মেজর সিনহা রাশেদ হত্যা: ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আদালতে, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু সোমবার

ছবির উৎস, Getty Images
সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা রাশেদ হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে
বাংলাদেশে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আজ আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
ঘটনার তদন্তকারী বাহিনী র্যাব একথা বিবিসিকে জানিয়ে বলছে, গ্রেপ্তার পুলিশ কর্মকর্তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে আজই দুপুরে নিহত মেজর সিনহার সাথে কাজ করছিলেন এমন যে তিনজন শিক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছিলেন - তাদের একজন, শিপ্রা দেবনাথের জামিন আদালত মঞ্জুর করেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া আরেকজন শিক্ষার্থী সিফাতের জামিন শুনানির আদেশ সোমবার হওয়ার কথা রয়েছে।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট
নিহত মেজর সিনহার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন রোববার আদালতে দাখিল করা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বিবিসিকে বলেছেন, "মেজর সিনহার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আজ আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি পাবার জন্য আদালতে আবেদন করেছি।
আরো পড়তে পারেন:
তিনি বলেন, "আশা করছি রোববার বা আগামীকাল রিপোর্ট হাতে পাবো আমরা।"
বিভিন্ন গণমাধ্যমে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কী রয়েছে, তার কিছু তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু র্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মি. বিল্লাহ জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শুরু
পাঁচই অগাস্ট নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার হত্যা মামলা দায়ের করেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ মোট নয়জনের বিরুদ্ধে।
ছবির উৎস, সারোয়ার আজম মানিক
মামলা দায়ের করা শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেন সিনহা রাশেদের বোন
পরদিন অর্থাৎ ছয়ই অগাস্ট মামলার সাতজন আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
ওই সাতজন পুলিশ সদস্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মি. বিল্লাহ বলেছেন, "আদালত যাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে তাদের সোমবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হবে। এছাড়া বাকিদের কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছে আদালত, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।"
এদিকে, লে: কর্নেল বিল্লাহ আরো জানিয়েছেন, নয়জন আসামির মধ্যে সাতজন আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও অপর দুইজন আসামির এখনো হদিস পাওয়া যায়নি।
যদিও তাদের পলাতক উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
"ওই দুইজন পুলিশ সদস্যের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে বাহারছড়া কেন্দ্রে ওই দুইজন পুলিশ সদস্যের থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।"
শিপ্রা দেবনাথের জামিন
রোববার দুপুরে কক্সবাজারের রামুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করার পর শিপ্রা দেবনাথের জামিন মঞ্জুর করে আদালত।
ছবির উৎস, Getty Images
কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে যাওয়া মেরিন ড্রাইভে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান
মিজ দেবনাথ নিহত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানের সঙ্গে কাজ করছিলেন, গত ৩১ শে জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে যার মৃত্যু হয়।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহত হবার পর তার সঙ্গে একটি তথ্যচিত্রের কাজ করছিলেন এমন তিনজন শিক্ষার্থী, যারা সবাই বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী, তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে তাদের একজন তাহসিন রিফাত নূরকে তার অভিভাবকের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনার পর থেকে কক্সবাজার কারাগারেই ছিলেন সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথ।
তার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বিবিসিকে বলেছেন, আদালত জামিন মঞ্জুর করলে রোববার দুপুরের পর মুক্তি পেয়েছেন মিজ দেবনাথ।
সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে। এর আগে শনিবারও সিফাত এবং শিপ্রার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করে তারা।
অন্যদিকে সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবিতে বরগুনায় একটি মানববন্ধন শনিবার লাঠিচার্জ করে ভেঙে দেয় পুলিশ।
সিফাতের মামলা পুলিশ থেকে র্যাবে হস্তান্তরের আবেদন
এদিকে, সিফাতের বিরুদ্ধে দায়ের দুইটি মামলার তদন্তভার পুলিশের কাছ থেকে সরিয়ে র্যাবের কাছে হস্তান্তরের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
ওই আবেদন এবং সিফাতের জামিনের ওপর আজ শুনানি হয়েছে।
এ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেছে আদালত।
সিফাতের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবার
তবে, সিফাতের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তার পরিবার বলছে, সিফাত জামিনে মুক্ত হবার আগ পর্যন্ত তাদের উদ্বেগ কাটবে না।
সিফাতের খালা নীলা - যিনি এই একটি নামেই নিজের পরিচয় দিয়েছেন বিবিসির কাছে, বলেন, "সিফাত পয়লা অগাস্ট আদালতে চালান হয়েছে, তারপর থেকেই পরিবার ভীষণ উদ্বিগ্ন। কারণ ওর 'লাইফ-রিস্ক' আছে বলে আমরা মনে করি।
"আমাদের আইনজীবী আবেদন করেছেন যেন সিফাতের বিরুদ্ধে দায়ের দুইটি মামলার তদন্তভার পুলিশের কাছ থেকে সরিয়ে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।"
"আমরা যারা সাধারণ মানুষ আমরা মনে করি, পুলিশের চেয়ে র্যাব তদন্ত করলে সেটা সুষ্ঠু হবে।"