তোতলামি জয় করা এক ব্রিটিশ কিশোরের গল্প

মর্গান হুপার
ছবির ক্যাপশান,

মর্গান হুপার এখন অন্যদের সাহায্য করে তোতলামি কাটাতে

তোতলামি বা কথা বলতে জড়তা একটি খুবই পরিচিত শারীরিক সমস্যা। এই সমস্যার কারণে সাধারণত মানুষ কোন শব্দ উচ্চারণে অসমর্থ হয়ে পড়ে কিংবা দীর্ঘ সময় নেয়।

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের মত মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু যাদের এ সমস্যা আছে, ছোটবেলা থেকেই তাদের নানা রকম বৈরি সামাজিক প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়।

তোতলামির কারণে ব্রিটেনের ১৭ বছর বয়সী মর্গান হুপারকে ছোটবেলা থেকেই চারপাশের মানুষেরা বিশেষ করে সমবয়সী বন্ধুরা খেপাত।

কারো সঙ্গে কথা বলা ও শব্দ করে কিছু পড়ার সময় দ্বিধা আর সংকোচে রীতিমত কুঁকড়ে যেতেন তিনি।

কিন্তু বছর খানেক আগে তোতলামি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ক্লাসে যান তিনি, আর এরপরই বদলে যায় তার জীবন।

"তোতলামি থাকা মানেই যেন ব্যপারটা এমন যে আপনাকে জীবনে অনেক কিছু ছাড় দিতে হবে। আমার মনে আছে, প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় আমি সব সময় ক্লাসে নেতৃত্ব নিতে চাইতাম। কিন্তু আমি নিজেই নিজেকে থামিয়ে দিয়েছি, কারণ আমি প্রকাশ করতে চাইনি যে আমি কথা বলার সময় তোতলাই।"

আরো পড়তে পারেন:

ক্লাসে জোরে কিছু পাঠ করতে দিলেই মর্গান মরমে মরে যেতেন, কারণ নির্ভুলভাবে একটি লাইন পড়া ভীষণ কষ্টকর ছিল তার জন্য।

সহপাঠীদের কাছে এ নিয়ে তাকে বহুবার অপদস্থ হতে হয়েছে। ফলে যে কারো সঙ্গে মিশতেও সমস্যা হতো তার।

কিন্তু এখন সে সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। ফলে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে তিনি অন্য যারা তার মত একই সমস্যায় ভুগছে তাদের সাহায্য করতে চান।

"এখন আমি আমার সামনে আসা প্রতিটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি, আমার আর পালিয়ে বেরাই না। এটা আমার জন্য সত্যি ভীষণ আনন্দের একটি ব্যপার। কারণ আমার তোতলামির সমস্যাসহই আমি যেমন মানুষ সেটা আর আমাকে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে না।"

চিকিৎসকেরা বলছেন, তোতলামি জন্মগত সমস্যা নয়। অনেক কারণেই তোতলামি হতে পারে।

এরমধ্যে জেনেটিক এবং নিউরোজেনিক কারণে তোতলামি হতে পারে। আবার কেউ হয়তো ছোটবেলায় মাথায় আঘাত পেয়েছিল, তা থেকেও কথা বলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কোন শিশুকে হয়ত ছোটবেলায় কথা বলার জন্য বেশি চাপ সৃষ্টি দেয়া হয়েছিল, সেক্ষেত্রেও ঐ শিশুটির মধ্যে তোতলামো ভাব আসতে পারে।

মর্গানের অনেক স্বপ্নের একটি হচ্ছে লাইভ রেডিও ইন্টারভিউতে অংশ নেয়া, যেকারণে সে বিবিসি রেডিও ফাইভের কাছে চিঠি লেখার পর, তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বাবাকে নিয়ে সেখানে এসেছিল মর্গান। তার বাবা বলছিলেন, তার অভিজ্ঞতার কথা

তিনি বলেন, "যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমার ছেলের কষ্ট হচ্ছে এটা একজন বাবার জন্য দেখা খুবই কঠিন। ও কারো সঙ্গে মিশতে লজ্জা পাচ্ছে, এটা দেখেও কষ্টে বুক ভেঙ্গে যেত। এখন ও নিজে ভীষণ চেষ্টা করছে সব বাধা কাটিয়ে উঠতে, আর যা সবসময় করতে চেয়েছে, তা করতে পারছে, সেটা দেখা খুবই আনন্দের।"

বলা হয়ে থাকে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে বেশি তোতলামি দেখা যায়।

মর্গান এখন স্কুলে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অল্প বয়েসী ছেলেমেয়েদের মধ্যে তোতলামি কাটানোর পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করেন।

কথা শুরুর জন্য তিনি ম্যাজিক বা জাদু দেখানোর কিছু কৌশল রপ্ত করেছেন। ফোনে কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও তিনি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ।