ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে নিষিদ্ধ ‘জাগো হুয়া সাভেরা’

  • অমিতাভ ভট্টশালী
  • বিবিসি বাংলা, কলকাতা
জাগো হুয়া সাভেরা ছবিতে তৃপ্তি মিত্র। তিনি ছিলেন ভারতে মঞ্চনাটকের এক খ্যাতিমান অভিনেত্রী।
ছবির ক্যাপশান,

জাগো হুয়া সাভেরা ছবিতে তৃপ্তি মিত্র। তিনি ছিলেন ভারতে মঞ্চনাটকের এক খ্যাতিমান অভিনেত্রী।

ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি যে উত্তেজনা চলছে উরিতে একটি ভারতীয় সেনা ছাউনিতে জঙ্গী হামলার পরে, তার জেরে একটি ক্লাসিক ছবির প্রদর্শন করা হবে না মুম্বইয়ের একটি চলচ্চিত্র উৎসবে।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে ছবিটি দেখানোর ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ প্রদর্শন-তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে ওই ছবিটি।

ভারতীয় উপমহাদেশের এক সময়ের সেরা কলাকুশলী ও শিল্পীদের নিয়ে এবং তৎকালীন পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের নামজাদা কবি, শিল্পী ও গায়কদের সমাগম হয়েছিল ১৯৫৮ সালে তৈরী এই ছবি 'জাগো হুয়া সাভেরা'-তে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝি অবলম্বনে এই পাকিস্তানী ছবিটির স্ক্রিপ্ট, গান এবং সংলাপ লিখেছিলেন প্রখ্যাত কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ। পাকিস্তানের পরিচালক এ জে কারদারের তৈরী এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৃপ্তি মিত্র। বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেতা, পরিচালক এবং সুরকার খান আতাউর রহমান। সঙ্গীত পরিচালনা ছিল প্রখ্যাত শিল্পী তিমির বরণের।

ছবির ক্যাপশান,

পরিচালক এ জে কারদার এই ছবিটি তৈরি করা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে।

ছবিটির ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন এক ব্রিটিশ চিত্রগ্রাহক।

ছবির শ্যুটিং হয়েছিল মেঘনার পাড়ে।

মুম্বই চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, "বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ওই ছবিটি উৎসবে দেখানো হবে না।"

আর যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির আপত্তিতে এই ক্লাসিক ছবির প্রদর্শন থেকে চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ পিছিয়ে এসেছে, সেই সংঘর্ষ ফাউন্ডেশন পুলিশের কাছে জানিয়েছে, "অন্য কোনও ছবিতে আপত্তি নেই, কিন্তু পাকিস্তানের কোনও ছবি যেন দেখানো না হয়।"

ছবির ক্যাপশান,

জাগো হুয়া সাভেরা ছবির পোষ্টার

চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা মনে করেন 'জাগো হুয়া সাভেরা' বিভিন্ন দিক থেকেই ক্লাসিক। এক তো উপমহাদেশের শিল্পী-কলাকুশলীদের এক যৌথ প্রয়াস ছিল এই ছবি, আবার যেভাবে স্মৃতির অতলে পড়ে থাকা ছবিটি উদ্ধার হয়েছে, সেটাও খুব অদ্ভূত।

ছবিটি পাকিস্তানের জেনারেল আয়ুব খান সেদেশে দেখাতে দেন নি। তাই লন্ডনে ছবিটি মুক্তি পায়। ছবির প্রযোজক নোমান তাসিরের পুত্র আঞ্জুম তাসির বিবিসিকে জানিয়েছিলেন যে আয়ুব খান মনে করতেন ওই ছবিটির সঙ্গে কমিনিউস্টরা জড়িত ছিলেন। তখন লন্ডনের ছবিটি প্রথম প্রদর্শনের ব্যবস্থা হয়। সরকারের নির্দেশ না মেনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ও তাঁর স্ত্রী সেই প্রথম প্রদর্শনের দিন হাজির হয়েছিলেন।

কিন্তু তারপরে ছবিটির হঠাৎই হারিয়ে যায়।

ছবির ক্যাপশান,

ছবির চিত্রনাট্য, সংলাপ এবং গান লিখেছিলেন কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ

২০০৭ সালে ফ্রান্সে একটি চলচ্চিত্র উৎসবের আগে আঞ্জুম তাসির পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন আর প্যারিস থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে থাকা ছবির রীলগুলো যোগাড় করেন।

পরে সময় নিয়ে ছবিটি প্রদর্শনযোগ্য করা হয়।

এবছর কান চলচ্চিত্র উৎসবেও ছবিটি দেখানো হয়েছিল।

এরকমই একটি ক্লাসিক ছবির প্রদর্শন বন্ধ হয়ে গেল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আপত্তিতে।

ছবির ক্যাপশান,

ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশের প্রয়াত অভিনেতা এবং চিত্রপরিচালক খান আতাউর রহমান।

তবে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উরির জঙ্গী হামলার পরে যে উত্তেজনা তৈরী হয়েছে, তার প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়েছে দুই দেশের চলচ্চিত্রজগতে: পাকিস্তানী অভিনেতা আছেন বলে অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল ছবিটির প্রদর্শন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, পাকিস্তানি কলাকুশলীদের ভারতে কাজ করা একরকম বন্ধ, আর পাকিস্তানে বন্ধ হয়েছে টেলিভিশনে ভারতীয় ছবি দেখানো।

দুই দেশের মধ্যে সামরিক বা রাজনৈতিক উত্তেজনায় শিল্পী-কলাকুশলীদের জড়িয়ে দেওয়া ঠিক কী না, তা নিয়েও ভারতে চলছে বিতর্ক।