দু'দিনে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে একই ফোন থেকে হত্যার হুমকি
- আহ্রার হোসেন
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা

ছবির উৎস, Getty Images
গত কয়েকদিন তিনজন সুপরিচিত ব্যক্তি মোবাইলে হত্যার হুমকি পেয়েছেন
বাংলাদেশের কয়েকজন সুপরিচিত লেখক এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা অভিযোগ করছেন, তাদেরকে গত কয়েকদিনে টেলিফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এই হুমকিগুলো এসেছে একই নম্বর থেকে।
এদের মধ্যে লেখক মঈনুল আহসান সাবের এবং মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ইতোমধ্যে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগে সুন্দরবনের কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আনু মুহাম্মদকেও একই ধরণের হুমকি দেয়া হয়।
কারা এই হুমকির পেছনে এবং এ ব্যাপারে পুলিশই বা কি করছে?
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মি. ইকবাল এবং তার স্ত্রী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বুধবার রাতে দু'ঘন্টার ব্যবধানে দুটিএসএমএস বার্তায় প্রাণনাশের হুমকি পান। এ বিষয়ে তারা সিলেটের জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করেছেন।
জালালাবাদ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে ইংরেজিতে লেখা মেসেজ আসে। সেখানে 'শিগগিরই তোমাদের হত্যা করা হবে' লেখা ছিল"। যে ফোন নম্বর থেকে এই হুমকি দেয়া হয় সেটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বলে জানান ওসি আক্তার হোসেন।
তারা মিস্টার ইকবালের বাসভবনে এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তা বাড়িয়েছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, হুমকি-দাতা কে বা কারা তা শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এই ধরণের হুমকি পেয়েছেন লেখক মঈনুল আহসান সাবের। বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে নাগাদ তাকে কথিত ইসলামিক স্টেটের বরাতে এই বার্তা পাঠানো হয়।
এতে বলা হয় 'আজ অথবা কাল আপনাকে হত্যা করা হবে'। মি. সাবের তার ফেসবুক পাতায় আজ এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার কথাও জানিয়েছেন।
বুধবার রাতেই এরকম হত্যার হুমকি পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেবেলা থানায় জিডি করতে যান তেলগ্যাসবিদ্যুৎবন্দর রক্ষা কমিটির নেতা অধ্যাপকআনু মুহাম্মদ।
ছবির উৎস, Getty Images
বুধ ও বৃহস্পতিবারের সবগুলো হুমকি এসেছে একটি মাত্র নম্বর থেকে
থানায় ওসির সামনে বসে থাকার সময়ই হত্যার হুমকিসম্বলিত দ্বিতীয় বার্তাটি পান তিনি।
এতে লেখা ছিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের পক্ষে তাকে হ্যাঁ বলতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বিভিন্ন করপোরেট ইন্টারেস্ট থেকে এধরণের হুমকিদাতাদের অনেক সময় ব্যবহার করা হয়।"
"কারা এটা করছে, এই রহস্য থেকে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে অসুবিধাজনক । সরকার বিশ্বাসোগ্যভাবে কাজ করলে এটা থাকবে না। তা নাহলে সমাজে বিরোধিতাকে থামানোর জন্য এদেরকে কেউ ব্যবহার করতে পারে। "
এই হুমকির সব ক'টিই এসেছে একটি মোবাইল নম্বর থেকে। এতে ফোন করে আজ মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে এখন মোবাইল সিম নিবন্ধনের পর কোন নম্বরের মালিকই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার কথা নয়।
কিন্তু সিলেট মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদের কাছে অধ্যপক জাফর ইকবালকে এসএমএসে হুমকির তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা হয়, তদন্ত এখনো চলছে, এবং মোবাইল নম্বরের মালিককে তারা এখনো চিহ্নিত করতে পারেন নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীআসাদুজ্জামান খানও প্রথিতযশা ব্যক্তিদের হুমকির বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি।