ইসরায়েলের সাথে কিছু আরব দেশের 'গোপন মৈত্রী'?

ছবির উৎস, Empics
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি
ইসরায়েলের সাথে কি বেশ কয়েকটি আরব দেশের এক গোপন মৈত্রী গড়ে উঠছে?
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার আলোকে সাংবাদিক-বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব মোকাবিলা করতে বেশ কিছু মধ্যপন্থী সুন্নি আরব দেশগুলোর সাথে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠছে।
ব্যাপারটা নিয়ে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস। 'গোপন আঁতাত: কায়রোর সম্মতি নিয়ে মিশরের ভেতরে বিমান হামলা চালালো ইসরায়েল' - এই শিরোনামে রিপোর্টটি লিখেছেন ডেভিড ডি ফিটজপ্যাট্রিক।
এতে তিনি 'বিস্ময়কর এবং অতিশয় গোপন এক সামরিক সম্পর্কের' খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখছেন, গত দু বছরে ইসরায়েলের অচিহ্নিত ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং জেট বিমানগুলো শতাধিক হামলা চালিয়েছে মিশরের সিনাই এলাকাতে।
কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে এক সপ্তাহেই একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এবং এগুলো চালানো হচ্ছে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সম্মতি নিয়েই।
এসব হামলা চালানো হচ্ছে সিনাইতে সক্রিয় ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের ওপর।
মিশরীয় বাহিনীও এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, সবশেষ অভিযানে ১৬ জন জঙ্গী নিহত হয়েছে। মি. আল-সিসি এ মাসের মধ্যেই সিনাই থেকে জঙ্গীদের নির্মূল করার ওপর জোর দিয়েছেন।
ছবির উৎস, Getty Images
সিনাইয়ে মিশরীয় বাহিনীর অভিযান
মিশরের সাথে ইসরায়েলের শান্তি চুক্তি রয়েছে ১৯৭৯ থেকেই, কিন্তু তাদের মধ্যে কোন রকম সহযোগিতার কথা খুব কমই স্বীকার করা হয়, বিমান হামলার তো বহু দূরের কথা।
ডেভিড ফিটজপ্যাট্রিকের রিপোর্টের মূল কথা হলো, সিনাইয়ের ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে মিশরীয় বাহিনী এবং এ জন্য তারা ইসরায়েলের সাহায্য চেয়েছে।
সিনাইকে জঙ্গী-নিয়ন্ত্রণমুক্ত করাটা দু'তরফের জন্যেই লাভজনক - কারণ এতে ওই এলাকায় মিশরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসবে - আর ইসরায়েলেরও সীমান্ত নিরাপদ হবে।
বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস লিখছেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টটি বের হবার পর মিশরের ভাষ্যকাররা অবশ্য একে 'ফেক নিউজ' এবং 'অপেশাদার সাংবাদিকতা' বলে আখ্যায়িত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিশরের সামরিক মুখপাত্রও ইসরায়েলি সহযোগিতার কথা অস্বীকার করেছেন।
এটা বোধগম্য যে ব্যাপারটা সত্যি হলে তা মিশরের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ব্যাপার হবে।
তবে এখন যদি মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে একে দেখা হয় - তাহলে দেখা যায় এগুলোর সাথে আরব-ইসরায়েলি গোপন সহযোগিতার এই খবরটা বেশ মিলে যাচ্ছে।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
ছবির উৎস, টুইটার
সিনাইয়ে বেশ কিছু জঙ্গী গ্রুপ আইএস-সংশ্লিষ্ট
ইরান-বিরোধী জোট?
ইরানের উত্থান, উপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত পুরো অঞ্চল জুড়ে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি, এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসুচিতে বিশেষ করে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে সৌদি আরব, মিশর এবং জর্ডন।
জোনাথন মার্কাস লিখছেন, এ পরিস্থিতির চাপে মধ্যপন্থী সুন্নি আরব কিছু দেশ ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
কূটনৈতিক ইঙ্গিত এবং কিছু ব্রিফিং থেকে এর আভাস পাওয়া যায়। এর কিছু লক্ষণও দেখা যাচ্ছে - যার কোনো কোনোটি বেশ স্পষ্ট।
কিছুদিন আগে সৌদি-ভিত্তিক মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আল-ইসা ওয়াশিংটনের হলোকস্ট মিউজিয়ামে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ইহুদি নিধনযজ্ঞের স্মারক জাদুঘর) এক খোলা চিঠি দিয়েছেন।
তিনি ইহুদি নিধনযজ্ঞের শিকারদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, এবং যারা 'হলোকস্ট আদৌ ঘটেনি' বলে একে অস্বীকার করে - তাদের নিন্দা করেছেন।
আরব অঞ্চল থেকে এরকম একটি বিবৃতি আসা খুবই বিস্ময়কর।
ছবির উৎস, Reuters
সিরিয়ায় বিধ্বস্ত ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান
আরব বিশ্বে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে -যা জোড়া দিলে পরিবর্তনটা আরো স্পষ্ট হয়। সিরিয়ায় এখন যে শুধু মার্কিন, রুশ, তুর্কি ও ইরানী সৈন্যরাই তৎপরতা চালাচ্ছে তা নয় - তৎপর রয়েছে ইসরায়েলও।
গত কয়েকদিনে সিরিয়ার ভেতরে ইসরায়েলি বিমান গুলি করে নামানোর পর 'ইরানী লক্ষ্যবস্তুর ওপর' ইসরায়েলি বিমান হামলা বিশেষভাবে পর্যবেক্ষকদের নজর কাড়ছে।
ইসরায়েল স্বীকার করেছে যে ২০১১ সাল থেকে তারা সিরিয়ার ভেতরে অন্তত ১০০টি গোপন বিমান হামলা চালিয়েছে।
সবশেষ বিবৃতিতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা 'ইরান-সংশ্লিষ্ট' লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
ছবির উৎস, Getty Images
ইসরায়েলি এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান
অন্যদিকে ইসরায়েলি দিকে এটা নিয়ে আজকাল অত রাখঢাক করা হচ্ছে না।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এখন প্রকাশ্যে এবং অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংগুলোতেও মধ্যপন্থী সুন্নি দেশগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নত হবার কথা তুলে ধরছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কয়েক মাস আগেই লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'ইরানের আগ্রাসন মোকাবিলার জন্য' তারা মধ্যপন্থী সুন্নি দেশগুলোর সাথে একটা 'কার্যকর জোট' গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন।
তার মতে, আরব দেশগুলোর ইসরায়েলের প্রতি মনোভাবও 'নরম' হচ্ছে।
কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টটি বলছে, মি. নেতানিয়াহু যাই বলুন, বৃহত্তর আরব সমাজের জনগণ ও বুদ্ধিজীবী কারো মধ্যেই এখনো ইসরায়েলের প্রতি মনোভাব নরম হবার কোন লক্ষণই নেই।