ওয়াসার 'সুপেয় পানি'র শরবত প্রত্যাখ্যান, 'জুরাইনে গিয়ে শরবত খেয়ে আসবো আমরা' বললেন এক কর্মকর্তা
'পানি এত নোংরা যে ভাতের রং বদলে যায়' ওয়াসা ভবনে আসা জুরাইনের এক নারী
ওয়াসার এমডিকে 'সুপেয় পানির' তৈরি শরবত খাওয়ানোর জন্য কারওয়ানবাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে হাজির হয়েছিলেন ঢাকার জুরাইনের কয়েকজন বাসিন্দা।
কয়েকদিন আগে ওয়াসার এমডি বলেছিলেন 'ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়' । আর ওয়াসার এমডির মন্তব্যের প্রতিবাদে তাদের এমন অভিনব প্রতিবাদ।
"আমাদের কি সুপেয় পানি দেয়া হচ্ছে ? পানি এত নোংরা যে ভাতের রং বদলে যায়। আমরা পানি কিনে এনে খাচ্ছি। পানি এত দুর্গন্ধ অন্য কাজ করলে দুর্গন্ধ দূর থেকেই পাবেন। ওয়াসাকে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম আপনারা কি ছোটখাট কমপ্লেইনগুলো আমলে নেন? আমার এলাকাবাসী বা অন্য যারা এই পানি সমস্যায় পড়বে তাদের কি সরাসরি প্রেস কনফারেন্স করতে হবে?" বলছিলেন প্রতিবাদ জানাতে আসা জুরাইনের বাসিন্দা মাসুরা আহমেদ শুচি।
একটি কাচের জগে পানি, এক কেজি চিনি, কয়েকটি লেবু আর ছুরি নিয়ে মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনে হাজির হয়েছিলেন মিজানুর রহমান, মাসুরা আহমেদ শুচিসহ জুরাইনের কয়েকজন বাসিন্দা। উদ্দেশ্য ছিল ওয়াসার এমডিকে তার ভাষা অনুযায়ী 'সুপেয় পানি'র শরবত বানিয়ে খাওয়াবেন।
কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
"উনি আজকে আসছেন শরবত খাওয়াতে, আমরাও গ্রহণ করলাম। তবে উনি যে শরবত বানিয়ে এনেছেন ওটা কোন পানি দিয়ে বানিয়ে এনেছেন তা আমি বলতে পারবো না।"
"ওয়াসার এমডি যে কয়দিন আগে বললেন এই পানি নাকি শতভাগ সুপেয় এটাতো হাস্যকর, নির্লজ্জ ও অসত্য কথা। যুগের পর যুগ জুরাইনের পানির অবস্থা খুব খারাপ। আমরা কমপ্লেইন করেও কোন প্রতিকার পাইনি। বাধ্য হয়ে এ বাজে পানি ব্যবহার করি, শুধু খাবার পানিটা কিনে খাই।"
ওয়াসার এমডি যেহেতু বললেন এটা 'সুপেয়' তার প্রতিবাদে আমরা এখানে এসেছিলাম আমার এলাকার ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো শরবত তাকে খাওয়াতে। কিন্তু পেলাম না। আরেকজনকে পেলাম, তিনি আমাদের অভিযোগ অস্বীকার করলেন, বললেন এই পানি ওয়াসার না। তিনি নাকি আমাদের কমপ্লেইনও কখনও পাননি!"
"কী আর করবো, আজকে তো কয়জন এসেছি। প্রতিকার না পেলে ভবিষ্যতে আমরা সবাই মিলে আসবো"।
এমন ব্যতিক্রমী প্রতিবাদে ওয়াসার কর্মকর্তারা কী বলছেন?
"উনি আজকে আসছেন শরবত খাওয়াতে, আমরাও গ্রহণ করলাম। তবে উনি যে শরবত বানিয়ে এনেছেন ওটা কোন পানি দিয়ে বানিয়ে এনেছেন তা আমি বলতে পারবো না।
সমস্যার কথা জানালেন, আমরাও জানলাম। অতি দ্রুত এর সমাধান করার চেষ্টা করবো। সমস্যা সমাধান করে তারপর জুরাইনে গিয়ে শরবত খেয়ে আসবো আমরা" -বলেছেন ঢাকা ওয়াসার একজন প্রকৌশলী একেএম সহিদউদ্দিন।
ওয়াসার পানি দূষিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন " এই শহরে আপনি-আমি থাকি সবাইকে দূষিত পানি খাওয়ালে আল্লাহও তো আমাকে ছাড় দিবে না। সারা ঢাকা শহরে দূষিত পানি নাই। যেসব জায়গায় আছে জানলে আমরা তাৎক্ষণিক সমাধান করে দেই, এটা আমাদের কাজও। উনি সমস্যা নিয়ে আসছেন , আমরা সমাধান করে দেব।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ঢাকায় পানি সরবরাহ ও পয়:নিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ বা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অভিযোগ শোনা যায় গ্রাহকদের কাছ থেকে।
'রাজধানীর ৯১ শতাংশ মানুষ পানি ফুটিয়ে খান' সম্প্রতি টিআইবির এমন মন্তব্যের পর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন 'ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়। তার পর থেকে এই মন্তব্য নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
এ নিয়ে বিবিসি বাংলার সামাজিক মাধ্যমে পাঠকদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে পাওয়া যায় নানা প্রতিক্রিয়া।
যেমন ইকবাল হোসেন নামে একজন লিখেছেন "সুপেয় শব্দটির ব্যাখা ওয়াসার এমডির কাছে চাই। ঢাকাবাসীর সাথে কি উনি মজা করছেন?"
ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত খাওয়ানোর উদ্যোগকে 'দারুণ প্রতিবাদ' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অনেকে।
রাহান তাপস নামে একজন লিখেছেন "দারুন প্রতিবাদ আমিও আছি সাথে"।
দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আচরণ ও কথাবার্তা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়েও মন্তব্য করেছেন অনেকে। যেমন ইলিয়াস হোসেন লিখেছেন- "আমাদের দেশে দায়িত্বশীল পদের ব্যক্তিরা তাদের সম্মান অনুযায়ী কথা বলেন না। তাদের সম্মান তাঁরা নিজেরাই নষ্ট করছেন।"
"দায়িত্বশীল পদের লোকদের বাচনভঙ্গি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।" লিখেছেন রোকন জামান।
ওয়াসা ভবনের সামনে অভিনব প্রতিবাদ