ভারতীয় লেখক অরুন্ধতীর অনুষ্ঠানটি অবশ্যই আমরা করবো: আলোকচিত্রী শহিদুল আলম

ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায়ের সাথে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের একটি কথোপকথন অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করে দেয়ার প্রেক্ষিতে ঐ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলছেন, যে তারা তারপরও এই আলোচনাটি অবশ্যই আয়োজন করবেন।
তাদের এই আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা থেকে 'বিরত রাখা যাবে না' বলে মন্তব্য করেছেন শহিদুল আলম।
'ছবিমেলা'র অন্যতম আয়োজক সংস্থা 'দৃক'এর প্রতিষ্ঠাতা মি. আলম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, "আমরা লড়াকু প্রতিষ্ঠান। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করবো।"
তারা ইতিমধ্যেই এই আয়োজনের জন্য নতুন জায়গাও খুঁজে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন শহিদুল আলম।
তিনি বলেছেন, "অরুন্ধতী রায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বিখ্যাত লেখক। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন। আমরা এটা আয়োজন করার জন্য অনেক শ্রম দিয়েছি এবং এতগুলো মানুষ উদগ্রীব হয়ে বসেছিল।"
"অনুষ্ঠান না হওয়ার বিষয়টি আমাদের অনেক বিপদে ফেলেছে। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই অনুষ্ঠানটি আমরা করবো।"
ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।
তবে এ ঘটনায় হতাশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শহিদুল আলম।
আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী 'ছবিমেলা'র দশম আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত এই অনুষ্ঠানটির জন্য ভারতীয় প্রখ্যাত লেখিকা ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায় ঢাকা এসেছেন।
রাজধানী ঢাকার খামার বাড়ির কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আজ (৫ই মার্চ) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এই আলোচনা অনুষ্ঠান।
'ছবিমেলা'র আয়োজকরা তাদের ফেসবুক পেইজে সোমবার রাতে পোস্ট করেছিলেন যে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই আয়োজনের জন্য পুলিশ তাদের যে অনুমোদন দিয়েছিলো তা ৪ তারিখ অনেক রাতের দিকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে 'অনিবার্য পরিস্থিতির' কারণে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হল।
শহিদুল আলম বলছেন চিঠিতে পুলিশ নির্দিষ্ট কোন কারণ জানায়নি।
এ নিয়ে অরুন্ধতী রায় যা বলছেন: "আমার মনে হয়না এমন একটা আয়োজন বন্ধ করা কারোর জন্য বিচক্ষণ একটা ব্যাপার। এমন ঘটনা শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও হচ্ছে। সাংবাদিকদের হত্যা করা হচ্ছে, অধ্যাপকদের জেলে পাঠানো হচ্ছে।"
"আমরা হচ্ছি তেমন মানুষ যারা বিরোধী মতের জন্য যায়গা তৈরি করার চেষ্টা করছি। মানুষজন মত প্রকাশ করতে না পারে, দ্বিমত পোষণ করতে না পারে, তাহলে সমষ্টিগতভাবে সমাজের বুদ্ধিমত্তা তলানিতে গিয়ে পৌঁছাবে। এটা কারো জন্য ভালো হবে না।"
আরো পড়ুন:
'অনেকে এখন চুপ, তাই আমার কণ্ঠস্বর স্পটলাইটে'
যেসব ছবির মাধ্যমে আলোড়ন তোলেন শহিদুল আলম
কেন বাংলাদেশের শহীদুল আলমের পাশে ভারতের রঘু রাই?
বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের সময়ে ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে বলে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। গত বছর আগস্ট মাসে বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় 'মিথ্যা তথ্য দিয়ে উস্কানি' দেওয়ার অভিযোগে মি. আলমকে গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ।
এরপর একশ দিনের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর তার জামিনে মুক্তি হয়।
সেসময় বিশ্বব্যাপী বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ।
এর আগে দৃক আয়োজিত ক্রসফায়ার শীর্ষক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।
অন্যদিকে ভারতে অ্যাক্টিভিস্ট বা সরকারের কড়া সমালোচক হিসেবে বিবেচিত অরুন্ধতী রায় বলেছেন ভারতেও ভিন্ন মত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে।