নয়ডার পার্কে নামাজ পড়ায় সরকারি বাধায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া: 'মুসলিমরা সপ্তাহে একদিন নামাজ পড়লেই শান্তি নষ্ট?'
- শুভজ্যোতি ঘোষ
- বিবিসি বাংলা, দিল্লি

ছবির উৎস, SOPA Images
ভারতে একটি রাস্তার ওপর নামাজ পড়ছেন মুসলিমরা (ফাইল ছবি)
ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছে উত্তরপ্রদেশের নয়ডাতে কোনও পার্ক বা খোলা মাঠে মুসলিমদের নামাজ পড়ার ওপর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারের পুলিশ শিল্পনগরী নয়ডা-র বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের মুসলিম কর্মীরা যাতে জুম্মার দিনে পার্ক বা মাঠগুলোতে নামাজ পড়তে না যায় সেটা তাদেরকেই দেখতে হবে।
এমন কী, মুসলিম কর্মীরা এই নির্দেশ অমান্য করে নামাজ পড়তে গেলে ওই কোম্পানিগুলিই দায়বদ্ধ থাকবে বলে চিঠিতে হঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে পাঠানো ওই চিঠির খবর সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার পর থেকেই উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরাট হইচই শুরু হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকারের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা মুসলিম-বিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, নয়ডাতে নতুন এই নির্দেশের পর তা যথারীতি আরও জোরালো হয়েছে।
ছবির উৎস, AFP
এআইএমআইএম নেতা ও এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি
যেমন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) নেতা ও হায়দ্রাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, "দেখেশুনে মনে হচ্ছে মুসলিমদের যেন বলা হচ্ছে : তোমরা যা-ই করো না কেন, দোষ তোমাদেরই।"
মি: ওয়াইসি আরও বলেছেন, "উত্তরপ্রদেশ পুলিশ কাওয়ারিয়া (হিন্দু তীর্থযাত্রী)-দের ওপর আক্ষরিক অর্থেই আকাশ থেকে পুষ্পবর্ষণ করতে পারে, আর মুসলিমরা সপ্তাহে একদিন নামাজ পড়লেই তাতে শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট হয়ে যায়?"
কোনও বেসরকারি সংস্থার মুসলিম কর্মীরা তাদের ব্যক্তি অধিকারে যদি কিছু করেন, তার দায় কীভাবে ও কোন আইনে ওই সংস্থার ওপর বর্তাবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
নয়ডা পুলিশের এই বিতর্কিত নির্দেশ নিয়ে উত্তরপ্রদেশের কোনও সিনিয়র মন্ত্রী অবশ্য এখনও কোনও ব্যাখ্যা দিতে এগিয়ে আসেননি।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন:
ছবির উৎস, Hindustan Times
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ
তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর নয়ডার পুলিশ প্রধান (এসএসপি) অজয় পাল শর্মা দাবি করেছেন তারা কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের লোকজনের কথা ভেবে ওই চিঠি দেননি।
"২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশেই বলা হয়েছিল, পুলিশ ও প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি দেশের কোনও প্রকাশ্য স্থানই (পাবলিক প্লেস) কোনও ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
"ফলে ওই নোটিশ জারি করার পেছনে অন্য কোনও অভিসন্ধি নেই। আমাদের পুলিশ কর্মকর্তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কেবল তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র", জানিয়েছেন মি শর্মা।
এর আগে নয়ডার ৫৮ সেক্টরে যে বিশাল সরকারি পার্ক আছে, সেখানে প্রতি শুক্রবার নামাজ পড়ার অনুমতি চেয়ে প্রায় দুশো-তিনশো ব্যক্তির একটি আবেদনও এ মাসের গোড়ার দিকে প্রশাসনের কাছে জমা পড়েছিল।
কিন্তু পুলিশ বলছে, নয়ডা সিটি ম্যাজিস্ট্রেট সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন এবং সেই সিদ্ধান্তের কথা আবেদনকারীদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
ফলে এর পরেও কেউ ওই পার্কে নামাজ পড়তে গেলে তা আইনগত অপরাধ বলেই গণ্য হবে বলে পুলিশের বক্তব্য।
ছবির উৎস, Hindustan Times
উত্তরপ্রদেশের রাস্তা দিয়ে চলছেন কাওয়ারিয়া বা হিন্দু তীর্থযাত্রীরা
শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের প্রধান ওয়াসিম রিজভি আবার পুলিশের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, "মুসলিমরা যাতে আইন ভাঙার ফাঁদে পা না-দেন সে জন্যই এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে।"
এর আগে দিল্লির উপকন্ঠে আর এক উপনগরী গুরগাঁও-তেও খোলা মাঠে মুসলিমদের নামাজ পড়া নিয়ে মাসকয়েক আগে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
সেখানে স্থানীয় কিছু কট্টর হিন্দু সংগঠন দাবি তুলেছিল, মুসলিমরা কেবল মসজিদের ভেতরেই নামাজ পড়তে পারবেন - তাদেরকে কোনও প্রকাশ্য স্থানে বা খোলা আকাশের নিচে নামাজ পড়তে দেওয়া যাবে না।
হরিয়ানার বিজেপি শাসিত সরকার অবশ্য সেখানে উপযুক্ত পুলিশ পাহারা দিয়ে উন্মুক্ত মাঠেই মুসলিমদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছিল, যেখানে তারা তার আগেও বহুদিন ধরে নামাজ পড়ে আসছিলেন।
তবে ভারতের বিরোধী দলগুলির অনেকেই মনে করছে, গত সাড়ে চার বছরের বিজেপি শাসনে ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মাচরণের অধিকার ক্রমশ সঙ্কুচিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: