সাকিব আল হাসান তার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদে যা যা মিস করবেন
- রায়হান মাসুদ
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা

ছবির উৎস, রতন গোমেজ
ভারতের বিপক্ষে কন্ডিশনিং ক্যাম্পে একদিন অংশ নেন সাকিব আল হাসান
পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ভারত পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
টেস্ট সিরিজের আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে তেসরা নভেম্বর।
ভারতের বিপক্ষে এই সিরিজটিতে এর আগে সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক করে দল ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশের নির্বাচকেরা।
সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার পরপরই যেহেতু ভারত সিরিজ, তাই এই সিরিজ নিয়েই আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা।
টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট দলের সদ্য সাবেক হওয়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ভেতর নিশ্চিতভাবেই একটা ধাক্কা লেগেছে বলে মনে করেন মুশফিকুর রহিম।
সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক বলেন, "'সাকিবের বিকল্প নেই। অবশ্যই তাকে মিস করব। সে আমাদের নাম্বার ওয়ান খেলোয়াড়। তার জায়গায় যারা এসেছে তাদের জন্য এটা বড় সুযোগ।"
মুশফিকুর বাস্তবতার কথা বিবেচনা করে যোগ করেন, "সাকিব যদি চোটে পড়ত নিশ্চয়ই অন্য কেউ তার জায়গায় আসতো। এভাবেই দেখলে আমাদের ভালো হয়। ক্রিকেটে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। ভালো ফলই এসব পেছনে ফেলতে পারে।"
টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, "অবশ্যই সাকিবকে মিস করব। সে বাংলাদেশ দলের অনেক বড় এক অংশ। সবাই ওর জন্য ব্যথিত। জানি সে আমাদের দলের জন্য, দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সে একটা ভুল করেছে, অপরাধ করেনি। ওর প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে। তাকে আগের মতোই ভালোবাসবো।"
সাকিব যেসব সিরিজ মিস করবে
সাকিব আল হাসানের এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২০২০ সালের ২৯শে অক্টোবর। তার পরের এক বছর স্থগিত দণ্ড। ফলে ২০২০ সালেই তিনি খেলায় ফিরতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সময়ের মধ্যে তিনি খেলতে পারবেন না মোট ১৩টি টেস্ট ম্যাচ, ৩টি ওয়ানডে ম্যাচ ও ২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
অর্থাৎ মোট ৩৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।
আসন্ন ভারত সিরিজে সাকিব আল হাসান ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ও ২টি টেস্ট ম্যাচ মিস করবেন।
২০২০ সালের শুরুতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ২টি টেস্ট ম্যাচ ও ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একটি সিরিজ পরিকল্পনা চলছে।
সেখানেও খেলতে পারবেন না সাকিব আল হাসান।
ঠিক তার পরপর জিম্বাবুয়ে আসবে বাংলাদেশে, যেখানে একটি টেস্ট ম্যাচ ও ৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ যা সাকিব আল হাসান মিস করবেন।
এরপর ২০২০ সালের মে মাসে আয়ারল্যান্ড সিরিজে খেলতে যাবে বাংলাদেশ, সেখানে একটি টেস্ট ম্যাচ, ৩টি ওয়ানডে ম্যাচ ও ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ জুন মাসে খেলবে দুটো টেস্ট ম্যাচ।
জুলাই মাসে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় সফর করবে, সেখানে রয়েছে তিনটি টেস্ট ম্যাচ।
অগাস্টে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে এসে দুই ম্যাচের একটি টেস্ট সিরিজ খেলবে।
২০২০ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আছে এবং একই মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়।
অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখ শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেখানে সাকিব আল হাসান স্কোয়াডে থাকতে পারবেন না, এর কারণ তার নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে ২৯শে অক্টোবর।
যদি কোনো ক্রিকেটার কোনো কারণে খেলতে না পারে সেক্ষেত্রে সাকিব আল হাসান দলে ঢুকতে পারেন, কিন্তু কার্যত সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
মাগুরায় নিজ বাড়ির সামনে সাকিব আল হাসান
মাঠের ক্রিকেটে প্রভাব
সাকিব টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের তো বটেই, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পারফর্মার।
টি-টোয়েন্টি দলে ভারত সিরিজে সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে নেয়া হয়েছে তাইজুল ইসলামকে।
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের একজন সদস্য ও একই সাথে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার সাথিরা জাকির জেসি বলেন, "তাইজুল হয়তো বোলিংটা করে দিতে পারবেন, কিন্তু সাকিব আল হাসানের যে অভিজ্ঞতা ও যে বুদ্ধিটা দিয়ে বোলিং করেন সেই জায়গাটায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।
সাকিব ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন, ভারতের ক্রিকেটারদের বোঝেন সাকিব। তাই প্রতিপক্ষের মনোজগৎ বিশ্লেষণের জায়গাটায় অভাববোধ করবে বাংলাদেশ।
সাথিরা জাকির জেসি ভারতের ক্রীড়া সম্প্রচার মাধ্যম স্টার স্পোর্টসের সাথে কাজ করেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে, ওই চ্যানেলের সকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি বলছেন, সাকিব আর তামিম না থাকায় এই সিরজটি ভারতীয় সম্প্রচারকারীদের কাছে প্রীতি ম্যাচে পরিণত হয়েছে এখন।
অর্থাৎ ভারতে এই সিরিজ নিয়ে আগ্রহও অনেকটাই কমে গিয়েছে।
"বাংলাদেশ দলে সাকিব নেই, তামিম নেই। ভালো দলগুলোর বিপক্ষে এই ক্রিকেটাররাই ভালো খেলে থাকেন।"
তবে নতুন ক্রিকেটারদের সুযোগ পাওয়াটাকে একটা ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন জেসি।
তার মতে, আফিফ হোসেন ধ্রুবরা সাকিব আল হাসানের জায়গায় কেমন পারফর্ম করে এটাই হবে দেখার বিষয়।