নির্বাচন কমিশন গঠনে আলোচনার জন্যে চাপ বাড়ছে
- শাহনাজ পারভীন
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা

ছবির উৎস, BBC Bangla
একটি ভোট কেন্দ্রের ছবি, ফাইল ফটো
বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে।
সব দলের সমন্বয়ে একটি নতুন কমিশন গঠনের ব্যাপারে গত কয়েকদিন যাবত আলাপ উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে।
গতকালই বাংলাদেশের সাবেক একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন, এখনই এটি নিয়ে উদ্যোগ নেয়া না হলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন সর্বদলীয় আলাপ ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
নতুন কমিশন নিয়োগের ব্যাপারে কি ভাবছে ক্ষমতাসীন দল?
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, "প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করেন। সেই সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তিনি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন।"
ছবির উৎস, Rashed Ahmed
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা
তিনি বলেন, "আমরা আশা করছি আমাদের এই ধারা বজায় থাকবে। আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতি যিনি সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন গঠন করার দায়িত্বে, সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা অনুযায়ী তিনি একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন যেটি সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পাবে।"
তবে ২০১৪ সালের পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচন ও সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেই প্রশ্ন আজ আবারো তুলেছেন।
তিনি বলছেন, সর্বদলীয় আলাপ ছাড়া শুধু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে গঠিত নতুন একটি নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি বলেছেন, "নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে একটা সর্বদলীয় কনসেনসাস খুব বেশি প্রয়োজন। এটা না করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে তার ওপর জাতির আস্থা আসবে না এবং সেক্ষেত্রে তাদের পরিচালিত নির্বাচনও কোন অর্থবহ নির্বাচন হবে না।"
মি. হানিফ অবশ্য বলছেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ভুল সিদ্ধান্ত বিএনপি নির্বাচন কমিশনের ওপরে চাপিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলছেন, "বিএনপি আজকে কোন কারণ ছাড়াই তাদের ভুল সিদ্ধান্ত এবং ভুল রাজনীতির কারণে জনগণ থেকে ছিটকে পড়েছে। তাদের এই ভুলটাকে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দিয়ে কিছুটা শান্তি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। নির্বাচন কমিশনের ওপরেই তারা মূলত দায়টা চাপাতে চান।"
ছবির উৎস, DESHAKALYAN CHOWDHURY
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আর মাত্র চার মাসের মধ্যে শেষ হচ্ছে
অন্যদিকে, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, নির্বাচন কমিশন কিভাবে নিয়োগ হবে সেটা সংবিধানে বলা নেই।
কিন্তু সংবিধানে এটা বলা আছে যে সংসদ এই সম্পর্কিত একটি আইন পাশ করবে এবং সেই আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন।
তিনি বলেছেন, "এতদিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতেন কোন আইন ছাড়াই। এটা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন করেনি। কেউ যখন কোনো বিষয়ে প্রশ্ন না করে এবং একটা জিনিস যদি চলতে থাকে তাহলে সেটা বেআইনি নয়।"
"যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি। চারটা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলো কেউ প্রশ্ন করে নি। কিন্তু তারপরে যখন কেউ প্রশ্ন করলো তখন কোর্ট বললো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল, বেআইনি," বলেন তিনি।
তিনি বলছেন, এতদিন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হয়েছে কিন্তু কেউ এটাকে চ্যালেঞ্জ করে নি। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে।
মি. মালিক বলেন, এবার একটি সর্বদলীয় আলোচনা ও বাছাই কমিটি নিয়ে যেমন আলোচনা হচ্ছে তেমনি এবার সংসদে নির্বাচন কমিশন বিষয়ক আইন পাশের চাপও জোরালো হচ্ছে।