বায়ুমণ্ডলে বাড়ছে ক্ষতিকর মিথেন: উৎস কোথায়
বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের মাত্রা যে হারে বাড়ছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, এই শতাব্দীর শুরুর দিকে এই গ্যাসের ছড়িয়ে পড়ার হার একটা জায়গায় থিতু হয়েছিলো কিন্তু এখন আবার তার মজুদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গঠনের দিক থেকে, কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও ছোট উপাদান এই মিথেন গ্যাস- সি এইচ ফোর।
কিন্তু এর গ্রীণহাউজ এফেক্ট বা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, মিথেন গ্যাসের ছড়িয়ে পড়ার হার যদি কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা না যায়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করার জন্যে বর্তমানে যেসব লড়াই সংগ্রাম চলছে, তাতে খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না।
অ্যামেরিকায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও গবেষক রবার্ট জ্যাকসন বলছেন, "জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকানোর জন্যে বর্তমানে যেসব কর্মসূচি চালানো হচ্ছে তাতে কার্বন ডাই অক্সাইডের ওপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। তবে আমরা যদি এখন এই মিথেন গ্যাসের দিকে নজর না দেই, তাহলে সেই ঝুঁকিটা থেকেই যাবে।"
ছবির উৎস, Trisha Boyko
মিথেন গ্যাসের একটি বড় উৎস গবাদি পশু
তিনি বলেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন কমানোর মধ্য দিয়ে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, মিথেন গ্যাসের ছড়িয়ে পড়ার কারণে সেই অগ্রগতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।"
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায়, মিথেন গ্যাস, বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা এক শতাব্দী কাল সময়ব্যাপী ৩০ গুণ বেশি ধরে রাখতে পারে।
সান ফ্রান্সিসকোতে অ্যামেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের সম্মেলনের আগে প্রফেসর জ্যাকসন, মিথেনের ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের সতর্ক করে দিয়েছেন।
এ-সপ্তাহেই বিজ্ঞানীদের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে যেখানে আলোচনার একটি প্রধান বিষয় হবে এই মিথেন গ্যাস। পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার্সে এবিষয়ে একটি নিবন্ধও লিখেছেন তিনি।
হঠাৎ করে মিথেনের ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা কেনো বেড়ে গেছে- তার কারণ এখনও খুব একটা স্পষ্ট নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মিথেন গ্যাস নির্গমনের হার, একটা পর্যায়ে এসে থিতু হয়ে পড়েছিলো।
ছবির উৎস, AFP
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে জলবায়ুতে বড়ো রকমের পরিবর্তন ঘটতে পারে
কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা উর্ধ্বমূখী হয়ে দাঁড়ায়। তারপর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে এসে এই হার খুবই দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন কমাতে নানা ধরনের তৎপরতার কারণে বায়মুণ্ডলে গত কয়েক বছরে এর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ধারণা করা হয়েছিলো এই হার আগামীতে আরও কমে আসতে পারে।
প্রফেসর জ্যাকসান বলছেন, মিথেনের অনেক উৎস আছে। তবে এই গ্যাস নির্গমনের হার এতো বেশি বেড়ে যাওয়ার পেছনে একটা কারণ হতে পারে - সম্ভবত কৃষি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, "গত এক দশকে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানীর নির্গমন দেখতে পেয়েছি। তবে আমরা মনে করি এর পেছনে বায়োলজিক্যাল সোর্সেস অর্থাৎ গবাদি পশু এবং ট্রপিক্যাল সোর্সেস অর্থাৎ ধানগাছ, জলাভূমি এবং গাছপালা, সম্ভবত বড় রকমের উৎস হতে পারে।"
ছবির উৎস, AP
তাপমাত্রা যাতে বর্তমানের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে তার টার্গেট নির্ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা
এসব নিয়েই শুনুন বাংলাদেশে পরিবেশ বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমানের সাক্ষাৎকার।
বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যাতে বর্তমানের চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি না পায় সেজন্যে একটি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই টার্গেট অর্জন করতে হলে এখনই মিথেন গ্যাসের নিয়ন্ত্রণের ওপর নজর দেওয়া জরুরি।
হুমকির মুখে রেইনডিয়ার
লাপল্যান্ড এলাকায় একটি বৃহদাকার হরিণ রেইনডিয়ার। বাংলায় বলা যেতে পারে বলগা হরিণ।
এই হরিণ প্রজাতিটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
গবেষকরা বলছেন, আর্কটিক অঞ্চলের রেইনডিয়ার এখন আকারে ক্রমশই খর্বকায় হয়ে উঠছে। দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সেই মৃত্যু বরণ করছে।
গবেষকরা এজন্যে জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করছেন।
রেইনডিয়ার: হুমকির মুখে
নরওয়েজিয়ান আর্কটিক অঞ্চলের স্ভালবার্ড এলাকায় এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ১৬ বছরে, প্রাপ্ত বয়স্ক একটি নারী রেইনডিয়ারের ওজন গড়ে প্রায় ৫৫ থেকে ৪৮ কিলোগ্রাম কমে গেছে।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রফেসর স্টিভ অ্যালবন। তিনি বলছেন, শীতকালে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে- প্রচুর বৃষ্টিপাত। এর ফলে তুষারের ওপর বরফের মোটা স্তরের সৃষ্টি হয়। তখন রেইনডিয়ারের পক্ষে খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরো বলছেন, গরম আবহাওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে রেইনডিয়ার এখন অটামের সময় অর্থাৎ সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বরে গর্ভধারণ করে এবং গোটা শীতকাল-জুড়ে সে পেটের ভেতরে তার সন্তানকে বহন করতে হয় যখন খাদ্যের পরিমাণ কম থাকে।
ফলে তাদের জীবন রক্ষাও কঠিন হয়ে দাড়ায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রবণতা আর্কটিক অঞ্চলের আরো কিছু প্রাণীর বেলাতেও চোখে পড়েছে।
বিজ্ঞানের আসর পরিবেশন করছেন মিজানুর রহমান খান