জামিন পাচ্ছেন ১৬ বছর বিনা বিচারে বন্দী নিঃসঙ্গ এক মানুষ
- আহ্রার হোসেন
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা

ছবির উৎস, Channel 24/Masudur Rahman
হাইকোর্টের নির্দেশে মোহাম্মদ শিপনকে আজ বিচারের সামনে হাজির করা হয়।
একটি পুরনো সংঘর্ষ ও হত্যা মামলায় ১৬ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাবন্দী এক ব্যক্তিকে জামিন দেবার জন্য নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
সেই সাথে ৬০ কর্ম দিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করবারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ শিপন নামের এই ব্যক্তিটি গত ২০০০ সাল থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে কাটাচ্ছেন।
এই সময়ে তার সঙ্গে তার কোন আত্মীয় স্বজনের যোগাযোগ হয়নি, তার কোনও উকিলও ছিল না, তার কথাবার্তা অসংলগ্ন, বলছিলেন হাইকোর্টে মোঃ শিপনের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী কুমার দেবুল দে।
মি. দে উল্লেখ করছেন, তার বয়স আনুমানিক চল্লিশের বেশী এখন।
তার বাম হাতটা কব্জি থেকে কাটা।
যে মামলায় জেরে বন্দি রয়েছেন মোহাম্মদ শিপন, সেই ঘটনার সময়ই তিনি বাঁ হাতের সবগুলো আঙুলসহ পুরো তালুটা হারিয়েছেন বলে মি. দে'র ধারণা।
মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেয়ায় এ ব্যাপারেও অসংলগ্ন বক্তব্য এসেছে বন্দী শিপনের কাছ থেকে।
ঘটনার শুরু ১৯৯৪ সালে।
ওই সময় ঢাকার পুরনো অংশে সূত্রাপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি সংঘর্ষ হয় এবং তাতে একজন নিহত হয়।
এ নিয়ে যে মামলাটি হয়, তাতে ২০০০ সালে গ্রেপ্তার হন মি. শিপন।
মামলাটির বিচার আজো শেষ হয়নি।
ছবির উৎস, Channel 24/Masudur Rahman
২০০০ সালে যখন গ্রেপ্তার হন, তখন এরকম দেখতে ছিলেন মোহাম্মদ শিপন। ছবিটি পুলিশের নথি থেকে প্রাপ্ত।
এ নিয়ে গত ২৬শে অক্টোবর ঢাকার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রচারিত হয়।
সেই রিপোর্টটি দেখেই আইনজীবী মি. দে ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন এবং মোহাম্মদ শিপনের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এতদিন কিভাবে এই ব্যক্তিটির আত্মীয়রা তার খোঁজ নিল না?
এর উত্তর অবশ্য মেলেনি।
তবে মি. দে'র কাছে এটুকু জানা যাচ্ছে, এই ঘটনাটি সম্প্রতি গণমাধ্যমে নানাভাবে প্রকাশিত হবার পর সূত্রাপুর থেকে অনেক মানুষই তাকে ফোন করে বলেছেন যে তারা ভেবেছিলেন শিপন আর বেঁচে নেই।
এদিকে, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক মাসুদুর রহমান বিবিসিকে বলেন, তার করা প্রতিবেদনটি প্রচারিত হবার পর অস্ট্রেলিয়া থেকে এক প্রবাসী বাংলাদেশী তাকে টেলিফোন করে বলেছিলেন যে ১৯৯৪ সালের সূত্রাপুরের ওই সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে মোহাম্মদ শিপনকে তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে 'ট্রাফিক কন্ট্রোল' করতে দেখেছেন।
অর্থাৎ, তখন থেকেই শিপনের মস্তিষ্ক বিকৃতি ছিল। সে ছিল ভাসমান একজন মানুষ। তার কোন আত্মীয়-স্বজনকে কেউ চিনত না, বলছিলেন মি. রহমান।
এখন শিপনের যে অবস্থা, তাতে সে জামিনে মুক্তি পেলেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে খোদ হাইকোর্টেরই সংশয় আছে।
হাইকোর্ট তাই আরো নির্দেশ দিয়েছেন, প্রয়োজনেই সরকারই যেন তার পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেয়।
আর তাকে আইনি সহায়তা দেবার জন্যও ঢাকা লিগ্যাল এইড অফিসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রধান খবর
চিঠিপত্র ও মতামত
এডিটার'স মেইলবক্স: মুশতাকের মৃত্যু আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রশ্ন
চলতি সপ্তাহে একটি খবর অনেককে নাড়া দিয়েছে, আর সেটা হল কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু।