বাংলাদেশে বহু কারখানা সংস্কার শুরুই করেনি- আইএলও প্রধান
- শাহনাজ পারভীন
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা

ছবির উৎস, Adam Berry/ gettys
আইএলও মহা-পরিচালক গাই রাইডার
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও'র মহাপরিচালক গাই রাইডার বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এখনো অনেক কারখানা রয়েছে যারা শ্রমিক নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুত সংস্কারের কাজ শুরুই করেনি।
তিনি বলেন, "বিশেষ করে সাব কন্ট্রাক্টে থাকা ছোট কারখানাগুলো অনেক সময় খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।"
রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতে শ্রমিক নিরাপত্তা বাড়াতে সংস্কারের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো যথেষ্ট কিনা সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মি রাইডার এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে উৎপাদনের চেয়ে বরং ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করে দেয়া উচিত।
"ছোট ফ্যাক্টরিগুলো পর্যন্ত অনেক সময় পৌঁছানো যায় না কারণ সেগুলো খুঁজেই পাওয়া যায়না। সংগতি কম থাকায় তারা সংশোধন কাজ নিয়ে সমস্যায় রয়েছে। কিন্তু একই সাথে আমাকে এটাও বলতে হবে যে, এরকম নিদর্শন আছে যেখানে কারখানা বন্ধ করে দেয়াই বরং উত্তম। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে উৎপাদনের চেয়ে বরং ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করে দেয়াই উচিত"
তিনি বলেন, এরকম কয়েকশো কারখানায় পরিদর্শনই সম্ভব হয়নি।
ছবির উৎস, Accord
বহু কারখানা সংস্কারে পিছিয়ে (ফাইল ফটো)
২০১৩ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে বড় শিল্প দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসে ১১শর বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার পটভূমিতে এই খাতে সংস্কারে দেশি বিদেশি চাপ তৈরি হয়।
চাপের মুখে বিদেশি ক্রেতাদের দুটি প্লাটফর্ম গড়ে ওঠে। কারখানা পরিদর্শনের পর তাদের পক্ষ থেকে ভবনের গঠন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নিয়ে নানা ধরনের সুপারিশ আসে। সেগুলো সংশোধনের জন্য সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ কারখানাই কাজ সম্পন্ন করতে পিছিয়ে রয়েছে।
মি রাইডার বলছেন, বাংলাদেশে পোশাক খাতে সংস্কারে যে অগ্রগতি হয়েছে সেটি বজায় রাখতে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
"এ রকম কারখানা আছে যেখানে সংশোধনমুলক কাজ শুরুই হয়নি। যা আরো দ্রুত শুরু হওয়া উচিত ছিলো। এখন প্রয়োজন হলো চাপ অব্যাহত রাখা। যাতে করে পরিস্থিতি আবার আগে মতো না হয়ে যায়"
ছবির উৎস, MUNIR UZ ZAMAN
রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয় (ফাইল ফটো)
বাংলাদেশের সবচাইতে বড় শিল্প পোশাক খাতে পাঁচ হাজারের মতো কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে। এই খাতে গত বছর ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়েছে।
কিন্তু সংস্কার কাজে অবহেলার জন্য ১২০ টি মতো কারখানার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে নানা ক্রেতা সংস্থা। তবে নানা সময়ে বাংলাদেশে পোশাক খাতে শ্রমিকের নিরাপত্তা, বেতন ভাতা নিয়ে অভিযোগ দুর করার ক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতাদের দায়িত্ব নিয়েও বিতর্ক হয়েছে।
মি রাইডার বলছেন, সেই দায়িত্ব বিদেশি ক্রেতাদেরও ভাগ করে নিতে হবে।
"যাতে শ্রমিকরা বেঁচে থাকার মতো একটি বেতন পান সেটি নিশ্চিত করার জন্য বিদেশি ক্রেতাদেরও এখানে দায়িত্ব রয়েছে। যে কারখানা থেকে তারা পোশাক কিনছেন সেখানে শ্রমিকের প্রতি ন্যায্য আচরণ হচ্ছে কিনা সেটি তাদের নিশ্চিত করতে হবে। সেনিয়ে দেশের ভেতরে মালিক শ্রমিক সরকারের যেমন আলাপ করতে হবে। একই সাথে এই প্রক্রিয়ায় ক্রেতাদেরও যুক্ত করতে হবে। কারণ দায়িত্ব সবাইকে ভাগ করে নিতে হবে"
তিনি বলছেন, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশে পোশাক খাতে সংস্কারে অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশকে এখনো বহু দুর যেতে হবে।