প্রাণ ভয়ে ভীত শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-শিশুকে ‘পুশব্যাক’
- আহ্রার হোসেন
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা

ছবির উৎস, Getty Images
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ব্যাপারে কঠোর নীতি রয়েছে বাংলাদেশের। ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালেও রাখাইন থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা বহু রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে পুশব্যাক করেছিল বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা। (ফাইল চিত্র)
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযান থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের সীমান্ত থেকে 'পুশব্যাক' অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার রাতেও কক্সবাজারের টেকনাফ সংলগ্ন নাফ নদী দিয়ে সাতটি কাঠের নৌকায় করে ১শ ২৫ জনের মত রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের মংডু থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় কোস্ট গার্ডের টহলের মুখে পড়ে যায়।
কোস্ট গার্ড তাদের পুশব্যাক করে অর্থাৎ মিয়ানমারের দিকে ঠেলে দেয়।
কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট নাফিউর রহমান বিবিসিকে বলছেন, "তাদের উদ্দেশ্য ছিল হয়তো বাংলাদেশের দিকে আসা, এজন্য আমরা তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দেই। অনেকটা পুশব্যাকের মত বলা যায়"।
নৌকাগুলোতে ৩৬টি শিশু ছিল। পুরুষ ছিল মোট ২৮ জন। বাকীরা নারী।
সঠিক সংখ্যা না জানা গেলেও প্রায় প্রতিদিনই মোটামুটি এমন পুশব্যাকের ঘটনা ঘটছে।
বৃহস্পতিবার রাতেও ৭৮ জন এবং বুধবার রাতে আরো ১৮ জনকে পুশব্যাকের কথা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যাচ্ছে।
আরো পড়ুন:
ছবির উৎস, Getty Images
কঠোর নীতি স্বত্বেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বাংলাদেশ। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো বলছে, বাংলাদেশের মিয়ানমারের সাথে পুরো সীমান্ত নিশ্ছিদ্র করার মত জনবল নেই। ফলে প্রায় প্রতিদিনই বহু রোহিঙ্গা মুসলমান সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে ঢুকে পড়তে পারছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। ছবিটি টেকনাফের একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে তোলা। (ফাইল চিত্র)
কিন্তু বাংলাদেশে যে শত শত রোহিঙ্গা পালিয়ে আসছে এবং তাদেরকে ফের পুশব্যাক করা হচ্ছে, এমন খবর অস্বীকার করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
দেশটির সুপরিচিত ইংরেজি দৈনিক নিউ লাইট অফ মিয়ানমারের খবরে স্টেট কাউন্সেলর অফিসের নিউজ ইনফরমেশন কমিটির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে শত শত মানুষ নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে বলে খবর বের হচ্ছে, তদন্ত করে সেই খবরের কোন ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই আসছে এমন পালিয়ে আসা এবং পুশব্যাকের খবর।
এমনকি, এসব খবর আমলে নিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেবার আহ্বানও জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশের দায়িত্বশীল কোন সূত্র এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ না খুললেও, স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর সাথে কথা বলে এবং তাদের কর্মকাণ্ডে এটা স্পষ্ট যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কাউকে আশ্রয় না দেয়ার কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে দেশটি।
এ লক্ষ্যে সীমান্তে নজরদারি ও জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তবে এত কড়াকড়ি স্বত্বেও বহু রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশের ভূখণ্ডে গত কয়েকদিনে ঢুকে পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু গত ৯ই অক্টোবর থেকে রাখাইনে যে সেনা অভিযান চলছে, তারপর থেকে বহু রোহিঙ্গা মুসলমান প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে, এমন খবর গত ক'দিন ধরেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে আসছে।
এই অভিযানে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নির্বিচারে হত্যা, মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ব্যাপক ভিত্তিক অভিযোগ আছে।
সেনাবাহিনী বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
টানা অভিযোগের এক পর্যায়ে তারা সম্প্রতি শুধুমাত্র ৬৯ জন 'বাঙ্গালী' এবং 'সহিংস হামলাকারী'কে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
প্রধান খবর
চিঠিপত্র ও মতামত
এডিটার'স মেইলবক্স: মুশতাকের মৃত্যু আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রশ্ন
চলতি সপ্তাহে একটি খবর অনেককে নাড়া দিয়েছে, আর সেটা হল কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু।