ডিভোর্সের পর অচল টাকায় খোরপোষ, হাজতে স্বামী
- অমিতাভ ভট্টশালী
- বিবিসি, কলকাতা

ছবির উৎস, PRAKASH SINGH
ভারতে পাঁচশো এবং এক হাজার টাকার নোট অচল হয়ে যাওয়ার পর বেশ কদিন গেলেও এখনো অনেকেই ভোগান্তিতে ।
ভারতের কলকাতার বিজয় শীলের বিচ্ছেদের পর প্রাক্তন স্ত্রী মিজ সুমিত্রার সাথে খোরপোষের মামলা চলছিল ।
সম্প্রতি বাতিল হয়ে যাওয়া ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটে প্রাক্তন স্ত্রীকে খোরপোষের টাকা দিতে চেয়েছিলেন মি. শীল। কিন্তু বাতিল নোটে খোরপোষ নিতে রাজী হননি সাবেক স্ত্রী।
ফলে একমাসের জন্য ওই বৃদ্ধকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে পারিবারিক আদালত।
ভারতে ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট অচল হওয়ার জেরে গত এক সপ্তাহে বহু মানুষকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, কিন্তু তার জেরে জেল খাটার মতো ঘটনা এই প্রথম সামনে এসেছে।
মি. শীলের প্রাক্তন স্ত্রী সুমিত্রার আইনজীবী অঙ্কিতা দাস বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন "মি. শীলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে বেশ কয়েকবছর ধরে আদালত নির্ধারিত খোরপোষ দিচ্ছেন না এবং তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। গ্রেপ্তারী পরোয়ানাও জারি হয় তাঁর নামে। পুলিশ গত ৮ই নভেম্বর মি. শীলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করে"।
অন্যদিকে মি. শীলের আইনজীবী প্রতাপ দে জানিয়েছেন, নোট বাতিল হওয়ার আগেই বেশিরভাগ টাকা পরিশোধ করে দিতে চেয়েছিলেন তার মক্কেল।
"সেদিনই বকেয়া খোরপোষের সিংহভাগ - দুইলক্ষ টাকা আদালতের সামনেই তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকে দিতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদালত নির্দেশ দিয়েছিল বাকি ২৫ হাজার টাকা না যোগাড় হওয়া পর্যন্ত জেল হাজতে থাকতে হবে। তখনও কিন্তু ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট অচল ঘোষণা করা হয়নি"।
তবে মি, শীলের হাজিরার দিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট অচল বলে ঘোষণা করেন।
ছবির উৎস, Getty Images
কালো টাকা ঠেকাতেই নোট অচলের পদক্ষেপ বলছে সরকার। এবার এই নোটের কারণে হাজতবাসের খবর এলো।
মঙ্গলবার ফের হাজিরার দিনে মি. শীলের আত্মীয়রা পুরো বকেয়া খোরপোষ, অর্থাৎ ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নিয়েই আদালতে গিয়েছিলেন। তবে তাঁর প্রাক্তন অচল নোটে খোরপোষ নিতে অস্বীকৃতি জানা।
"আদালতে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলাম, টাকাটা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে বৈধ নোট তুলে নিতে পারবেন তিনি। এটা তো কোনও বেআইনি বা কালো টাকা নয়! চেক বা ডিম্যান্ড ড্রাফটেও বকেয়া টাকা নিতে চাইলেন না উনি। কিন্তু মাননীয় বিচারক আমার মক্কেলকে একমাসের জন্য জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন," বলছিলেন মি. শীলের আইনজীবী প্রতাপ দে।
অন্যদিকে সুমিত্রা দেবীর আইনজীবী অঙ্কিতা দাস উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, "অচল নোটে খোরপোষ কীভাবে উনি নেবেন? উনার কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও নেই। এই পরিমাণ টাকা নতুন নোটে কীভাবে বদল করবেন একজন বয়স্ক নারী?"
তবে মি. শীলের আইনজীবী আজই ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করবেন।