কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর ইরানের কুদস ফোর্সের নতুন কমান্ডার ইসমাইল ক্কানি সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

ছবির উৎস, AFP
প্রতিশোধের অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন জেনারেল ইসমাইল ক্কানি।
ইরানের এলিট ফোর্স কুদস বাহিনীর নতুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইসমাইল ক্কানি। ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত কমান্ডার কাসেম সোলেইমানির বহুদিনের সহযোদ্ধা ও কুদস বাহিনীর ডেপুটি ছিলেন তিনি।
কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েই সোলেইমানির হত্যাকাণ্ডের জন্য ইরান 'চরম প্রতিশোধ' নেবার যে অঙ্গিকার করেছে তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন জেনারেল ক্কানি। আর সেই প্রতিশোধের নেতৃত্ব দেবার দায়িত্ব এখন জেনারেল ক্কানি'র উপর।
জন্ম ও পেশাগত জীবন
৬৩ বছর বয়স্ক এই সামরিক কমান্ডারের জন্ম ইরানের দ্বিতীয় জনবহুল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মাশাদ শহরে। শহরটি শিয়া মুসলিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
১৯৮০ সালে তিনি দেশটির 'ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর' বা আইআরজিসিতে যোগ দেন। এর এক বছর আগে ইরানে ইসলামি বিপ্লব শুরুর পর দেশটির ইসলামি শাসনব্যবস্থার নিরাপত্তার জন্য এই বাহিনী গঠন করা হয়।
সোলেইমানির মতোই সাদ্দাম হোসেনের শাসন আমলে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চলমান রক্তক্ষয়ী ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা তিনি।
ছবির উৎস, Chris McGrath
ইরানীরা সোলেইমানিকে হিরোর মর্যাদা দেয়।
কাসেম সোলেইমানিকে স্মরণ করে জেনারেল ক্কানি বলেছেন, সেই যুদ্ধের কঠিন প্রতিকূলতার সময় তাদের বন্ধুত্বের জন্ম। তিনি বলেছেন, "আমরা যুদ্ধের সন্তান।"
ইরান-ইরাক যুদ্ধ শেষে তিনি কুদস বাহিনীতে যোগ দেন। শুরুর দিকে আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের সীমান্তে খোরাসান প্রদেশে কর্মরত ছিলেন তিনি। জেনারেল ক্কানির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খুব একটা বিস্তারিত জানা যায় না।
আরো পড়ুন:
তবে মনে করা হয় সোলেইমানি পশ্চিমে সামরিক কর্মকাণ্ডের দিকে দৃষ্টি দিতেন। অন্যদিকে জেনারেল ক্কানির কর্মকাণ্ড ছিল তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বাহিনীগুলোকে সহায়তা করা এবং মাদক চোরাচালান বিরোধী কার্যকলাপের দেখভাল করা।
তিনি কুদস ফোর্সে মূলত প্রশাসনিক কাজেই বেশি নিযুক্ত ছিলেন বলে ধারনা পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী কুদস বাহিনীর কর্মকাণ্ডের অর্থের যোগানদাতা এবং ওই বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালে অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
ছবির উৎস, Anadolu Agency
সোলেইমানির কফিনে মাথা রেখে কাঁদছেন তার বহুদিনের সহযোদ্ধা জেনারেল ক্কানি।
ক্কানির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব জোরদার করার জন্য কাজ করতেন সোলেইমানি। সিরিয়া, ইরাক, লেবানন এবং ইয়েমেনে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
ইরানীরা তাকে হিরোর মর্যাদা দেয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনির পরই তাকে ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হতো।
এখন জেনারেল ক্কানির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তার পূর্বসূরির সমতুল্য নজির প্রতিষ্ঠা করা। কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েই তিনি প্রতিশোধের অঙ্গিকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আরো পড়ুন:
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেছেন, "শহীদ সোলেইমানির হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নামে প্রতিশ্রুতি নিচ্ছি। নিশ্চিতভাবেই সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।"
তাকে কমান্ডার নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে আয়াতোল্লাহ খামেনি বলেছেন, কুদস বাহিনীতে কোন ধরনের পরিবর্তন আসবে না। যদিও প্রশ্ন উঠছে যে সোলেইমানির মতো এত প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন কিনা জেনারেল ক্কানি।
ছবির উৎস, MOHAMMAD TAGHI
মাশাদ শহরে কাশেম সুলেইমানির মরদেহ নিয়ে আসার পর তাকে শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র একক ব্যক্তি বিশেষের উপরে রেভল্যুশনারি গার্ডের শক্তি নির্ভর করে না। ওয়াশিংটনে আরব ও গালফ অঞ্চল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলি আলফনেহ লিখেছেন, "সোলেইমানির মতো চৌকস পূর্বসূরির সমতুল্য নেতৃত্বের নজির প্রতিষ্ঠা করা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা ক্কানির মতো একজনের পক্ষে খুব কঠিন হবে।"
"তারপরও কুদস বাহিনীর যে শক্তি সে কারণেই ক্কানি প্রভাব বিস্তার করবেন।"
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক আফশন অস্টোভার এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, "ক্কানি খুব জোরের সাথে অগ্রসর হবেন।"
তিনি লিখেছেন, "অনেক বিশেষজ্ঞ যতটা মনে করেন, আইআরজিসি শুধু একক ব্যক্তি বিশেষের উপর তার চেয়ে অনেক কম নির্ভরশীল। সোলেইমানির মৃত্যু অবশ্যই একটি প্রভাব ফেলবে কিন্তু তাতে ইরানের আঞ্চলিক কর্মকাণ্ডে দৃষ্টিগোচর হওয়ার মতো কোন পরিবর্তন ঘটবে না।"
অন্যান্য খবর: