বাংলাদেশে কেন কোনো ফুটবল কোচ বেশিদিন থাকছেন না?
বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন অ্যান্ড্রু ওর্ড। জানা গেছে, থাইল্যান্ডের একটি ফুটবল ক্লাব এয়ারফোর্স সেন্ট্রালে যোগ দিয়েছেন এই ইংলিশ-অস্ট্রেলিয়ান কোচ।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাথে জুনের ৬ তারিখ পর্যন্ত চুক্তি ছিল ওর্ডের কিন্তু বুধবার হঠাৎ করে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। চুক্তির প্রায় ২ মাস সময় বাকি থাকতেই বিদায় নিলেন কেন তিনি?
মূলত পারিবারিক কারণ দেখিয়েই বিদায় নিয়েছেন অ্যান্ড্রু ওর্ড। ফুটবল ফেডারেশনকে জানানোর পর জাতীয় দল ব্যাবস্থাপনা কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, তাকে আর ধরে রাখা হচ্ছে না। এরপর অ্যান্ড্রু ওর্ডকে ছাড়পত্র দেয় বাফুফে ।
ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেন, ওর্ড যেহেতু পারিবিারিক কারণ দেখিয়েছেন, বোঝাই যায় তিনি বাইরে কোথাও সুবিধাজনক কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন। তাই তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন।
কেনো বিদেশী কোচরা স্থায়ী হচ্ছেন না বাংলাদেশে?
২০১৩ সালে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন ডাচ লোডউইক ডি ক্রুইফ। এরপর ২০১৫ সালে অল্প কিছু সময়ের জন্য দায়িত্ব নেন ইতালির গঞ্জালো সানচেজ মোরেনো। সে বছরই পুনরায় বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব নেন ডি ক্রুইফ কিন্তু বেশিদিন ছিলেন না। সেবছর ২৯জে জুন বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব নেন বেলজিয়ান টম সেইন্টফিট। অর্থ্যাৎ এক বছরেই তিনজন কোচের অধীনে খেলেছে বাংলাদেশ।
এরপর অ্যান্ড্রু ওর্ড ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে দায়িত্ব নিয়ে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন।
বাংলাদেশে কোচরা এত কম সময় কেন থাকে বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ কোচ মারুফুল হক বলেন, বাংলাদেশের ফুটবলারদের মান নিয়ে অসন্তুষ্টি এক্ষেত্রে বড় কারণ। এছাড়া ফেডারেশনের সাথে দর কষাকষিও বড় কারণ হতে পারে।
"কোচ কাজ করে ফুটবলারদের সঙ্গে। একটা কোচের নিজস্ব দর্শন থাকে, সেটাই অনুশীলনে প্রয়োগ করে থাকে। মাঠে সেটাই চান কোচরা। কিন্তু আমাদের ফুটবলার এই লেভেলে পারফর্ম করার মত না। তাই কোচরা দমে যান প্রায়ই। এখানে ভাল কোচ বা খারাপ কোচ বলে কথা না"।
মারুফুল হক বলেন, কোচ ফুটবলারদের থেকে যেটা চান সেটা না পেলে হতাশ হয়ে পড়েন।
তবে সরাসরি ফুটবলারদের দোষারোপ করছেন না মি হক। তিনি বলেন, এখানে সিস্টেমটাই এমন যে একজন ফুটবলার যথেষ্ট প্রশিক্ষণ এবং যথার্থ প্রস্তুতি ছাড়াই নেহাত খেলতে খেলতে জাতীয় দলে ঢুকে পড়েন।
" যেটা একেবারে শুরুতেই শেখার কথা সেটা জাতীয় দলে শেখানো কঠিন। ৯ থেকে ১২ বছর বয়সেই ফুটবলের সেই দীক্ষাগুলো পাওয়ার কথা একজন ফুটবলারের"।
সে কারণে কোচদের অর্থনৈতিক চাহিদার চেয়ে ফুটবলারদের সাথে মানিয়ে নেয়ার ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখছেন মারুফুল হক।