নতুন প্রজন্ম জাকির নায়েকের দ্বারা কতটা প্রভাবিত?

বিতর্কিত ইসলাম ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েক
বিতর্কিত ইসলাম ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের অভিযোগ তিনি তার ভাষণের মাধ্যমে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টিতে প্ররোচনা দেন।
কিন্তু মুম্বাই ভিত্তিক এই ধর্মপ্রচারকের প্রচারণার আসল প্রভাব কতটুকু?
বিবিসির জুবায়ের আহমেদ বলছেন ভারত সরকার তাকে ইসলামী উগ্রপন্থার প্রবক্তা বলে মনে করলেও তিনি দেখেছেন ভারতে এবং ভারতের বাইরে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রচুর।
জাকির নায়েকের ইসলামী আন্তর্জাতিক স্কুলটি ছিল মুম্বাইয়ের এক জনাকীর্ণ শহরতলীতে।
স্কুলটিতে ছেলে আর মেয়ে একসঙ্গে পড়লেও তাদের মেলামেশার অনুমতি ছিল না। ছেলেদের ক্লাশরুম একতলায়, আর মেয়েদের দোতলায়।
স্কুলটি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে আদর্শ শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল ইসলামের অনুশাসন মেনে, সেই সঙ্গে পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা অনুযায়ী কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত পাঠ্যক্রমও সেখানে অনুসরণ করা হতো।
ছবির উৎস, Anushree Fadnavis/Indus Images
মিঃ নায়েক পড়েছেন মুম্বাইয়ের সেন্ট মেরিস্ হাই স্কুলে
ছবির উৎস, Anushree Fadnavis/Indus Images
ইসলামিক ইন্টারন্যাশানাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের "আধুনিক" পাঠ্যক্রম নিয়ে গর্বিত
তিনি আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সমালোচনা করতে সবসময় আপত্তি করেছেন। নিউইর্য়কে ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলাকে তিনি "ভেতরের কাজ" বলে নাকচ করে দিয়েছেন। এবং এসব বক্তব্য তিনি দিয়েছেন ইংরেজিতে।
তার অনুসারীরা ছড়িয়ে আছেন ভারতের বাইরে অনেক দেশে।
আরও পড়তে পারেন:
তিনি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর ঘুরেছেন । বিশাল জনসমাবেশে বক্তৃতা করেছেন। তার বক্তৃতা শুনেছেন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা। ধারণা করা হয় উপসাগরীয় দেশগুলো, পাকিস্তান, আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় তার বিশাল অনুসারী রয়েছে।
এবং তার প্রভাব বিশাল।
আল কায়েদা আদর্শে অনুপ্রাণিত আটক বহু ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে খবর আছে যে জাকির নায়েকের দ্বারা তারা বিশালভাবে প্রভাবিত।
এবছর পয়লা জুলাই ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গী হামলা উৎসাহিত করতে তার ভূমিকা আছে এমন অভিযোগের পর থেকে মিঃ নায়েক মধ্য প্রাচ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। তার কার্যালয় এবং স্কুলগুলোতে হানা দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারত সরকার তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য তাকে দেশে ফিরতে বলবে বলে খবর রয়েছে।
ছবির উৎস, Anushree Fadnavis/Indus Images
জাকির নায়েকের সমস্ত কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ডিজাইনার ও ইসলাম গবেষক আমির রিজভী ধর্মপ্রচারক হিসাবে মিঃ নায়েকের প্রভাব নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বলছেন জাকির নায়েক নিজেকে একটা ব্র্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
"তিনি সব মিলিয়ে একটা প্যাকেজ। তার ভাবমূর্তি হল তিনি পশ্চিমে শিক্ষাপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি- চিকিৎসক, তিনি স্যুট এবং টাই পরেন। একইসঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসাবেও তার প্রতিষ্ঠিত ভাবমূর্তি রয়েছে। তিনি দাঁড়ি রাখেন ও টুপি পরেন।"
বিশ্বের অন্যতম বিতর্কিত ধর্মপ্রচারক হিসাবে তিনি উঠে এসেছেন জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল পিস টিভির মাধ্যমে। এই টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে এখন নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়তে পারেন:
মুম্বাইয়ের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা ডংগ্রিতে তার জন্ম ১৯৬৫ সালে এক ডাক্তারের পরিবারে।
ডংগ্রি একসময় কুখ্যাত ছিল চোরাকারবারী, অপরাধী জগত এবং গুন্ডাদের আখড়া এবং এই এলাকা তার দুর্নাম কখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
এই এলাকা দাউদ ইব্রাহিমসহ কুখ্যাত অপরাধীদেরও আবাসস্থল।
ছবির উৎস, Anushree Fadnavis/Indus Images
ডংগ্রি অপরাধ জগতের সঙ্গে তার যোগাযোগের দুর্নাম কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
ছবির উৎস, Anushree Fadnavis/Indus Images
টোপিওয়ালা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ যেখানে ডাক্তারি পড়েছেন জাকির নায়েক।
তার সম্প্রতি প্রয়াত পিতা ছিলেন চিকিৎসক, তার বড়ভাইও চিকিৎসক।
সেন্ট মেরিস্ হাইস্কুলে লেখাপড়া শেষ করে তিনি মুম্বাইয়ের টোপিওয়ালা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়েন।
১৯৯১ সালে ডাক্তারি ছেড়ে দিয়ে ডংগ্রিতেই তিনি গড়ে তোলেন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
মিঃ নায়েকের ফাউন্ডেশনের একজন সাবেক কর্মী সালিম ইউসুফ বলেছেন মিঃ নায়েক তার ভাষণে অন্য ধর্মকে নিয়ে যেসব কথা বলতেন তার সঙ্গে তিনি একমত না হওয়ায় তিনি ফাউন্ডেশনের কাজে ইস্তফা দিয়েছেন।
কিন্তু মিঃ ইউসুফ এবং মিঃ রিজভী দুজনেই জাকির নায়েকের আদর্শের বিরোধিতা করলেও তারা মনে করেন তাকে এবং তার প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা "অযৌক্তিক এবং অগণতান্ত্রিক।"
তার অনুসারীরা মনে করেন মিঃ নায়েক ভারতে ফিরলে তাকে হয়ত গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
কিন্তু বিবিসির জুবায়ের আহমেদ বলছেন মিঃ নায়েকের হয়ত একটা সন্তুষ্টির জায়গা রয়েছে যে একটা পুরো নতুন প্রজন্মকে তিনি প্রভাবিত করতে পেরেছেন যারা তার মত করে ভাবছে এবং তার সুরে কথা বলছে।
প্রধান খবর
চিঠিপত্র ও মতামত
এডিটার'স মেইলবক্স: বাক স্বাধীনতা, জিয়ার খেতাব আর ভ্যাক্সিন নিয়ে প্রশ্ন
লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায় হবার পর, অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, এই রায়ের মাধ্যমে কি বাংলাদেশে মুক্তচিন্তা এবং বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্র শক্তিশালী হবে?