সৈয়দ শামসুল হককে কুড়িগ্রামে দাফন

ঢাকায় সৈয়দ শামসুল হককে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁর অগণিত ভক্ত ও পাঠক।
বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখক সৈয়দ শামসুল হককে বুধবার বিকালে তাঁর জন্মস্থান কুড়িগ্রামের একটি কলেজ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়েছে।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কবি-সাহিত্যিক-ঔপন্যাসিক-গীতিকার মিঃ হকের।
বুধবার সকালে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এই তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও বয়সের মানুষ।
দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে একের পর এক ফুল হাতে তারা কবিকে শেষ বিদায় জানান।
বুধবার সকালে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে কবির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলা একাডেমী হয়ে, সৈয়দ শামসুল হকের মরদেহ ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয় সকাল ১১টা নাগাদ।
অনেকে আসেন বিভিন্ন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিশাল ফুলের তোড়া নিয়ে।
যারা এসেছেন সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে, তাদের একজন আবদুস সালাম বলছেন, সৈয়দ শামসুল হকের মতো মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই তিনি সেখানে গেছেন।
''আমার ছেলেকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছি, যাতে সেও এই মানুষটির বিদায়ের সঙ্গে, দেশের সংস্কৃতি জগতের মানুষদের সঙ্গে তার একটি যোগাযোগ তৈরি হয়।''
শহীদ মিনারে যারা এসেছেন, তাদের হাতে ফুল, অনেকের চোখে দেখা গেছে অশ্রুও। একপাশে একটি টেবিলের উপর রাখা শোকগাঁথায় তারা নিজেদের ভালোবাসা আর বেদনার কথা লিখে রেখেছেন।
তবে বেদনার পাশাপাশি অনেকে মনে করেন, সৈয়দ শামসুল হক বেঁচে থাকবেন তাঁর লেখার মধ্য দিয়েই।
হাতে ফুল, চোখে অশ্রু যারা কবিকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তারা বলছেন তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন সৈয়দ শামসুল হক।
একজন বলছিলেন, তাঁর কবিতা আছে যখন, তখন আর তার শূন্যতা বোধ করার কিছু নেই। তার কবিতার মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন।
আরেকজন বলছেন, আমি শুনেছি, তিনি তিনটি নতুন বই লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। সেটা লিখে যেতে পারলেন না। এটাই আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
ফুল হাতে লাইনে দাঁড়ানো একজন পাঠক বললেন, বয়সের হিসাবে হয়তো তিনি পরিণত বয়সেই গিয়েছেন। সৈয়দ শামসুল হকের অন্য লেখার কথা যদি বাদও দিই, তাঁর ''পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়'' বা ''নুরুল দীনের সারাজীবন''-এর মতো লেখার জন্যই তিনি চিরকাল বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আবার সাবেক শিক্ষক শফি আহমেদের মতো অনেকের মতে, এই কবির মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যে বা নাটকে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা সহজে পূরণ করা যাবে না।
তিনি বলছেন, ''এটা শুধুমাত্র পাঠকের জন্যই শূন্যতা নয়। তার পাঠের মাধ্যমে আমরা দেশ, সমাজকে চিনতে পারি। জীবনটাকে নানাভাবে দেখার, বের করে আনার যে দক্ষতা তার ছিল, এরকম দক্ষতা বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পর কমই দেখা গেছে। লোকে বলে লেখকদের তিনটা চোখ থাকে, আমার মনে হয়, তাঁর তার চেয়েও বেশি চোখ ছিল।''
ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে। সেখানে জানাজার পর তাঁর মরদেহ হেলিকপ্টারে করে জন্মস্থান কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।
কুড়িগ্রামের সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে আরেকটি জানাজার পর বিকালে তাঁকে সেখানেই সমাহিত করা হয়েছে।