জঙ্গি ইস্যুতে প্রকাশ্য বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েছে র্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট

ছবির উৎস, FACEBOOT PAGE
বেনজির আহমেদ এবং মনিরুল ইসলাম
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেলা হত্যাকাণ্ড এবং জঙ্গি সংগঠন 'নব্য জেএমবি' ইস্যুকে ঘিরে এলিট ফোর্স র্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের মধ্যে মতবিরোধ অনেকটাই প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেছিলেন আব্দুর রহমানই নব্য জেএমবি শীর্ষ নেতা শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ, যার প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান।
ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেলা সহ সারাদেশে ২২টি হামলায় নতুন জেএমবির হাত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
আর বুধবার আরেক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন সম্প্রতি আশুলিয়ায় নিহত জঙ্গি সারোয়ার জাহান জেএমবির তৃতীয় সারির নেতা।
আবার নারায়ণগঞ্জের অভিযানের সময় তামিম চৌধুরী আব্দুর রহমান বা সারোয়ার জাহানের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন, র্যাব মহাপরিচালকের এমন দাবিও উড়িয়ে দেন তিনি।
মি. ইসলাম বলেন, ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেলা হত্যাকাণ্ডে তারা যথাযথ তদন্ত করেছেন এবং তার ভিত্তিতেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী এ মামলায় বিএনপির একজন নেতাসহ কয়েকজন আসামী রয়েছেন।
গত বছর ইটালির নাগরিক চেজারে তাভেলা হত্যার দায় স্বীকার করেছিলো আইএস। কিন্তু পুলিশ চার্জশীট দিয়ে আদালতে জানিয়েছে বিএনপি নেতা কাইয়ুম সহ কয়েকজন জড়িত এ হত্যাকাণ্ডে। আর শুক্রবার র্যাব মহাপরিচালক বলেছেন এটা ছিল নিউ জেএমবির কাজ
তবে র্যাবের মহাপরিচালক তার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন যে এ হত্যাকাণ্ড ছিলো নব্য জেএমবির কাজ।
আবার নব্য জেএমবির সদস্য সংখ্যা এখন ২১ জন বলে র্যাব মহাপরিচালক যে তথ্য দিয়েছিলেন, সেটিও গ্রহণ করেননি মনিরুল ইসলাম।
আর জঙ্গি বিরোধী অভিযান কিংবা এ সম্পর্কিত কার্যক্রম নিয়ে পুলিশেরই এই দুই বিভাগের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নুর খান লিটন, যিনি নিয়মিত জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।
তিনি বলেন, "দুটি বাহিনী থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য যখন জনসম্মুখে চলে আসে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের সমন্বয়হীনতার বিষয়টি সামনে চলে আসে।"
তবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, সমন্বয়নহীনতা জাতীয় কথা-বার্তা একটা প্রশাসনিক বিষয়। এটি আদালতের দেখার বিষয় নয়। ফৌজদারি অপরাধের চূড়ান্ত পরিণতি হবে আদালতে মাধ্যমে।
তবে পুলিশ, র্যাব বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কেউ র্যাব ও কাউন্টার টেররিজমের মধ্যকার বিরোধ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা
যদিও স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের দশ দফা একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে পুলিশ ও র্যাব সদস্যগন সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করবেন এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে চেষ্টা করবেন।
এর আগে গত মাসের শেষ দিকে র্যাবের দিক থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া এক চিঠিতে র্যাবের কিছু সদস্যকে হেনস্থার অভিযোগ আনা হয় কতিপয় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানানো হয় ওই চিঠিতে।
এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ সদর দপ্তর বিষয়টি আমলে নিয়ে পদক্ষেপ নিলেও মূলত এর মধ্যেই গণমাধ্যমে উঠে আসে র্যাব ও পুলিশের মধ্যকার দ্বন্দ্বের বিষয়টি, যার চূড়ান্ত বহি:প্রকাশ ঘটলো চলতি সপ্তাহে র্যাব মহাপরিচালক ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।