নোট বদলালেই আঙুলে কালি লাগানো হচ্ছে
- অমিতাভ ভট্টশালী
- বিবিসি বাংলা, কলকাতা

কোলকাতায় একটি ব্যাংকের সামনে লোকের লাইন
ভারতে কর্তৃপক্ষ বলেছে, অচল ঘোষিত ৫০০ ও ১০০০ রুপীর নোট বদল করতে গেলেই ব্যাঙ্ক থেকে আঙুলে কালি লাগিয়ে দেওয়া হবে, যাতে একই ব্যক্তি বারবার নোট বদল না করতে পারেন।
জাতীয় ছুটির জন্য সোমবার বন্ধ থাকার পরে আজ সকাল থেকে ভারতে ব্যাঙ্কগুলি আবারও খুলেছে।
ভারতে পাঁচশো এবং এক হাজার টাকা নোট অচল হয়ে যাওয়ার ঘোষণা ছ'দিন পরেও সাধারণ মানুষ বলছেন নিত্যনতুন সরকারী নির্দেশ আসায় তাঁরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
গত কয়েকদিনের মতোই মঙ্গলবারও বহু এ টি এমেই টাকা ছিল না, অথবা কিছুক্ষণের মধ্যেই টাকা শেষ হয়ে যায়। ব্যাঙ্ক লাগোয়া এ টি এম - যেগুলিতে মাঝেমাঝেই টাকা ভরা হচ্ছে, সেখানেই মানুষের ভীড় ছিল বেশী।
আর এরই মধ্যে নোট বদল বা টাকা তোলার নতুন নতুন নির্দেশ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
ছবির উৎস, Getty Images
কালো টাকা ঠেকাতেই নোট অচলের পদক্ষেপ, বলছে সরকার
আজ কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন একব্যক্তি যাতে বারে বারে নোট বদল না করতে পারেন, তার জন্য আঙুলে কালি লাগিয়ে দেওয়া হবে।
"এরকম খবর পাওয়া যাচ্ছে যে কালো টাকা বৈধ করার জন্য অনেকে সাধারণ - নিরপরাধ ব্যক্তিদের হাতে টাকা দিয়ে বদল করার জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্কে পাঠাচ্ছেন। একেকবারে চার-সাড়ে চার হাজার টাকা বদল করে বৈধ নোট যোগাড় করার জন্য একাধিক শাখা বা একাধিক ব্যাঙ্কেও পাঠানো হচ্ছে। এর ফলে অনেক সাধারণ মানুষ টাকা বদল করতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা হয়তো ব্যাঙ্ক বা এ টি এমের কাউন্টারে পৌঁছতেই পারছেন না।"
"সরকার তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নোট বদল করতে এলেই আঙুলে কালির দাগ লাগিয়ে দেওয়া হবে - যেভাবে ভোট দেওয়ার পরে কালি লাগানো হয়, সেভাবে," সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ভারতের অর্থ বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস।
গতকালই একগুচ্ছ নতুন নির্দেশিকা জারি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার - যার মধ্যে ছিল টাকা বদল এবং অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার সীমা বৃদ্ধি। আজ আবার এসেছে আঙুলে কালি লাগানোর নির্দেশিকা।
নিত্যনতুন এই সব নির্দেশের ফলে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের সামনে টাকা তোলার লাইনে দাঁড়ানো এক নারী বলছিলেন, "একেক দিন নতুন নতুন নির্দেশ দিচ্ছে, সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। আমিই যেমন বুঝে উঠতে পারছি না যে ২৪ হাজার টাকা তোলার যে নতুন উর্দ্ধসীমা, সেটা অ্যাকাউন্ট আর এ টি এম সব মিলিয়ে কী না। অনেকেরই কনফিউশন হচ্ছে।"
ছবির উৎস, SAM PANTHAKY
ব্যাংকে জমা পড়া অচল টাকা
আরেক ব্যক্তির কথায়, "আমাদের কনফিউশনে তো আর ব্যাঙ্কের লোকেদের কিছু যায় আসে না, তারা তাদের মতোই করবে।"
ওই লাইনেই কেউ দাঁড়িয়েছিলেন এক দেড় ঘন্টা, কেউ আরও বেশী।
তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম নোট অচলের ঘোষণার পরে ছয় দিন কেটে গেছে, কিন্তু ভোগান্তি কী কমেছে? পাওয়া গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
একজন বলছিলেন, "এর আগে একদিন চার ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা পেয়েছি, আজও প্রায় দুঘন্টা হয়ে গেল। ব্যাঙ্কের ভেতরে তো আরও খারাপ অবস্থা। খুব ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে।"
"সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে গেলেই দুহাজার টাকার নতুন নোট দিচ্ছে, সেটা কোথাও ভাঙানো যাচ্ছে না, কেউ খুচরো দিচ্ছে না। আগে ১০০ বা ৫০০ টাকার নতুন নোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত্," মন্তব্য একজন গ্রাহকের ।
এক বয়স্ক ব্যক্তি বলছিলেন, "পরিকল্পনাটা যদি ঠিকঠাক করত তাহলে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তিটা হত না।"
ছবির উৎস, PRAKASH SINGH
নোট অচলে লোকের অসুবিধায় দু:খ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী
তবে বেশ কয়েকজনের কথায়, "একেবারে গোড়ায় যে অবস্থা হয়েছিল, তার থেকে কিছুটা উন্নতি নিসন্দেহে হয়েছে। লাইনে এখনও দাঁড়াতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ, তবে ধীরে ধীরে লাইনটা এগোচ্ছেও। প্রথম কদিন তো এগোনই যাচ্ছিল না মোটে।"
একদিকে যেমন বৈধ উপায়ে নোট বদল বা টাকা তোলার জন্য সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গত কয়েকদিন ধরে, তেমনই যাঁদের কাছে অবৈধভাবে জমিয়ে রাখা পুরনো নোট রয়েছে, সেগুলো তাঁরা কীভাবে ব্যবহার করবেন, সেটা ভেবে চলেছেন।
আর যাঁরা অনেক ভেবেও অবৈধভাবে জমানো নোট বদলানোর রাস্তা বার করতে পারেন নি, তাঁদের কেউ কেউ সেগুলো নষ্ট করে ফেলছেন।
গত কয়েকদিনে কলকাতা সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ডাস্টবিনে অচল নোটের বস্তা পাওয়ার অথবা গঙ্গা নদীতে প্রচুর অচল নোট ভেসে যাওয়ার খবর এসেছে।
উত্তরপ্রদেশে বস্তা ভর্তি অচল নোট আধপোড়া অবস্থাতেও পাওয়া গেছে।
প্রধান খবর
চিঠিপত্র ও মতামত
এডিটার'স মেইলবক্স: আল জাজিরা নিয়ে 'একপেশে' আর চীন-ভারত নিয়ে দ্বিচারিতা?
বাংলাদেশে আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে আলাপ-আলোচনার মনে হচ্ছে কোন শেষ নাই।