ভারতের কাশ্মীরে হামলা: পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের দ্বন্দ্ব বিশ্বের জন্য কত বড় হুমকি?

ছবির উৎস, Getty Images
কাশ্মীরে শুধু গত বছরই সহিংসতায় নিহত হয়েছে ৫০০'র বেশি মানুষ
বিশ্বে সামরিকভাবে ব্যাপক গুরুত্ব পাওয়া অঞ্চলগুলোর একটি কাশ্মীর - এবং একই সাথে ভারত ও পাকিস্তানের মতো দু'টি পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দেশের সবচেয়ে অস্থিতিশীল সীমান্তবর্তী এলাকা।
সম্প্রতি পুলাওয়ামা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ অঞ্চলে আবারো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পুলাওয়ামা জেলায় গত সপ্তাহে হওয়া হামলাটি ছিল কয়েক দশকের মধ্যে ভারতীয় বাহিনীর উপর হওয়া সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আক্রমণ, যেখানে কয়েক দফা বোমা বিস্ফোরণে এবং গোলাগুলিতে প্রায় ৫০ জনের মত নিহত হয়েছে।
ভারত অধ্যূষিত কাশ্মীরে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘাতের কারণে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষও মারা গিয়েছে গত বছর: ২০১৮ সালে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বেসামরিক ব্যক্তি এবং জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যসহ কাশ্মীরে ৫০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কেন এত আলোচনা?
১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান আর ভারত স্বাধীনতা পাবার আগে থেকেই কাশ্মীর বিতর্কের কেন্দ্রে।
কাশ্মীরের অংশবিশেষ ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশ নিয়ন্ত্রণ করে। একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ চীনের।
পুলাওয়ামাতে গত সপ্তাহের সহিংস সংঘাতের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারো যুদ্ধংদেহি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ছবির উৎস, Getty Images
ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্ত
হামলার জন্য পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠনকে দায়ী করেছে ভারত, যার ধারাবাহিকতায় ভারতের বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভের পাশাপাশি কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রী এবং ব্যাবসায়ীরা জনরোষেরও শিকার হয়েছেন।
ভারত অধ্যূষিত কাশ্মীরে হত সপ্তাহের শেষদিকে মোবাইল ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
এই আক্রমণের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন যে কোনো ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলেই তা ভিন্ন মাত্রা নেয়।
কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই দুই দেশের দ্বন্দ্বের মূল রেশটা পরে কাশ্মীরে বসবাসকারী মানুষের ওপর।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দু'বার আলাদা যুদ্ধ ছাড়াও (১৯৪৭ ও ১৯৬৫ সালে) দুই দেশের সেনাবাহিনী, জঙ্গী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসংখ্য সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
যেসবের কারণে বর্তমানে কাশ্মীরের অর্থনীতির অবস্থা নাজুক, কর্মসংস্থান সঙ্কট প্রবল এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চরমে।
কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে পাকিস্তান, ভারত ও চীন
কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণ করে কারা?
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ যখন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিম মংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয় এবং ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে - তার আগে থেকেই কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক ছিল।
কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং চাইছিলেন স্বাধীন থাকতে অথবা ভারতের সাথে যোগ দিতে। অন্যদিকে পশ্চিম জম্মু এবং গিলগিট-বালতিস্তানের মুসলিমরা চাইছিলেন পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে।
কিন্তু সেসময় কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে এই দ্বন্দ্বের সুরাহা করতে না পারায় পরের দুই বছর কাশ্মীর ইস্যুতে যুদ্ধ চলে দুই দেশের মধ্যে।
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হলে পাকিস্তান কাশ্মীর থেকে সেনা সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং কাশ্মীর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
ছবির উৎস, Getty Images
দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাশ্মীরের পর্যটন খাত
ভারত ও পাকিস্তানের এই দ্বন্দ্বের মধ্যে ১৯৫০'এর দিকে পূর্ব কাশ্মীর - যেই অঞ্চল আকসাই চিন নামে পরিচিত - দখল করতে থাকে চীন।
১৯৬৫ সালে দ্বিতীয় দফা যুদ্ধ হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। এরপর ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে কাশ্মীরের ভারত অধ্যূষিত অঞ্চলে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হলে সেখানে জঙ্গী কার্যক্রমের পরিধি বিস্তার করে, গণরোষ তৈরি হয় এবং পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গী বাহিনীর প্রসার শুরু হয়।
সেসময় থেকে নানা ধরণের সহিংস ঘটনায় কাশ্মীরে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।
কাশ্মীরের মানুষ কী চায়?
১৯৫০'এর দশক থেকেব জাতিসংঘ বলে আসছে যে কাশ্মীর ইস্যুতে ঐ এলাকার মানুষের মতকে প্রাধান্য দেয়ার লক্ষ্যে একটি গণভোট আয়োজন করা উচিত।
ছবির উৎস, Getty Images
পুলাওয়ামা জেলায় ১৪ই ফেব্রুয়ারি হওয়া হামলাটি ছিল কয়েক দশকের মধ্যে ভারতীয় বাহিনীর উপর হওয়া সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী আক্রমণ
ভারত এই পরিকল্পনাকে শুরুতে সমর্থন করলেও পরবর্তীতে তারা বলে যে গণভোট আয়োজন প্রয়োজনহীন; কারণ ভারত অধ্যূষিত জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচনে সেখানকার মানুষ ভারতের সাথে থাকার পক্ষেই মত দেবে।
কিন্তু পাকিস্তান এই দাবি সমর্থন করে না।
তাদের বক্তব্য, ভারত অধ্যূষিত কাশ্মীরের অনেক মানুষই ভারতের সাথে থাকতে চায় না; তারা হয় স্বাধীনতা চয়, নয়তো পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয়ার পক্ষপাতী।
ভারত অধ্যূষিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনসংখ্যার ৬০ ভাগের বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এটিই ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগুরু।