চট্টগ্রাম বিমান ছিনতাই চেষ্টা: কর্তৃপক্ষের যত বক্তব্য

বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে
ছবির ক্যাপশান,

বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক রুটের একটি বিমান ছিনতাই চেষ্টার পর ওই ছিনতাইকারী এবং তার সাথে থাকা 'অস্ত্র' নিয়ে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, র‍্যাব ও সেনা দপ্তরসহ নানা পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে তার মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে।

আহত অবস্থায় আটক, অস্ত্র ছিল: বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে সেনা অভিযানের পরপরই ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেন, ''এর মধ্যেই পাইলট কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানান যে, কথিত হাইজ্যাকার তার স্ত্রীর কোন বিষয় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান।"

"এক ফাঁকে একজন ক্রু বাদে সকল ক্রুই বের হয়ে আসতে পারেন। পরে সেই ক্রুও বের হয়ে আসেন। তখন শুধুমাত্র কথিত হাইজ্যাকার বিমানে ছিল।''

মি. হাসান সাংবাদিকদের আরও বলেন, ''কথিত ছিনতাইকারী ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছে। তার কাছে একটি অস্ত্র ছিল এবং বুকে বোমা বাঁধা থাকতে পারে। সেরকম তার বাঁধা রয়েছে।''

তিনি আরও বলেন, ''তিনি (কথিত বিমান ছিনতাইকারী) পাইলটের মাথায় অস্ত্র ধরে দাবি করেছিলেন যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন।''

অন্যদিকে এয়ার মার্শাল নাইম হাসান জানান, ''কথিত ছিনতাইকারীকে খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছে। সাধারণত ছিনতাই ঘটনা যেমনটা দেখা যায়, তেমনভাবে সে যাত্রী বা ক্রুদের জিম্মি করার সেরকম চেষ্টা করেনি।''

এনকাউন্টারে আহত হয়ে পরে মারা যান, পিস্তল পাওয়া গেছে: সেনাবাহিনী

তবে কিছুক্ষণ পরেই চট্টগ্রাম সেনা দপ্তরের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান জানান, "কম্যান্ডোদের আত্মসমর্পণের অনুরোধে সাড়া না দেয়ায় এনকাউন্টারে প্রথমে আহত এবং ঐ ব্যক্তি মারা যান"।

জিওসি এস এম মতিউর রহমান জানান, হোলি আর্টিজান বেকারিতে [২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের রেস্তোঁরায় জঙ্গি হামলার সময়] কম্যান্ডোদের যে দলটি অভিযান পরিচালনা করেছিল, সেই একই দল এখানে অভিযানটি পরিচালনা করে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

চট্টগ্রামে বিমানে অভিযান চালানোর পরের দৃশ্য।

জে রহমান বলেন, ''আমাদের কম্যান্ডোরা বিমানের ভেতর অভিযান চালানোর পর তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু তিনি সাড়া না দিয়ে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।"

"তার সঙ্গে আমাদের এনকাউন্টার হয়। তিনি প্রথমে আহত হন। পরে তিনি মারা গেছেন বলে আমি জানতে পেরেছি,'' তার কাছে শুধুমাত্র একটি পিস্তল পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।

অস্ত্রধারী একজনকে আটক করা হয়েছে: বিমানবাহিনী

বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির প্রধান মফিজুর রহমান সেদিন রাত আটটার দিকে বিমানবন্দরের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ২৫-২৬ বছর বয়সী অস্ত্রধারী একজনকে আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, "যাত্রী-ক্রু সবাই সুস্থ আছেন। আটক ব্যক্তির সঙ্গে তিনি নিজেই কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করেছেন। কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।"

ওই অস্ত্রধারীর দাবি-দাওয়া কী ছিল - এ বিষয়ে মফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি উত্তর দেননি।

তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ওই ঘটনা মনিটরিং করা হয়েছিল বলে তিনি তখন উল্লেখ করেন।

পটকা জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল: মামলার বিবরণী

সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় সোমবার রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা করেছে ।

পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, শাহ আমানত বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

সেখানে এজাহারে বলা হয়েছে, একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী বিমানের মাঝখান দিয়ে দৌড় দিয়ে সামনের ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করে।

"তার হাতে বোমা ও অস্ত্র সদৃশ বস্তু দেখা যায়। সে তার কিছু দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে।"

তিনি বলেন, "উক্ত দুষ্কৃতিকারী দুটো পটকা জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটায়।"

"অন্যথায় সে বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে দেবে মর্মে হুমকি দেয়। সে অস্ত্র ও গোলাবারুদের হুমকি দিয়ে যাত্রী ও ক্রুদের জিম্মি করার চেষ্টা করে," বলা হয়েছে মামলার বিবরণীতে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, "দায়িত্বরত অবস্থায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে জানায় যে, বিজি-১৪৭ আকাশে ওড়ার ১৫ মিনিট পর বোমা সদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছে।"

"পরে কমান্ডো ফোর্স বিমানটিতে অভিযান চালায়। ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু বোমা ও অস্ত্র সদৃশ বস্তু আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে যা যৌথ বাহিনীর কাছে রয়েছে।"

আরও পড়ুন:

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সেনা সদস্যদের একটি দল।

কথিত ছিনতাইকারীর হাতে ছিল খেলনা পিস্তল: র‍্যাব

এদিকে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন যে ব্যক্তি সেই পলাশ আহমেদের কাছে যে অস্ত্রটি পাওয়া গেছে সেটি একটি খেলনা পিস্তল বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

গতকাল (সোমবার) এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের মুফতি মাহমুদ খান জানান, "কথিত ছিনতাইকারীর কাছে একটি খেলনা পিস্তল পাওয়া গেছে।"

এছাড়া নিহত ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে র‍্যাবের অপরাধী তথ্যভাণ্ডারে রক্ষিত তথ্যে একজন অপরাধীর সঙ্গে মিল পেয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

র‍্যাব জানিয়েছে, নারী অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির একটি মামলায় এর আগে সে র‍্যাবের কাছে গ্রেপ্তার হয়েছিল।

ছবির উৎস, বিবিসি বাংলা

ছবির ক্যাপশান,

বিমান ছিনতাই চেষ্টার সময় নিহত হওয়া পলাশ আহমেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মাহিবী জাহান নামে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি

এ ঘটনার পর সর্বশেষ গতকাল ২৫শে ফেব্রুয়ারি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী সংসদে ৩০০ বিধিতে দেয়া বিবৃতিতে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী (বিজি-১৪৭ ফ্লাইট) ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার কারণ উদঘাটনে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

সংসদে তিনি বলেন, রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বিমানের বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালান এক যুবক।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিমানটি ৫টা ৪০ মিনিটে জরুরি অবতরণের পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জিম্মি দশা থেকে বিমানটি মুক্ত করা হয়, তিনি বলেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এই ঘটনার কারণ উদঘাটনে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী ও জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল একই বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন।