মার্কিন নির্বাচন: অভিবাসীদের ভোট পাবে কে ?

  • মাসুদ হাসান খান
  • বিবিসি বাংলা
ডেভন অ্যাভিনিউর দোকানপাট।

ছবির উৎস, BBC Bangla

ছবির ক্যাপশান,

ডেভন অ্যাভিনিউর দোকানপাট।

৪ঠা নভেম্বর ২০১৬ শিকাগো - আমেরিকাকে যদি সত্যিই বলতে হয় যে এটা ইমিগ্র্যান্টদের দেশ, তাহলে ডেভন অ্যাভিনিউকে বলতে হবে এটাই আসল আমেরিকা।

শিকাগো শহরের উত্তর দিকে পূর্বে-পশ্চিমে লম্বা এই রাস্তায় পাশাপাশি বাস করছে সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক থেকে আসা অ্যসিরিয়ান খৃষ্টানরা, রাশিয়া থেকে আসা ইহুদিরা,আর ভারতীয়, বাংলাদেশী ও পাকিস্তানীরা। পাশাপাশি তাদের সাথে এখানে রয়েছে আধুনিক ক্রিস্টিয়ানিটির নানা গোষ্ঠী। কালো-ধলো মিলে একাকার।

শুধু তাই না, যেন আমেরিকার বহুত্ববোধকে স্বীকৃতি দিতেই এই ডেভন অ্যাভিনিউর একাংশের নাম রাখা হয়েছে গান্ধী মার্গ। একটু দূরে গেলেই চোখে পড়বে সাইনবোর্ড মুহাম্মদ আলী জিন্না ওয়ে কিংবা অনারারি শেখ মুজিব ওয়ে। কিন্তু আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে তারা এক সুরে বলবেন, ডেভন অ্যাভিনিউতে তারা সবাই আমেরিকান।

ছবির উৎস, BBC Bangla

ছবির ক্যাপশান,

ভারতীয় কনে সাজানোর দোকানের পাশেই খৃস্টান উপাসনালয়

''দেখুন, নির্বাচন এলেই ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু হয়। অথচ অন্য সময়ে এটা কোন ইস্যুই না,'' বলছিলেন চেন্নাইয়ের খাঁটি তামিলিয়ান নগেন্দ্রন নারায়ানন।

ডেভন অ্যাভিনিউতে বিশুদ্ধ ভেজিটেরিয়ান রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছেন আজ প্রায় আট বছর। ''ইমিগ্র্যান্টরা ছিল, আছে এবং থাকবে।'' বেশ জোর দিয়েই বললেন তিনি, ''খেয়াল করবেন, যারা এটা পছন্দ করতে পারছে না, তাদের সংখ্যা কিন্তু দিনে দিনে কমে আসছে। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো ডনাল্ড ট্রাম্প এদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।''

ছবির উৎস, BBC Bangla

ছবির ক্যাপশান,

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতির সম্মানে ডেভন রোডের একাংশের নামকরন করা হয়েছে।

এই `ট্রাম্প না-পসন্দ` শিকাগোর নতুন মনোভাব নয়। বড় অর্থে পুরো ইলিনয় অঙ্গরাজ্যই ডেমোক্র্যাটদের জন্য নিরাপদ ঘাঁটি। তাহলে আপনি জানতে চাইবেন জনমত জরিপে রিপাবলিকান প্রার্থী যদি হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে সামান্য পিছিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে কারা সমর্থন করছেন, এবং কেন?

এটা নিয়ে নানা মত আছে। যেমনটা সব নির্বাচনের আগে হয়ে থাকে।

কোন কোন থিওরি হচ্ছে, ১৯৩০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে যে মহামন্দা শুরু হয়, সেই উদ্বেগ গণ-মানস থেকে এখনও পুরোপুরি কেটে যায়নি।

সম্প্রতি সাব-প্রাইম মার্কেটের কেলেঙ্কারির জেরে অর্থবাজারে যে উথাল-পাথাল ঢেউ তা সেই গ্রেট ডিপ্রেশনকেই আবার মনে করিয়ে দিয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ইমিগ্র্যান্ট-ধোলাইয়ের রাজনীতি। রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ।

ছবির উৎস, BBC Bangla

ছবির ক্যাপশান,

নগেন্দ্রান নারায়ানান

আমেরিকার সমাজের যে শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে, তারাই ডনাল্ড ট্রাম্পের পেছনে লাইন দিয়েছে বলে মনে করছেন ডেভন অ্যাভিনিউর বাংলাদেশী গ্রসার ওমর ফারুক।

১৯৮১ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসেন মি. ফারুক। এরপর এখানেই ব্যবসা শুরু করেন। তার মালিকানায় সুন্দরবন ফ্রেশ ফিশ ডেভন অ্যাভিনিউর ১০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্টদের রসনার চাহিদা মেটায়।

তার দোকানে লাখ্যা মাছের চালান সম্পর্কে খোঁজ-খবর করতে এসেছিলেন চট্টগ্রামের ছেলে ইফতেখার আজিজ।

ভিডিওর ক্যাপশান,

ইফতেখার আজিজ

তিনি সোজা সাপটাই বলে দিলেন, ইমিগ্র্যান্ট ইস্যু কোন ব্যাপার না। মূল সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার অভাবের জন্য নিম্ন বর্গের এক শ্রেণীর আমেরিকান এখনও প্রাচীন ধ্যান-ধারণাকেই জাপটে ধরে রাখতে চাইছে।

"তাই মুসলমান, ইমিগ্র্যান্ট, নারীর সমঅধিকার ইত্যাদিকে তারা মেনে নিতে পারছেন না। একজন মহিলা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে এটা তারা এখনো মেনে নিতে পারে না" - বলেন তিনি।

তাহলে আমেরিকার ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটি কেন মি. ট্রাম্পকে সমর্থন করতে পারেন না?

ছবির উৎস, BBC Bangla

ছবির ক্যাপশান,

তিমোর বিদানভ

কারণ অর্থনৈতিকভাবে তারাও তো পিছিয়ে রয়েছেন। এর জবাব এসেছিল শিকাগোর এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছ থেকে। ২৫/২৬ বছর বয়সের তিমোর বিদানভের বাড়ি মধ্য এশিয়ার কিরঘিজস্তানে।

রাজধানী বিশকেকে মা-বাবাকে তার নিয়মিত টাকা পাঠাতে হয়।

তিনি বললেন, তার ট্যাক্সির কিছু কিছু আরোহী মাঝেমধ্যেই মুসলমানদের গালাগালি করে। তিনি যখন বলেন যে তিনিও একজন মুসলমান, তখন ট্যাক্সির প্যাসেঞ্জাররা বলেন, না তোমার কথা আলাদা। কারণ তুমি পরিশ্রম করে টাকা আয় করো। ''পার্থক্যটা এখানেই। আমি সারাদিন খাটি, টাকা কামাই, কিন্তু ট্যাক্স দেই। ''

তিনি বললেন, ডনাল্ড ট্রাম্প শুধু ইমিগ্র্যান্টদের গালাগালিই করেন না, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগও তিনি ছাড়েন না।