বিজ্ঞানের আসর: জিকা ভাইরাস মোকাবেলার উপায়
সিঙ্গাপুরের পর এশিয়ার আরো একটি দেশ মালয়েশিয়াও এবার সেদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের খবর নিশ্চিত করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৬১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সম্ভবত সংক্রমিত মশার কামড়েই এটা ছড়িয়েছে।
আর এই ঘটনা ঘটেছে দেশের ভেতরেই।
এর আগে মালয়েশিয়ায় আরো একজন মহিলার শরীরে জিকা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিলো কিন্তু সেই সংক্রমণ হয়েছিলো দেশের বাইরে, সিঙ্গাপুরে।
প্রতিবেশী সিঙ্গাপুরে এই জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে দুশোর জনেরও বেশি মানুষের শরীরে। সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, দু'জনের শরীরে যে ভাইরাস পাওয়া গেছে সেগুলো এশিয়ারই মশা প্রজাতি।
সিঙ্গাপুরে যারা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ছ'জন বাংলাদেশী।
বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের শরীরে এই ভাইরাসের মাত্রা কম এবং তারা ক্রমশই সেরে উঠছেন।
জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার জন্যে সিঙ্গাপুরের প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির জরুরী স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান পিটার সালামা বলেছেন, সিঙ্গাপুরের নেওয়া কর্মসূচি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
গত বছর ব্রাজিল ও আশেপাশের দেশগুলোতে জিকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
এরপর থেকে এই ভাইরাসের কারণে মস্তিষ্কে ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মের হার বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সংস্থাটি বলছে, মশাবাহিত এই রোগটির সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর প্রকোপ লাতিন আমেরিকা থেকে খুব দ্রুতই আরো বহু দুর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।
জিকা ভাইরাস
ডাক্তাররা বলছেন, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর উপসর্গ কিন্তু খুব মারাত্মক কিছু নয়- শুরুতে ঠাণ্ডা লাগা বা ফ্লু হওয়ার মতো কিছু হয়।
কিন্তু এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ রকমের। এর ফলে মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সন্তানসম্ভবা নারীরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত ছোট আকারের মাথা নিয়ে নবজাতকের জন্ম হয়।
একারণে আক্রান্ত এলাকায় কর্তৃপক্ষ লোকজনকে এখন সন্তান না নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।
এই জিকা ভাইরাস নিয়ে শুনুন ব্রিটেনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক ড. জাকের উল্লাহর সাক্ষাৎকার।
জুপিটারের চমকপ্রদ কিছু ছবি
সৌরজগতের সবচে বড়ো গ্রহ জুপিটারের নতুন নতুন কিছু ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
অসাধারণ এসব ছবি তোলা হয়েছে মহাকাশে গবেষণারত তাদের একটি যান জুনো থেকে।
এর আগে এই গ্রহটির এরকম ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।
এসব ছবিতে বিস্তারিত অনেক কিছুই নতুন করে দেখা যাচ্ছে যা এখনও পরীক্ষা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
অনুসন্ধানকারী প্রধান বিজ্ঞানী স্কট বোল্টন বলছেন, এই গ্রহটিতে যে নতুন কিছুর সন্ধান পাওয়া গেছে সেটা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত।
ছবির উৎস, NASA
জুনো ও জুপিটার
মহাকাশ বিজ্ঞানী বোল্টন বলছেন, জুপিটারের উত্তর মেরুর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বোঝা যায় এর আগে আমরা এরকম কিছু কল্পনাও করিনি।
গ্রহটির এই অংশটির রঙ নীল, বাকি অংশের তুলনায়। গ্রহটিতে প্রচুর ঝড় হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এসব ছবি দেখে জুপিটারকে চেনাই যায় না।
জুপিটার আসলে একটি গ্যাসের পিণ্ড। ইংরেজিতে বলা হয় গ্যাস জায়ান্ট।
আগে এই গ্রহটিতে ল্যাটিটুডিনাল যেসব ব্যান্ড, বেল্ট বা জোনের কথা ভাবা হতো এখন আর অবাক করা নতুন সব ছবিতে সেসবের চিহ্ন নেই।
দেখা যাচ্ছে, ওখানে মেঘের ছায়া আছে। তার অর্থ এসব অনেক উপর দিয়ে ভাসছে।
জুনো জুপিটারের কক্ষপথে গিয়ে পৌঁছেছে জুলাই মাসের শুরুর দিকে, প্রায় পাঁচ বছরের যাত্রা শেষে।
নাসা বলছে, গ্রহটির খুব কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় এসব ছবি তোলা হয়েছে।
আদিমানব লুসি মারা যায় কিভাবে
আমাদের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে আদিতম একজন মানুষ, বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছেন লুসি, তিনি উপর থেকে পড়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই পূর্বপুরুষের মৃতদেহ জীবাশ্মের আকারে সংরক্ষণ করা রাখা আছে।
এখন সিটি স্ক্যান করে দেখা যাচ্ছে, আধুনিক কালে কোনো মানুষ উপর থেকে পড়ে গেলে তার শরীরের হাড় যেভাবে ভেঙে যায়, সেই একইভাবে লুসিরও হাড় ভেঙে গিয়েছিলো।
ওই জীবাশ্মের বয়স ৩২ লাখ বছর। সংরক্ষণ করে রাখা ইথিওপিয়ায়।
নতুন গবেষণা থেকে ধারণা করা যায় লুসিরা হয়তো গাছের ওপরেই বসবাস করতো।
ছবির উৎস, Science Photo Library
ইথিওপিয়ায় লুসির সংরক্ষিত হাড়
বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নেচারে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, লুসির কাঁধের হাড়, গোড়ালি, পা, বুকের পাঁজর, চোয়াল, মেরুদণ্ড, মাথার খুলি ভেঙে গেছে।
প্রধান গবেষক টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জন ক্যাপেলমান বলেছেন, আমরা দেখিনি লুসি কিভাবে মারা গেছে। কিন্তু তার শরীরের হাড় যেখানে যেখানে ও যেভাবে ভেঙে গেছে, মানুষ উপর থেকে নিচে পড়ে গেলে তার হাড় সেভাবেই ভেঙে যায়। আর সেকারণে বিজ্ঞানীদের ধারণা লুসি হয়তো গাছেই বসবাস করতো।
বিজ্ঞানের আসর পরিবেশন করেছেন মিজানুর রহমান খান।