বিক্ষোভের আশংকায় শুক্রবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল ভোলা
- কাদির কল্লোল
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা

ছবির উৎস, Getty Images
ভোলার ঘটনায় ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ
বিক্ষোভ এবং বিশৃঙ্খলার আশংকায় বাংলাদেশের ভোলা জেলায় লঞ্চ এবং সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে পুরো জেলাকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল।
সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ গত ২০শে অক্টোবরে তাদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে নিহতদের স্মরণে শুক্রবার এই বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু প্রশাসনের কাছ থেকে সমাবেশ করার অনুমতি না মেলায় তারা সেই কর্মসূচি স্থগিত করে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি ভোলা জেলায় পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুরো জেলায় একটা থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়।
প্রশাসন বলেছে, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা করার অভিযোগ তুলে ভোলায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল, তা যেন আর না ঘটে, সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সারাদিন ভোলা শহর এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলায় রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি মোতায়েন ছিল এবং তারা টহল দেয়।
ভোলা থেকে এই ঐক্যপরিষদের একজন নেতা মিজানুর রহমান বলছিলেন, অনুমতি না পেয়ে তারা গতকালই তাদের কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
"ভোলা-বরিশাল লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। নোয়াখালীর সাথেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল। এছাড়া ভোলা জেলার এক থানার সাথে আরেক থানারও সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ভোলা শহরে সারাদিন লোকজন প্রবেশে বাধা দেয়া হয়।"
"আমরা আমাদের প্রোগ্রামের অনুমতি না পেয়ে স্থগিত করার পরও তারা আশ্বস্ত হয়নি। সেজন্য প্রশাসন ভোলার রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ-র্যাব-বিজিবির ব্যাপক উপস্থিতি ঘটিয়ে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল।"
সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে ভোলাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন বিশৃঙ্খলা এড়ানোর বিষয়কে মুল কারণ হিসেবে তুলে ধরছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, "আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে আবহাওয়া ভাল থাকবে না। সেটি একটি কারণ। আরেকটা দিক হচ্ছে, অনেক মানুষ সমাগম হতে পারে, এমন একটা ধারণা দেয়া হয়েছিল। এই দু'টি বিষয় বিবেচনা করে দুপুর পর্যন্ত ভোলা-বরিশাল লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল।"
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা এবং ইসলামের নবীকে হেয় করার অভিযোগে এরআগে তৌহিদী জনতার ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে এর নেতারা ভোলার প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু গত ২০শে অক্টোবর সেই বিক্ষোভ থেকে সংঘর্ষ হয়েছিল এবং পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হয়েছিল।
ছবির উৎস, NurPhoto
ভোলার ঘটনায় ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল
নিহতদের স্মরণে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্যপরিষদের ব্যানারে একটি স্কুলমাঠে দোয়া মাহফিল করার কথা বলা হলেও স্থানীয় প্রশাসন আবারও কোন ঝুঁকি নিতে চায়নি বলে মনে হয়েছে।
সেজন্য তাতে অনুমতি না দিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা রাখা হয়েছিল।
জেলা প্রশাসক মি: সিদ্দিক বলেন, "আবার যেনো কোন ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমরা বলেছি যে, আপাতত এই কর্মসূচির অনুমতি দেয়া যাচ্ছে না। যেহেতু বোরহানউদ্দিনে ২০শে অক্টোবর বিশৃঙ্খল একটা ঘটনা ঘটেছিল। সেজন্য আইন শৃঙ্খলার স্বার্থে আমরা এখানে সভা সমাবেশ করার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে বলেছি। যাতে কোন ঘটনা এড়াতে প্রশাসনও প্রস্তুতি রাখতে পারে।"
মুসলিম ঐক্যপরিষদের নেতারা বলছেন, প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এবং এনিয়ে তারা নেতৃবৃন্দ শনিবার নিজেরা বৈঠক করতে পারেন।
তারা উল্লেখ করেছেন, প্রশাসনের সাথে তাদের চলমান আলোচনাতেও এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রশাসনের পদক্ষেপকে ইসলামপন্থী সংগঠনগুলোর নেতারা বিবেচনা করবেন বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেন।
এদিকে ২০শে অক্টোবর বিক্ষোভ থেকে যে সংঘাত হয়েছে, সে সময় বোরহানউদ্দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর এবং মন্দিরে হামলা হয়েছিল। ফলে তাদের মাঝেও আতংক ছিল ।
ভোলা জেলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানিয়েছেন, ভোলা জেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন।