থাই গুহায় কিশোরদের বাঁচিয়ে রাখতে বড় ভূমিকা ছিল যে কোচের

ছবির উৎস, Nopparat Kanthawong/Facebook
প্রধান কোচের (ডানে) সাথে সহকারী কোচ একাপল (বামে)
গত পাঁচ বছর একাপল চান্থাওং প্রচুর সময় কাটিয়েছেন থাইল্যান্ডের একটি মন্দিরে।
ছিলেন একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। পরে তিনি হয়েছেন একজন ফুটবল কোচ। কেউ চিনতো না তাকে। এখন শুধু থাইল্যান্ডেই নয়, সারা বিশ্বের কাছেই তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
কে এই একাপল? তিনি সেই সহকারী ফুটবল কোচ যিনি ১২ জন কিশোর ফুটবলারকে সাথে নিয়ে উত্তর থাইল্যান্ডে একটি পাহাড়ে গুহার ভেতরে আটকা পড়েছিলন আড়াই সপ্তাহেরও বেশি সময়।
বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখার পেছনে তার ভূমিকার তীব্র প্রশংসা করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডের কিশোর ছেলেদের ফুটবল ক্লাবের নাম 'ওয়াইল্ড বোয়ার।' এই ক্লাবেরই এক সদস্যের জন্মদিন পালন করতে গুহার ভেতরে ঢুকেছিল তারা। বলা হচ্ছে, সারপ্রাইজ পার্টি আয়োজন করতে অল্প কিছু খাবার দাবার নিয়ে তার সেখানে গিয়েছিল।
কিন্তু পরে বৃষ্টির পানি গুহার ভেতরে ঢুকে গেলে কিশোরদের দলটি পেছন দিকে পালাতে পালাতে গুহার গভীরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
ছবির উৎস, FACEBOOK/EKATOL
কিশোর ফুটবলারদের সাথে কোচের এই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল।
ওয়াইল্ড বোয়ার ক্লাবের প্রধান কোচ নোপারাত কানতাওং বলেছেন, একাপলের পরিবারকে তিনি চিনতেন শৈশব থেকেই। কিন্তু একোপল পুরোহিত হওয়ার পর থেকে তার সাথে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
তাদের আবার দেখা হয় পাঁচ বছর আগে।
"ততোদিন সে তার ভিক্ষুবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছে। তাকে আমি মনে করতে পারছিলাম না কারণ আমাদের মধ্যে তো কোন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু একদিন আমি যখন বাচ্চাদের ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলাম তখন সে নিজেই এসে হাজির হলো, আমাকে তার পরিচয় দিল," বলেন নোপারাত।
তিনি বলেন, "সে ব্যায়াম করতে পছন্দ করে। শিশুদের ভালোবাসে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেও সে পছন্দ করে। সে তখন সহকারী কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলো। একাপলই আমাকে প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিল বাচ্চাদেরকে মাদকসহ অন্যান্য সমস্যা থেকে দূরে রাখার জন্যে তাদেরকে অবসর সময়ে শরীর চর্চ্চায় ব্যস্ত রাখতে।"
খলনায়ক থেকে নায়ক
ছবির উৎস, Thai Royal Navy/AFP
গুহার ভেতরে ১২জন কিশোর ও কোচ একাপোল।
সেদিন ছিল ২৩শে জুন। ওয়াইল্ড বোয়ার ক্লাবের ১২ জন কিশোর ফুটবলারকে নিয়ে তিনি সাইকেলে করে চলে যান থাম লুয়াং গুহার কাছে। বাচ্চাদের সবার বয়স ছিল ১১ থেকে ১৬। তারপর থেকে বাচ্চাদের আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
প্রথম যখন খবর বেরোল যে বাচ্চারা গুহার ভেতরে আটকা পড়েছে তখন শুরুর দিকে সাধারণ লোকজন খুব ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল কোচ একাপলের ব্যাপারে।
এরকম একটি বিপদজনক গুহার ভেতরে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়ায় সবাই তীব্র নিন্দা করছিল তার।
কিন্তু তার সম্পর্কে ধারণা খুব দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে যখন উদ্ধারকারী ডুবুরিরা নিখোঁজ হওয়ার নয় দিন পর গুহার ভেতরে বাচ্চাদের কাছে গিয়ে পৌঁছায় তখন থেকে।
তখন ব্রিটিশ ডুবুরিরা যে ভিডিওটি প্রকাশ করেন সেটা দেখে অনেকেই জিজ্ঞেস করতে শুরু করেন যে এমন একটা অন্ধকার গুহার ভেতরে খাবার দাবার ছাড়া বাচ্চারা সেখানে কীভাবে এতোদিন বেঁচে আছে।
বলা হচ্ছে, কোচ একাপল এখানে একটা বড় ভূমিকা রেখেছেন। বাচ্চাদের খাবার কমে যেতে পারে এই আশঙ্কায় খাবারও মুখে দেননি তিনি।
ডুবুরিরা যখন আটকে পড়া এই ১৩ জনের কাছে প্রথম গিয়ে পৌঁছায় তখন কোচ একাপলের শারীরিক অবস্থাই ছিল সবচেয়ে দুর্বল।
সাতী ও সমাধি
ছবির উৎস, Panupong Changchai/BBC Thai
মন্দিরের পুরোহিত প্রাখরুপ্রায়ুচেটিইয়াঙ্কুন
একাপল যে মন্দিরের ভিক্ষু ছিলেন তার পুরোহিত প্রাখরুপ্রায়ুচেটিইয়াঙ্কুন বলেছেন, সাতী (অভিনিবেশ) এবং সমাধি (মেডিটেশনের একটি স্তর) এই দুটো জিনিসই ছিল তাদের বেঁচে থাকার প্রধান শক্তি।
কোচ একাপল পালি বিষয়ের উপর লেখাপাড়া করেছিলেন। হয়েছিলেন একজন শিক্ষানবীশ ভিক্ষুও।
"একাপল সন্ন্যাসব্রতের ব্যাপারে প্রশিক্ষিত হওয়ার পর তিনি 'সাতী' বা অভিনিবেশের ব্যাপারে জানতে পেরেছিলন। যদি এই প্রশিক্ষণ না থাকতো তাহলে সে হয়তো হতাশায় ডুবে যেত। সাহায্যের জন্যে কাঁদতে কাঁদতে অপেক্ষা করা ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকতো না," বলেন তিনি।
"কিন্তু তারা যতো বেশি কান্নাকাটি করতো ততোই তাদের শক্তি ক্ষয় হয়ে যেত। কোচ একাপল হয়তো নিজের ভেতরে ভেতরে একাই কাঁদতো, যাতে তার সাথে থাকা অন্য বাচ্চারা সেই কান্না শুনতে না পায়। কিন্তু এই যে ১২টি শিশু, তাদেরকে যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এই জিনিসটাই তাকে অটুট রেখেছে।"
মেডিটেশনের বিজ্ঞান
ছবির উৎস, Panupong Changchai/BBC Thai
কমান্ডার আপাকর্ন ইওকনকাওয়ে।
আমাদের পেজে আরও পড়ুন:
থাই নেভি সিলসও, যারা কিশোর ফুটবল দলটিকে উদ্ধারে অংশ নেয়, তারাও মনে করে বাচ্চাদের টিকে থাকার পেছনে কাজ করেছে মেডিটেশন।
কমান্ডার আপাকর্ন ইওকনকাওয়ে বলেছেন, মেডিটেশনের কারণে বাচ্চারা ধীর স্থির ও শান্ত থাকতে পেরেছে। ফলে সেখানে অক্সিজেনের ব্যবহার কম হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর করতে মেডিটেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
বিশেষ করে পানির নিচে ডুবসাঁতারের সময় এই কৌশল অবলম্বন করা হয় যাতে অক্সিজেনের ব্যবহার কম হয়।
হাসপাতালে একাপল
ছবির উৎস, Reuters
হাসপাতালে শিশুরা।
কোচ একাপল এখন হাসপাতালে। তার সাথে আছে বাচ্চারাও।
সবাই সেখানে সেরে উঠছে ধীরে ধীরে।
তবে সোশাল মিডিয়াতে কোচ একাপলের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।
এমন একটি মন্তব্যে বলা হয়েছে, কোচ একাপল একজন দারুণ প্রেমিক হতে পারেন কারণ তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে ১২টি শিশুর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কতোটা দক্ষ এবং তীব্র চাপের মধ্যেও তিনি নিজেকে কতোটা শান্ত রাখতে পারেন।
প্রধান খবর
চিঠিপত্র ও মতামত
এডিটার'স মেইলবক্স: বাক স্বাধীনতা, জিয়ার খেতাব আর ভ্যাক্সিন নিয়ে প্রশ্ন
লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায় হবার পর, অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, এই রায়ের মাধ্যমে কি বাংলাদেশে মুক্তচিন্তা এবং বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্র শক্তিশালী হবে?