'পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে'

  • সায়েদুল ইসলাম
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
জেএমবির লোগো

ছবির উৎস, UNK

ছবির ক্যাপশান,

আটক ব্যক্তিরা নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সদস্য বলে র‍্যাব জানিয়েছে

নতুন ধারার জেএমবি সদস্যরা পুরো পরিবার নিয়েই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন। সম্প্রতি এ ধরণের কর্মকাণ্ড আরো বেড়েছে বলে মনে করেন জঙ্গি বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ড একেবারে নতুন নয়। কিন্তু পুরো পরিবার নিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি নতুন বলে এদের সবাই মনে করেন।

বুধবার বিদেশে যাবার প্রস্তুতি কালে নতুন ধারার জেএমবির সদস্য দুই দম্পতিকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)। এরা জিহাদের নামে জেএমবির জন্য সদস্য সংগ্রহ করতো বলে র‍্যাব জানিয়েছে।

সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিয়ের পর তার জিহাদের জন্য বিদেশে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে র‍্যাব জানিয়েছে।

কিন্তু কেন জঙ্গি কর্মকাণ্ডে পরিবারের সদস্যরাও অংশ নিচ্ছেন?

২রা সেপ্টেম্বর ঢাকার মিরপুরে পুলিশের অভিযানে যে কথিত জঙ্গি নেতা নিহত হন, তিনিও সপরিবারেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন। তাদের স্বজনরাও জানিয়েছেন, অন্তত চারমাস আগে হিজরত করার কথা বলে তারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলেন।

তার স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তানকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ছবির ক্যাপশান,

গত জুন মাসেই জঙ্গি বিরোধী বড় ধরণের একটি অভিযান চালায় পুলিশ, যেখানে ১১ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার করা হয়

এর আগে ঢাকা, সিলেট ও বগুড়ার কয়েকজন সদেহভাজন জঙ্গি পরিবার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কথিত ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে সিরিয়ায় গেছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়গুলো এখনো তদন্ত করছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান বিবিসিকে বলেন, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি জঙ্গি আটকের ঘটনায় তাদের সঙ্গে স্ত্রীদের সম্পৃক্ততারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়গুলো আমরা এখন তদন্ত করছি।

র‍্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে পুরুষ জঙ্গি সদস্যরা নিজেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসতেন। কিন্তু এখন অনেক নারী সদস্যরা নিজেরাও সরাসরি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। পরে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে বিয়ে করে পরিবার হিসাবেও এ ধরণের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

ছবির ক্যাপশান,

২০০৫ সাল থেকে নিষিদ্ধ হলেও সম্প্রতি জেএমবি পুনরায় শক্তি বাড়িয়ে চলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। (ফাইল ছবি)

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ''গত কয়েকটি জঙ্গি আটকের ঘটনায় তাদের স্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কেই নারীরা জানতেন, কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের সমর্থনও ছিল। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সামাজিক কারণেই স্বামীর কর্মকাণ্ডে তাদের সমর্থন দিতে হয়েছে। তবে এই নারীদের সরাসরি কোন মামলায় অভিযুক্ত করা হয়নি।''

র‍্যাব এর আগে জানিয়েছে, জেএমবিতেও মহিলা উইং রয়েছে। এই শাখার কয়েকজন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব, যারা বিভিন্ন নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশের একজন জঙ্গি বিশেষজ্ঞ নুর খান লিটন বিবিসিকে বলেন, ''২০০৪ সাল থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জেএমবির সাবেক প্রধান শায়খ আবদুর রহমান তার পরিবারের সদস্যদের নিয়েই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছিলেন। আল-কায়েদার যেসব নেতারা রয়েছে, তারাও পুরো পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে গিয়ে এই ধরণের জিহাদে অংশ নেয়, যাকে তারা হিজরত বলে মনে করে। ওই ধারাবাহিকতায় এখন এই প্রবণতা বাংলাদেশে আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে।''

মাঝে এই প্রবণতা কিছুটা কমলেও সম্প্রতি তা আবার বেড়েছে বলে তিনি জানান।

ছবির ক্যাপশান,

জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রম বিষয়ে পুলিশের তথ্য

এর কারণ হিসাবে মি. খান বলেন, ''নিজেদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সুবিধার জন্যই তারা পরিবারের সদস্যদের এই কাজে উদ্বুদ্ধ করে। এতে তার নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত হয়। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে একটা পরিবার নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। এ কারণে তারাও চেষ্টা করে পরিবারকে এই কর্মকাণ্ডে জড়িত করতে। শুধুমাত্র স্ত্রী নয়, তারা ভাই-সন্তানদের এ ধরণের কাজে জড়িত করছে। প্রায় কুড়ি শতাংশ ক্ষেত্রেই এরকম ঘটনা ঘটছে।''

তিনি বলছেন, ''জঙ্গি সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হলেও, বাকিরা থেকে যায় আইনের বাইরেই।''

তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, জিহাদি বই বা অস্ত্রসহ পরিবারের সদস্যদের আটক করা হলেই কেবল আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে। অন্যথায় জিজ্ঞাসাবাদের পর এই পরিবারগুলোকে নজরদারিতে রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।