যেভাবে ট্রাম্প এখনো হারতে পারেন

ছবির উৎস, Getty Images
ডনাল্ড ট্রাম্প
নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিক হতে ডিসেম্বরের ১৯ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সেদিন আমেরিকার ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮ জন সদস্য বিভিন্ন রাজ্যে একত্রিত হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত করার জন্য।
আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী এ ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের তেমন কোন প্রভাব নেই। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা 'রাবার স্ট্যাম্পের' মতো কাজ করে।
তবে ২০১৬ সালে ইলেকটোরাল কলেজের ভূমিকায় মনে হচ্ছে তারা এ ভূমিকার ক্ষেত্রে প্রচলিত যে রীতি আছে সেখানে ব্যত্যয় ঘটাতে পারেন।
ইলেকটোরাল কলেজের কোন কোন সদস্য এরই মধ্যে বলা শুরু করেছেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের 'রাবার স্ট্যাম্প' হবার যে ভূমিকা সেখানে একটা পরিবর্তন আনতে হবে। এবং ক্লিনটন শিবির এরই মধ্যে এ ধরনের চিন্তাধারাকে সমর্থনও করছে।
মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে প্রমাণের জন্য ইলেকটোরাল কলেজের ১০ জন সদস্য জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কাছ থেকে একটি ব্রিফিং দেবার জন্য অনুরোধ করেছেন। এ ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যদের মধ্যে নয়জন ডেমোক্রাট এবং একজন রিপাবলিকান।
ক্লিনটন প্রচারণা শিবিরের প্রধান জন পোডেস্টা বলেছেন, এরই মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন তারা।
আমেরিকার সংবিধানে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি চালু করেছেন অ্যালেক্সান্ডার হ্যামিলটন। তিনি একসময় লিখেছিলেন, কোন অযোগ্য কিংবা বিদেশী শক্তির দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তি যাতে প্রেসিডেন্ট হতে না পারেন সেজন্য আমেরিকার সংবিধানে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল।
যে ১০ জন ইলেকটোরাল কলেজ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ব্রিফিং-এর জন্য অনুরোধ করেছেন, তাদের যুক্তি হচ্ছে রাশিয়ার হ্যাকাররা ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা টার্গেট করে তথ্য নিতে চেয়েছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ডনাল্ড ট্রাম্পকে সহায়তা করা। এ সংক্রান্ত প্রমাণ গোয়েন্দাদের কাছে আছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
এত কিছুর পরেও হিলারি ক্লিনটন কিংবা মডারেট রিপাবলিকান হিসেবে পরিচিত ওহাইয়োর গভর্নরের পক্ষে যথেষ্ট সংখ্যক ইলেকটোরাল কলেজ সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
যদিও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একজন রিপাবলিকান বলেছেন তিনি ডনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক বিজয় আটকে দিতে সে অঙ্গরাজ্যের আরো ৩৬ ইলেকটোরাল কলেজকেও একই পদক্ষেপ নিতে হবে।
কিন্তু সেটা হবে বলে মনে হয় না।
ছবির উৎস, Getty Images
আমেরিকার সংবিধানে ইলেকটরাল কলেজ পদ্ধতি চালু করেছেন অ্যালেক্সান্ডার হ্যামিলটন।
কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন, যিনি এ ধারণার প্রবর্তন করেছেন, তিনি কখনো ইচ্ছা পোষণ করেননি যে ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা তাদের বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করবেন।
যদি সেটা হতো তাহলে অতীতে ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা ভিন্নভাবে কাজ করতো। কিন্তু তারা সেটা কখনো করেনি। তারা নিজেরা কখনো একত্রিত হয়নি এবং কোন বিষয়ে আলোচনা বা বিতর্কও করেনি।
তাছাড়া আমেরিকার ২৯টি রাজ্যে এমন আইন আছে যে সাধারণ ভোটারদের ভোটে যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন, ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যদেরও তাকে সমর্থন করতে হবে।
কিন্তু কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির দু'জন সদস্য এ ধরনের আইনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করছেন। যদিও ডনাল্ড ট্রাম্প শিবির সেটির বিরোধিতা করছে।
এতো কিছুর পরেও বাস্তবতা হচ্ছে, মি: ট্রাম্প বেশ দুর্বল সমর্থন নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন। হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে তিনি ২৮ লাখ ভোট কম পেয়েছেন।
এছাড়া তার ইলেকটোরাল কলেজ প্রাপ্তির সংখ্যা ৫৬ শতাংশ। আমেরিকার ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৫৮টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটরাল কলেজ প্রাপ্তির বিবেচনায় মি: ট্রাম্পের অবস্থান ৪৬তম। সেটিও মি: ট্রাম্পের সমর্থনের একটি দুর্বল দিক।