ময়মনসিংহে মুসলিম অটোচালকের সাথে 'অবৈধ প্রেম' সন্দেহে মাথা মুড়ে জুতোর মালা

বিবিসি

ছবির উৎস, আইয়ুব আলী

ছবির ক্যাপশান,

ময়মনসিংহে মুসলিম অটোচালকের সাথে আদিবাসী নারীর 'অবৈধ প্রেম' এর সন্দেহে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে ন্যাড়া করে, গলায় জুতোর মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানো হয়।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার হাতিলেট নামে ওই গ্রামের আদিবাসী কোচ সম্প্রদায়ের সমাজপতিরা তাদের বিচারে ঐ দম্পতিকে জুতোর মালা পরানো, মাথা ন্যাড়া করা ছাড়াও ৪০,০০০ টাকা জরিমানাও করেছে।

অপদস্থ হওয়া ওই নারী সাংবাদিকদের এবং পুলিশের কাছে বলেছেন, মুসলমান ওই অটোচালক তাদের পারিবারিক বন্ধু এবং তার সাথে কোনও ধরনের 'অবৈধ সম্পর্ক' তার ছিলনা।

কিন্তু সন্দেহবশত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুইদিন ধরে ওই অভিযোগে বিচার চালানো হয় এবং এরপর শুক্রবার রায় দেয়া হয় ।

ময়মনসিংহের সাংবাদিক আইয়ুব আলী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, "লক্ষ্মী রাণী নামে ওই নারী আমাকে বলেছেন, শুধুমাত্র সন্দেহের বশে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই বুধবার ঘুমের মধ্যে ডেকে তুলে নিয়ে বিচার শুরু করা হয়। দুজনকেই প্রহার করা হয়। তারপর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এরপর গলায় জুতোর মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানো হয়"।

ওই নারী জানিয়েছেন, বহু অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের কথা কেউ শোনেনি।

সমাজপতিরা তাদের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, "তোমরা অপরাধ করেছো। আমরা তোমাদের শুদ্ধ করার জন্য এটা করেছি"।

সেইসাথে বলা হয়েছে, তাদেরকে শুদ্ধ করার জন্য শুদ্ধাচার অনুষ্ঠান পালনের টাকাও দিতে হবে।

রোববার সন্ধ্যার দিকে ওই দম্পতি মামলা করতে থানায় যান । তবে মামলার উদ্যোগ নিলেও যেহেতু সমাজে একঘরে করে রাখা হয়েছে তাদের ফলে মামলা দায়ের করার পর কী হবে সেটা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তাদের মধ্যে।

এই বিচারের খবরটি সংবাদ মাধ্যমে আসার পর বিচারকাজ যারা পরিচালনা করেছেন তারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন।

প্রথাগতভাবে ওই সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেরাই নিজেদের গোষ্ঠীর বিচারকাজ সম্পাদন করে থাকে।