বাংলাদেশের খ্রিস্টানরা কিভাবে পালন করছেন বড়দিন
- রাকিব হাসনাত
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা

গ্রামবাসীরা যীশু খ্রিস্টের জন্মের ঘটনার প্রতিরুপ তৈরি করেছেন এভাবেই
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ সোমবার পালিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন।
খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরা যিশু খ্রিস্টের এই জন্মতিথি উদযাপন করেছে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। তারপরেও খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সাধারণ পরিবারগুলো কিভাবে উদযাপন করেছ এই উৎসব?
সেটি দেখতে ঢাকার কাছে নবাবগঞ্জের বান্দুরায় খ্রিস্টান অধ্যুষিত একটি এলাকায় গিয়েছিলাম।
সেখানে বাড়িতে বাড়িতে ঢোল আর গানবাজনাই জানান দিচ্ছিলো যে এখানকার খ্রিস্টান পরিবারগুলোতে উৎসব চলছে। তবে বড়দিন উদযাপনের সূচনা হয়েছিলো আসলে রোববার মধ্যরাতে, গীর্জা ও উপাসনালয়ে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। ১৭৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বান্দুরার হাসনাবাদ গীর্জার ফাদার ম্যাক্সওয়েল আলেকজান্ডার টমাস বলছেন, এবারের বড়দিনে তার গীর্জায় প্রার্থনায় অংশ নিয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ।
তিনি বলেন, "এবার খুব শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠান করছি। সবাই মিলে কীর্তন করেছি। নাচ গান করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করতে চাই সেজন্য প্রার্থনা করেছি।"
তিনি বলেন, সম্প্রতি পোপ বাংলাদেশ সফর করে গেছেন বলে তার প্রতিফলনও রয়েছে এবারের উৎসবে।
ছবির উৎস, BBC Bangla
ফাদার ম্যাক্সওয়েল আলেকজান্ডার টমাস
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই বান্দুরা এলাকায় সাতটি গ্রামে সাড়ে তিন হাজার খ্রিস্টান রয়েছে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে শুরু করে নবাবগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১৮টি গ্রাম রয়েছে খ্রিস্টানদের। পোপের বাংলাদেশ সফরে উজ্জীবিত এসব খ্রিস্টান পরিবারে বড়দিন উপলক্ষে এখন রীতিমত উৎসব চলছে।
খ্রিস্টান একটি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার সময় পরিবারটির একজন সদস্য দিনা গোমেজ বলেন, সকালে গীর্জা থেকে এসে কেক ও পিঠা খাই। আত্মীয়স্বজন আসে এবং তাদের নিয়ে খুব মজা হয়।
তিনি বলেন, "ঘর সুন্দর করে সাজাই, ক্রিসমাস ট্রি সাজাই, আত্মীয়স্বজন সবাই একসাথে হয়ে উৎসব পালন করি।"
উৎসবের এ আমেজ দেখা যাচ্ছিলো প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই,অনেককেই দেখা গেছে নতুন জামা কাপড় পরে প্রতিবেশীদের বাড়ি যাচ্ছেন, কেউবা উৎসব করছেন নিজ বাড়ির আঙ্গিনাতেই। রাস্তার পাশে অনেকে পসরা সাজিয়েছেন মেলার মতো করে।
এ আনন্দ উদযাপন যাতে নির্বিঘ্নেই হয় সেজন্য প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও তৎপর দেখা গেছে ওই এলাকায়। কিন্তু ওই এলাকায় খ্রিস্টানদের এমন আয়োজন বা উদযাপন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম কিংবা অন্যদের মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, জানতে চাইলে ফাদার ম্যাক্সওয়েল আলেকজান্ডার টমাস বলেন, বান্দুরায় তারা সব ধর্মের মানুষ এক পরিবারের মতোই।
ছবির উৎস, BBC Bangla
১৭৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বান্দুরার হাসনাবাদ গীর্জা
পরে বড়দিনের এ উদযাপন সম্পর্কে স্থানীয় মুসলিমদের মনোভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, "বড়দিনের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেই আমরা। গির্জায় যত অনুষ্ঠান হোক আমরা আমন্ত্রণ পাই ও সেখানে যাই।"
বান্দুরায় খ্রিস্টান পল্লীর মতো এমন একই ধরনের আয়োজন ছিলো রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পাবনা, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার খ্রিস্টান পল্লী গুলোতে।
ক্রিসমাস ট্রি এবং বাড়িঘর ও গীর্জায় আলোকসজ্জা ছাড়াও ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতেও চলছে বড়দিনের বিশেষ আয়োজন।
প্রধান খবর
চিঠিপত্র ও মতামত
এডিটার'স মেইলবক্স: আল জাজিরা নিয়ে 'একপেশে' আর চীন-ভারত নিয়ে দ্বিচারিতা?
বাংলাদেশে আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে আলাপ-আলোচনার মনে হচ্ছে কোন শেষ নাই।