাতে তৈরি ছিল পুলিশ
গুরুতর অসুস্থ জয়াললিতা মারা গেলে তামিলনাডু জুড়ে ভক্তদের শোকের উচ্ছাসে দাঙ্গা বা আত্মহত্যার হিড়িক পড়ে কিনা -এই শংকায় বেশ কিছু আগে থেকেই সতর্ক ছিল ভারতের পুলিশ।
ভারতের অন্যতম ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ বলে পরিচিত তামিলনাডুর সদ্যপ্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম জয়াললিতা যখন মৃত্যুর সঙ্গে শেষ লড়াই লড়ছেন, তখনই ঘুম ছুটে গিয়েছিল পুলিশ প্রশাসনের।
চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনার সব পুলিশ কর্মীর ছুটি বাতিল করে কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিবিসি-র হাতে আসা সেই নির্দেশিকায় লেখা হয়েছিল, থানাগুলোতে অতি প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কয়েকজনকে রেখে বাকি সব পুলিশকে রাস্তায় মোতায়েন করতে হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে দিল্লি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তড়িঘড়ি চেন্নাইতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শিল্প সুরক্ষা বাহিনী সি আই এস এফের মহাপরিচালককে।
ছবির উৎস, ARUN SANKAR
শোকার্ত জনতার ওপর পুলিশের কড়া নজর
সকলেই আশঙ্কা করেছিলেন যে জয়ললিতার রাজনৈতিক গুরু এম জি রামচন্দ্রনের মৃত্যুর পরে গোটা তামিলনাডু জুড়ে যে দাঙ্গা বেঁধেছিল তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় এবার।
সেই দাঙ্গায় শয়ে শয়ে বাস, দোকানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল উন্মত্ত এম জি আর ভক্তরা।
এম জি আরের অন্তিম যাত্রায় জড়ো হওয়া লোকসংখ্যা এখনও একটা রেকর্ড। প্রায় দশ লক্ষ মানুষের সেই ভীড় এবং সেখানে সহিংসতার ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছিল ২৯ জনের।
আর এম জি আরের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরে আত্মহত্যা করেছিলেন প্রায় তিরিশ জন।
ছবির উৎস, MANJUNATH KIRAN
জয়াললিতার মরদেহ নিয়ে শোভাযাত্রা
এই আশঙ্কা একেবারে অমূলকও ছিল না। এম জি আর এবং জয়ললিতা - দুজনেরই শেষ সময়ের মধ্যে যে বেশ কিছু মিল আছে।
দুজনেই মারা যাওয়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, দুজনেই একটা দীর্ঘ সময়ে ধরে অসুস্থ ছিলেন। দুজনের ভক্তদেরই আত্মহত্যা করে নিজের আনুগত্য প্রমাণের ইতিহাস রয়েছে।
সংবাদসংস্থা পি টি আই ২০১৫ সালে একটি প্রতিবেদন করেছিল, যাতে মিজ. জয়ললিতার দল এ আই এ ডি এম কে-র একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে লেখা হয়েছিল ২০১৪ সালে আদালতের নির্দেশে জয়ললিতাকে যখন জেলে পাঠানো হয়েছিল, তার পরের কয়েকমাসে প্রায় আড়াইশো জন আত্মহত্যা করেছিলেন।
প্রত্যেকটি পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে - মোট সাত কোটিরও বেশী টাকা - এটাই উল্লেখিত ছিল পি টি আই য়ের ওই প্রতিবেদনে।
২০১৪ সালে জয়ললিতা দুর্নীতির মামলায় জেলে যাওয়ার পরে অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমও রিপোর্ট করেছিল প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একশোরও বেশী মানুষ 'তিনি জেলে যাওয়ার কারণে রাগে, দু:খে বা কষ্টে' মারা গেছেন। যাঁদের মধ্যে ১৬ জন আত্মহত্যা করেছিলেন।
কেউ গায়ে কেরোসিন ঢেলে, কেউ বাস বা ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে, অথবা কেউ বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমগুলি খবর দিয়েছিল।
সেই সময়ে পুলিশ আত্মহত্যার সঙ্গে জয়ললিতার জেলে যাওয়ার সম্পর্ক নিয়ে কোনও মন্তব্য করে নি।
বিবিসি-র তামিল বিভাগের প্রধান থিরুমালাই মানিভান্নান বলছিলেন, "সর্বোচ্চ নেতা বা নেত্রীর প্রতি চূড়ান্ত বিশ্বস্ততা বা রাজভক্তি দেখানোর জন্য মাঝারি স্তরের নেতা নেত্রীরা গরীব বা প্রান্তিক মানুষকে আত্মহত্যায় উস্কে দেন। "
"কেউই কখনও স্বীকার করে না এটা। তবে এটাই বাস্তব, যে যারা এই আত্মহত্যাগুলো করে, তারা কখনই মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ নন। ভিক্ষুক বা একেবারে গরীব পরিবারের লোকেদের নানা প্রলোভন দেখানো হয়।"
তিনি আরও বলছিলেন যে সর্বোচ্চ নেতা বা নেত্রীর কাছে নিজের জায়গাটা আরও শক্ত করে নেওয়া বা কোনও পদ যোগাড় করা যায় এই আত্মহত্যাগুলোতে প্ররোচনা দিয়ে।
জয়ললিতা সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে যতবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, তখনও ঘটেছে আত্মহত্যার ঘটনা - এখনও পর্যন্ত তিনটি।
তাই পুলিশ প্রশাসন আর এ আই এ ডি এম কে দল কঠোরভাবে চেষ্টা করেছে তাঁর মৃত্যুর পরে সেরকম কোনও ঘটনা যেন না ঘটায় কেউ।
তামিল বিভাগের প্রধান বলছেন, "যাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য ওগুলো করানো হত, সেই তিনি-ই আর নেই। কার কাছ থেকে পদ যোগাড় করা যাবে, কেই বা আত্মহত্যায় প্ররোচিত হওয়া ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করবে! সেজন্যই এবারে আর আত্মহত্যার ঘটনা হয় নি এখনও।"
এ আই এ ডি এম কে দলও কঠোর নির্দেশ দিয়েছিল প্রতিটি স্তরে যে শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি যেন না হয়, কোনও দলীয় নেতা যেন আত্মহত্যায় কাউকে প্ররোচনা না দেন।
এধরণের আনুষ্ঠানিক সতর্কবাণী অবশ্য এর আগেও পরের পর আত্মহত্যার ঘটনার সময়েও জারী করেছিল অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিঢ় মুন্নেত্রা কাজাগম বা এ আই এ ডি এম কে।