আকাশের নেতৃত্বে জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছিলো: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- মীর সাব্বির
- বিবিসি বাংলা

ছবির উৎস, Focus Bangla
পুলিশ বলছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা গাজীপুরের এই বাড়িতে অভিযান চালায়
বাংলাদেশের গাজীপুর এবং টাঙ্গাইলে পৃথক তিনটি অভিযানে যে ১১ জন 'জঙ্গি' নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একজনের নাম আকাশ, বলছে সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আকাশ ছিলো নিউ জেএমবির ঢাকা বিভাগীয় কমান্ডার।
নব্য জামায়াতুল মুজাহেদিন বা নিউজেএমবি নিজেদেরকে বাংলাদেশর আইএস বলে দাবি করে থাকে।
বলা হচ্ছে, আকাশ তার ছদ্মনাম। তার আসল নাম কি সেটি এখনও জানা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরীর মৃত্যুর পর এই আকাশের নেতৃত্বেই জঙ্গিরা সংগঠিত হতে চেষ্টা করছিলো বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
পহেলা জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর ঢাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় পুলিশের অভিযানে নব্য জেএমবির বেশ কিছু সদস্য নিহত হয়েছে।
পুলিশ বলছে, নব্য জেএমবির সদস্যরাই গুলশানে হামলা চালিয়েছে।
ছবির উৎস, Focus Bangla
গাজীপুরের যেখানে পুলিশের অভিযান পরিচালিত হয়
ঢাকার কল্যাণপুরে ৯ জন এবং নারায়ণগঞ্জে চালানো অভিযানে সন্দেহভাজন আরো তিনজন জঙ্গি নিহত হয় ।
তবে একই দিনে পৃথক তিনটি অভিযান এতো 'জঙ্গি' নিহত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
শনিবার ভোর রাত থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এবং র্যাবের প্রথম অভিযানটির খবর পাওয়া যায় গাজীপুরের হাড়িনাল এলাকায়।
প্রায় একই সময়ে তার থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে পাতারটেকে চলে আরেকটি অভিযান।
দুপুরের আগেই হাড়িনালের অভিযানে দু'জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন র্যাব।
এরপর বিকেল নাগাদ পাতারটেকে আরো সাতজন জঙ্গি সদস্য নিহত হয়েছেন বলে ঘটনাস্থলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
মি. খান বলেন, 'বারবার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানোর পরও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করায় পুলিশের বিভিন্ন বাহিনী যৌথভাবে আক্রমণটি পরিচালনা করে।'
নিহতদের সবার পরিচয় নিশ্চিত না হলেও তাদের মধ্যে আকাশকে চিহ্নিত করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
ছবির উৎস, Focus Bangla
পুলিশ যে বাড়িতে অভিযান চালায় সেখানে 'জঙ্গিরা' ভাড়া থাকতো বলে পুলিশ জানিয়েছে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "তামিম চৌধুরীর পরে জঙ্গিদের যে নেতৃত্ব দিতো সে ছদ্মনাম হোক আর টাইটেল হোক তার নাম আকাশ। নিহত এই সাতজনের মধ্যে সে একজন।"
হাড়িনালে যে একতলা বাসায় অভিযান চালানো হয় সেখানে গভীর রাত থেকেই র্যাব এবং পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নেন বলে জানান পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নিহত দু'জন কিছুদিন আগে সেখানে বাসা ভাড়া নেন। মাত্র দেড় মাস আগে ঐ বাসার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল।
"যারা ফজরের নামাজ পড়েছে তারা বলেছেন যে রাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা নাগাদ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখানে আসছে,"বলেন মি. ইসলাম।
তিনি বলেন, সকাল সাতটার দিকে এলাকার লোকজন পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি টের পায়।
তবে তারা কোনরকমের গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাননি বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দুপুরের পর মসজিদের ইমামসহ কয়েকজনকে বাড়িটির ভেতরে নিয়ে নিহত দু'জনের লাশ দেখানো হয়।
এদিকে সকালের অভিযানের পরই অভিযানকারীদের একটি বড় অংশ চলে যান পাতারটেকে।
সেখানকার যে বাসাটিতে অভিযান চালানো হয় তার পার্শ্ববর্তী বাসার একজন বাসিন্দা আলফাজউদ্দিন পালোয়ান জানান, বেশ কিছুক্ষণ গোলাগুলির পর সেখানে সাতজন নিহত হন বলে তারা জানতে পারেন।
পরবর্তীতে মরদেহ দেখার জন্য তিনি বাসার ভেতরেও যান।
তিনি বলেন, নিহতদের দেখে ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সী বলে মনে হয়েছে। তবে তাদের কারো চেহারা তিনি এলাকায় সম্প্রতি দেখেননি বলে জানান।
পুলিশ বলছে, পাতারটেকে যে সাতজন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্তত ৬ জন জঙ্গি হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
"আমরা বলে এসেছি যে আমরা শতভাগ নির্মূল করতে পারিনি। যারা এদিক সেদিক ছিল তারাও সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা নিচ্ছিল এই আকাশের নেতৃত্বেই," বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
ছবির উৎস, Focus Bangla
নিহতদের মৃতদেহ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে
এদিকে, ভোর থেকে টাঙ্গাইলের কাগমারায় র্যাবের আরেক অভিযানে নিহত হয় দু'জন।
ঐ দুজনও নব্য জেএমবির সদস্য বলে জানায় র্যাব।
অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব-১২ এর অধিনায়ক সাহাবউদ্দিন খান বলেন, দুর্গাপূজা এবং আশুরাকে সামনে রেখে জঙ্গিরা সংগঠিত হবার চেষ্টা করছিল বলে তারা ধারণা করছেন।
এসব অভিযান থেকে একে-২২ রাইফেল এবং পিস্তলসহ বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
বাংলাদেশে নব্য জেএমবি হিসেবে চিহ্নিত জঙ্গিরা নিজেদের তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ভাবধারার জঙ্গি হিসেবে দাবী করে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক অভিযানগুলোর কারণে জঙ্গিরা অনেকটাই দুর্বল হয়েছে বলে তারা মনে করেন।