সড়ক দুর্ঘটনার কারণ: একজন ড্রাইভারের চোখে

ছবির উৎস, Focus Bangla
রাস্তায় এক সারি মিনিবাস
বাংলাদেশে বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্যে চালকদের অতিরিক্ত পরিশ্রমজনিত ঘুমকে দায়ী করেছেন একজন বাস চালক।
উত্তরবঙ্গের ড্রাইভার রশীদ সর্দার ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহাসড়কে বাস চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করার কারণে ড্রাইভাররা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
সর্বক্ষণ চালকের কাছে থাকা ইঞ্জিনের গরম হাওয়া এবং বাইরের ও আশেপাশের শব্দের কারণেও চালকরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, "সারা রাত ডিউটি করার পর আমাদেরকে পরদিন সকালে আবার গাড়ি চাতে হয়।"
"একটা লোক কিভাবে ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চালাতে পারে? এক সেকেন্ডের জন্যে চোখ বন্ধ হলেওতো অবস্থা খারাপ!" বলেন তিনি।
তিনি জানান, এরকম অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে ঘুমে ঢলে গিয়ে তিনি নিজেও একবার দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
তার মতে চালকের ডিউটি যদি সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টা করে দেওয়া হয় তাহলে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমে যাবে।
এবারের ঈদের সময় আগেপিছে এক সপ্তাহ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বেসরকারি গবেষণায় বলা হয়েছে।
এসব দুর্ঘটনার জন্যে পরিশ্রমের পাশাপাশি রাস্তা ঘাটের বাঁককেও দায়ী করেছেন ড্রাইভার রশীদ। বলেছেন, এসব বাঁকে ওভারটেক করতে গিয়েও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
রাস্তার ত্রুটির কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, অনেক জায়গাতেই রাস্তার ওপর বেশি পিচ ঢালা হয়েছে। ফলে ব্রেক করলেও গাড়ি পিছলে সামনের দিকে চলতে থাকে।
ছবির উৎস, Focus Bangla
দুর্ঘটনার জন্যে রাস্তার ত্রুটিকেও দায়ী করেছেন বাস ড্রাইভার রশীদ সর্দার
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা বাসে বাংলাদেশে তৈরি 'দুই নম্বর' যন্ত্রপাতি লাগানোর কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
"সঠিক টায়ার ব্যবহার না করার কারণে চাকা ফেটে গিয়েও দুর্ঘটনা হয়," বলেন তিনি।
অতিরিক্ত জোরে গাড়ি চালানো, যখন তখন ওভারটেক করা, প্রশিক্ষণ না থাকা, আইন কানুন না মানা - এসব কতোটা দায়ী জানতে চাইলে চালক রশীদ সরদার বলেন, "আমি আইন জানলেও দেখা গেছে অটোবাইক বা সিএনজি চালক বা রিকশাওয়ালা নিয়ম জানে না। একজনের দোষেও আরেকজনের দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার জন্যে আরেকটি কারণ যখন তখন ওভারটেক করা।
"ওভারটেক করার কারণে ওই গাড়ি হয়তো বেঁচে গেলো কিন্তু তখন একটা গাড়ি হয়তো আরেকটা গাড়িকে মেরে দিতে পারে।"
দেশে যথেষ্ট রাস্তাঘাট না থাকাও দুর্ঘটনার একটি কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেছেন, যতো লোকসংখ্যা আর যতো গাড়ি নেমেছে সেই তুলনায় রাস্তার সংখ্যা খুবই কম।