বাংলাদেশে নারীর জন্য রাজনীতি কতটা সহজ?

বাংলাদেশ, রাজনীতি
ছবির ক্যাপশান,

বাংলাদেশে দলগুলোর কমিটিতে যে সংখ্যায় নারী সদস্য রাখার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে তা এখনো পূরণ করতে পারেনি কোনও দলই

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য দলগুলোর কমিটিতে যে সংখ্যায় নারী সদস্য রাখার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে তা এখনো পূরণ করতে পারেনি কোনও দলই।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলে নারীদের দেখা গেলেও, ইসলামী দলগুলোতে তা নেই বললেই চলে। এমন প্রেক্ষাপটে আবারও চিঠি দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে ওই নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য তাগাদা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলে নারীদের জায়গা করে নেয়া কতটা সহজ? বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে?

বিবিসির এমন এক প্রশ্নের জবাবে বরিশালের একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী নিগার সুলতানা হনুফা বলেন সাংগঠনিকভাবে দক্ষ হলে নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করে এবং সেটা তিনি পাচ্ছেন।

কিন্তু মূল দলে কাজ করার সুযোগ কতটা - এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সে সুযোগটা তিনি পাবেন।

নিগার সুলতানা একসময় ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন, পরবর্তী আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে তিনি বরিশালে মহিলা আওয়াম লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

১৯৯৫ সালে বরিশালের প্রথম নারী হিসেবে পুরুষদের সাথে সরাসরি প্রতিদ্বন্ধিতা করে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

পুরুষ সহকর্মীরা কতটা সহায়তা করে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা কাজের মধ্য দিয়ে করে নিতে হয়।

ছবির উৎস, PID

ছবির ক্যাপশান,

আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশের দৃশ্য

"নারীদের অনেক সমস্যা এর মধ্যে আর্থিক সমস্যা প্রধান, আর রাজনৈতিক দলে অবস্থান তৈরি করা বা রাজনৈতিকভাবে একটা জায়গায় পৌঁছানো নারীদের জন্য একেবারে সহজ কাজ নয়"।

তবে তার মতে কাজ করলে কমবেশি মূল্যায়ন হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো সেটা দিচ্ছে বলেই মনে করেন তিনি।

মাঠপর্যায় থেকে রাজনীতি করে নারীরা কি একটি দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারেন? সে সুযোগ কি আছে ? - এমন প্রশ্নের জবাবে নিগার সুলতানা বলেন, "এটা কঠিন প্রশ্ন কারণ নাই বললেই চল"।

তিনি বলেন তৃণমূল পর্যায় থেকে নারীদের নেয়া উচিত, মূল্যায়নও হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সমস্ত পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ছবির উৎস, focus bangla

ছবির ক্যাপশান,

বিএনপির একটি সমাবেশের দৃশ্য

আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতো দলে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও কুড়ি শতাংশের ওপরে নারী সদস্য নেই কোনো রাজনৈতিক দলেই। সবেচেয়ে খারাপ অবস্থা ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলোর।

খেলাফতে মজলিস নামে দলটির কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব শেখ গোলাম আসগর বিবিসি বাংলাকে বলেনদলটির সারাদেশে সদস্য সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের মতো। তার দুই শতাংশ নারী সদস্য বলে তারা দাবি করেন।

তার মতে,"পুরুষরাই তো নেতৃত্ব দেবেন। নারীরা পুরুষদের সহযোগী। মহিলাঙ্গণে মহিলারা নেতৃত্ব দেবেন। আমাদের পলিসিটা সেটাই। সভা সমাবেশে তাদের যাওয়ার দরকার নেই"।

দেশে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী ধর্মভিত্তিক দল ১১টি। এদের মধ্যে এমন দলও আছে যাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই।

আওয়ামী লীগ নেতা, নুহ আলম লেলিন বলছিলেন,"বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের অংশ দিন দিন বাড়লেও, সক্রিয় রাজনীতিতে নারীদের নিয়ে আসা এখনো চ্যালেঞ্জ"।

ছবির উৎস, focus bangla

ছবির ক্যাপশান,

নারীদের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো