পেঁয়াজ ও ভারত বিতর্ক আর ইসরায়েলের সাথে আরবদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন

ছবির উৎস, NurPhoto
ভারতে পেঁয়াজ সংকটের কারণে রফতানি বন্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বেশ হৈচৈ পড়ে গেছে। এই শোরগোলের বড় কারণ হচ্ছে, পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করার ভারতীয় সিদ্ধান্ত।
যেমন বলছেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ মাসুদ রানা:
''ভারত যদি বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হয় তবে আলোচনা ছাড়া কেন হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। অথবা শুষ্ক মৌসুমে যখন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানির প্রয়োজন তখন পানি দেয় না, কিন্তু যখন বাংলাদেশে পানির প্রয়োজন নেই তখন ভারত কোনো রকম আলোচনা না করেই বাংলাদেশে পানি ছেড়ে দেয়, যার ফলে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি হয়। অথচ ভারতের প্রয়োজনে বাংলাদেশ সবসময়ই পাশে থাকে। তাহলে ভারত কি শুধুই মুখে মুখে বাংলাদেশের বন্ধু? কোন আলোচনা ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে সংকটের মধ্যে ফেলে কী ধরনের বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়?''
খবরেই সম্ভবত দেখেছেন মি. রানা, ভারতের সিদ্ধান্ত পাল্টানোর জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক পথে চেষ্টা করছে। তবে এটাও সত্য যে, সব রাষ্ট্রই নিজ স্বার্থে সব সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভারত তার ব্যতিক্রম না। ভারত সব দেশেই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে, শুধু বাংলাদেশ না, এবং এই সিদ্ধান্তর পেছনে তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যাখ্যা আছে। বাংলাদেশও নিজ স্বার্থ রক্ষা করবে এবং দেখবে কীভাবে পেঁয়াজের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরতা কমানো যায়। তবে পানির ব্যাপারটা ভিন্ন। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের জন্য বন্ধুসুলভ প্রতিবেশীদের মধ্যে যে ধরনের সহযোগিতা থাকার কথা, সেটা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সেখানেও ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কাজ করছে, কারণ তিস্তা নদী নিয়ে চুক্তির প্রধান অন্তরায় হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু এখানেও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ তার স্বার্থ রক্ষার জন্য তিস্তা নদী নিয়ে নতুন প্রকল্পর কথা ভাবছে, যেখানে চীনের সহযোগিতা পাবার কথা শোনা যাচ্ছে।
ছবির উৎস, NARINDER NANU
গত বছর ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে দিল্লিতে বিক্ষোভ হয়।
খানিকটা একই রকম সেন্টিমেন্ট প্রকাশ করে লিখেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোহাম্মদ শাহিন আলম:
''প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের এই রকম আচরণ মোটেও সুসম্পর্কের বৈশিষ্ট্য নয়। ভারত সরকার গতবছর হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই বছর প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লি সফরে গিয়ে বলে এসেছে ভারতে যেন আমাদের জানিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এবারও ভারত হঠাৎ করেই কোন কিছু না জানিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিল। প্রতিবেশী দেশ থেকে এরকম আচরণ সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে কতটা যৌক্তিক সেটা বিবেচ্য বিষয়।''
ভারতের এই সিদ্ধান্তটা হুট করে নেয়া হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে মি. আলম। পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতে অতি বৃষ্টির ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং সেকারণেই রফতানি বন্ধ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে দু'দেশের সম্পর্ক নিশ্চয়ই একটি দ্রব্যের রফতানির ওপর নির্ভর করে না?
পেঁয়াজের প্রসঙ্গে ফিরছি আরেকটু পরে, তার আগে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে দুটো চিঠি।
ছবির উৎস, Reuters
ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত আর বাহরাইনের চুক্তির ফলে ঐ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে।
বেশ কিছু দিন যাবত যে বিষয় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক জগতকে সরগরম রেখেছে তা হল, ইসরায়েলের সাথে বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপন। মাস খানেক আগে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে চমক লাগিয়ে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। সপ্তাহান্তে যোগ দেয় বাহরাইন।
আগামীতে কে? সৌদি আরব, মরক্কো সহ অন্যান্য আরব দেশেরও নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি আর ইরানের দিক থেকে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মতে, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র স্থাপনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়ে শুরু করছি, লিখেছেন ঢাকা থেকে তাঞ্জিলুর রহমান:
''ইসরায়েলের সাথে কিছু আরব রাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রধানত ইরানকে দমনের জন্য। আর ওসব দেশে গণতন্ত্র নাই, যার ফলে জনগণের চাওয়া কী, সেটা সেসব দেশের বাদশাহরা পরোয়া করেনা। আমি যতটুকু জানি সেসব দেশের জনগণের বিশাল অংশ এটা সমর্থন করেনা তাই এই সম্পর্ক আসলে একটা পোশাকি সম্পর্ক ছাড়া আর কিছু নয়।''
এ'কথা ঠিক মি. রহমান, যেসব আরব দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে সেসব দেশে জনমত যাচাই করা কঠিন, তাই কোন নিশ্চয়তার সাথে বলা যাবে না তারা তাদের সরকারের পদক্ষেপ সমর্থন করে কি করে না। তবে আগামী দিনগুলোতে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ছবির উৎস, Anadolu Agency
জেরুসালেম নগর দেয়ালে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে পতাকার প্রতিচ্ছবি
বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে লিখেছেন ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শামীম উদ্দিন শ্যামল:
''ইসরাইলের সাথে নিজ স্বার্থ রক্ষা কিংবা প্রতিপক্ষকে কঠোর সতর্কবার্তা দিতে বেশ কয়েকটা মুসলিম দেশ শান্তিচুক্তি করছে/স্বীকৃতি দিচ্ছে। ইসরাইলের সাথে মুসলিম দেশগুলোর শান্তিচুক্তি/স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে কিনা তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে শত্রুতার সম্পর্কে রেখে যেহেতু মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছু করতে পারেনি, এবার বন্ধুত্বর সম্পর্কে রেখে হয়তো কিছু করতে পারবে বলে আশা করা যায়।''
এ'রকম একটা চিন্তাধারা অবশ্যই আছে মি. শামীম উদ্দিন। ইসরায়েলকে সামরিক পথে পরাস্ত করতে আরব দেশগুলো ব্যর্থ হয়েছে। তাই শান্তি স্থাপনের মধ্য দিয়েই হয়তো ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের নীতি প্রভাবিত করা যাবে। এই আশা আরব বিশ্বে অনেকে করবেন। তবে ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে না তারা আশাবাদী।
আত্মহত্যা প্রবণ সন্তানদের বাঁচার প্রেরণা যোগাচ্ছেন যে মায়েরা
এবারে একটি অভিযোগ। ভারতে এলাহাবাদ শহরের নাম বদল নিয়ে আমাদের রিপোর্টের প্রতিবাদ করে লিখেছেন ভারত থেকে অর্ক রায়:
''গত ১৫ই সেপ্টেম্বর বিবিসি বাংলায় উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে একটি প্রতিবেদনে দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, আদিত্যনাথ নাকি 'দুম করে' এলাহাবাদের নাম পালটে দিয়েছেন। অথচ বিবিসি বাংলার সাংবাদিকগণ রিসার্চ করে দেখলই না যে এলাহাবাদের আদি নাম ছিল প্রয়াগরাজ যেটি মুসলিম মুঘল শাসকরা ভারতে এসে পালটে রাখে এলাহাবাদ। আদিত্যনাথ শুধু আদি নামটাই আবার ফিরিয়ে আনল।
''ব্রিটিশরা যেমন ভারতে বিদেশী তেমনি উজবেকিস্তান থেকে আসা মুঘলরাও ভারতে বিদেশী। ব্রিটিশদের দেওয়া শহরের নামগুলো যেমন পালটে ফেলা হয়েছে তেমনি বিদেশী মুঘলদের নামগুলোও পালটে ফেলা কোন অন্যায় নয়। এনিয়ে বিবিসি বাংলা ইচ্ছাকৃত ভাবে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। আর ভারতের মুসলিমরা কিন্তু মুঘলদের বংশধর নয়। তাই মুঘলদের সাথে ভারতের মুসলিমদের জড়িয়ে ফেলা বিবিসির নিম্ন রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়।''
এলাহাবাদের প্রাচীন নাম যে প্রয়াগরাজ ছিল সেটা কিন্তু কেউ কোন দিন অস্বীকার করেনি মি. রায়। আর 'দুম করে' শব্দ দুটো আমাদের সংবাদদাতার নয়, সেটা ছিল একজন ইতিহাসবিদের পর্যবেক্ষণ। আমাদের রিপোর্ট ছিল ভারতে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থাপনার নাম পালটে ফেলার প্রবণতা নিয়ে এবং সেটা ঘিরে যে বিতর্ক হচ্ছে, সেটা নিয়ে। এখানে বিবিসি বাংলার কোন রাজনীতি নেই, যা রাজনীতি আছে তা ভারতেই।
ছবির উৎস, Getty Images
ফতেহপুর সিক্রি-র মত মুঘল আমলের নানা স্থাপত্য ও পুরাকীর্তি ছড়িয়ে আছে উত্তরপ্রদেশের নানা প্রান্তে।
তবে প্রয়াগ সম্পর্কে আমাদের সংবাদদাতা শুভজ্যেতি ঘোষ কয়েকটি লাইন যোগ করেছেন:
''ভারতে গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গমে যে প্রাচীন জনপদ, সেটি বেশ কয়েকশো বছর আগে যে 'প্রয়াগরাজ' বা 'প্রয়াগ' নামেই পরিচিত ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। মুঘল বাদশাহ আকবর ষোড়শ শতাব্দীতে এই শহরের নতুন নাম দেন এলাহাবাদ। পরবর্তী প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে, এমন কী ব্রিটিশ আমলে বা স্বাধীন ভারতেও এই শহরকে সারা দেশ এলাহাবাদ নামেই চিনে এসেছে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু নিজেকে এলাহাবাদের সন্তান বলেই পরিচয় দিতেন, বলিউড সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চনও তাই দেন। উত্তরপ্রদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নাম এখনও এলাহাবাদ হাইকোর্ট, আর আজও রাজ্যের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটি।
''যোগী আদিত্যনাথ সরকারের প্রশাসনিক নির্দেশে ২০১৮র নভেম্বরে রাতারাতি এই শহরের নাম পাল্টে করা হয় প্রয়াগরাজ। অথচ শহরের নাম পাল্টানোর জন্য সেখানে কোনও গণআন্দোলনও ছিল না, সরকার কোনও জনমত যাচাই (পাবলিক কনসাল্টেশন) বা গণভোটও করেনি। এ কারণেই বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মৃদুলা মুখার্জি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন 'দুম করে' এলাহাবাদের নাম বদলে দেওয়া হল - আর প্রতিবেদনেও ঠিক সেটাই উল্লেখ করা হয়েছে।''
ছবির উৎস, TAUSEEF MUSTAFA
লাদাখের আকাশে ভারতীয় বিমার বাহিনীর টহল।
ভারত-চীন সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং তা প্রশমনের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে লিখেছেন আসামের ডিগবয় থেকে শান্তনু রায়চৌধুরী:
''পূর্ব লাদাখ সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা প্রশমনের জন্য ভারত ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ে সদ্য গ্ৰহন করা মস্কো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সত্ত্বেও লাদাখ সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা ক্রমবর্ধমান। এমতাবস্থায় এটা কি ধরে নেওয়া যায়, যে উক্ত অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা সামরিক পর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে না বা সীমান্তে নিয়োজিত দু'পক্ষের সৈন্যরা সে নির্দেশ মানতে নারাজ, যার পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে?''
পরিস্থিতি যে অত্যন্ত জটিল তা নিয়ে সন্দেহ নেই মি. রায়চৌধুরী। চীন ইতোমধ্যে অভিযোগ করেছে সীমান্তে ভারতের সৈন্যরা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে কাজ করছে। ভারত সেটা মানতে নারাজ। তবে চুক্তি বা সমঝোতা সত্ত্বেও আমার মনে হয় দু'দেশের সামরিক বাহিনীই চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে। সেসব কার্যক্রম থেকে বড় মাপের সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যায়।
পরের চিঠি লিখেছেন ঝিনাইদহ থেকে কাজী সাঈদ:
''বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে দেখলাম বাংলাদেশে ঝিনাইদহ জেলায় নাকি আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। চাকুরির সুবাদে এখানে অবস্থান করলেও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছিলাম না মোটেও। তবে এই চিত্রটি শুধু ঝিনাইদহের না, দেশের অন্যান্য এলাকাতেও প্রকোপ কম না বলেই আমি মনে করি। আর এর বড় কারণ হল, আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়না বললেই চলে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো ভয়াবহ।
''কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হলে আমাদের প্রবণতা হল তাকে পাগল সাব্যস্ত করা, যা ঐ মানুষটির প্রতি আরো অমানবিক হাওয়ার নামান্তর। আশা করব, মানসিক রোগীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটাবে, সেই সাথে শুধু ঝিনাইদহ না, সারা দেশের আত্মহত্যার মাত্রা শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব হবে।''
শূন্যের কোঠায় নামানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে মি. সাইদ। কারণ ব্রিটেন বা সুইডেন-এর মত উন্নত দেশ, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়, সেখানেও কিন্তু আত্মহত্যার হার বেশ উঁচু। তবে এটা ঠিক যে, বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যকে সরকার বা পরিবার, কোনো দিক থেকেই গুরুত্ব দেয়া হয়না। বরং এই বিষয়কে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা দেখা যায়। এখানে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো অত্যন্ত জরুরি বলে আমার মনে হয়, এবং সেটা করতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
ছবির উৎস, NurPhoto
সুখের অপর নাম এক বস্তা পেঁয়াজ।
আবার ফিরছি পেঁয়াজ প্রসঙ্গে। পেঁয়াজ নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার:
''ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবার একদিন পরেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য কী ভাবে দ্বিগুণ হয়ে গেল? তাহলে কি এটি ধরে নেওয়া যেতে পারে বাংলাদেশে পেঁয়াজের কোনো মজুদ নেই? না কি ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রাতারাতি পেঁয়াজের মূল্য দ্বিগুণ করে দিয়েছে? এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ভারত নির্ভরতা কমিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি কারক অন্যান্য দেশের দিকে নজর দেওয়া উচিৎ বলেই আমার মনে হয়।''
আগের চিঠির উত্তরে যেটা বলেছি মি. সরদার, বাংলাদেশ সরকার নিশ্চয়ই পেঁয়াজের মত গুরুত্বপূর্ণ শস্যর জন্য একটি দেশের হাতে জিম্মি হয়ে থাকতে চাইবে না। তারা নিশ্চয়ই বিকল্প দেশ নিয়ে ভাবছে। আর দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়াটা মুক্ত বাজারের আরেকটি রূপ বলেই মনে হয় - রফতানি বন্ধ মানে সরবরাহ কম হবে, চাহিদাও হঠাৎ বেড়ে যাবে, কাজেই দাম বৃদ্ধি করে দেয়া হল। মজুদ থাকলেও ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে মুনাফা বৃদ্ধি করছে।
ছবির উৎস, Getty Images
বাংলাদেশে চাহিদার দুই তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়, বাকিটা আমদানি করতে হয়
একই বিষয়ে আরো লিখেছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে মোহাম্মদ রেজাউল রহিম:
''সপ্তাহ দু'য়েক আগেও যেখানে মসলা জাতীয় খাবার পেঁয়াজের কেজি প্রতি দাম পঞ্চাশের ঘরে ছিল, সেখানে পার্শ্ববর্তী দেশের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে এখন তা লাগামছাড়া বললে বোধহয় ভুল হবে না। এহেন পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে তো পেঁয়াজের দাম গেল বছরের মতন আকাশচুম্বী হওয়ার আশংকা তো রয়েছেই। আর এতে করে ক্রেতা সাধারণের পেঁয়াজ কিনতে তো নাভিশ্বাস অবস্থা। আদতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা এসবের ফায়দা লুটতে মরিয়া। কিন্তু সরকার আসলেই পেঁয়াজের অস্থির বাজারের লাগাম টেনে ধরতে পারবে কি?''
সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী তো কথা দিয়েছেন এক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হবে। হয়তো তিনি অন্য দেশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির কথা ভাবছেন বা আশা করছেন ভারত শীঘ্রই তাদের সিদ্ধান্ত বদলাবে। দেখা যাক কী হয়। তবে আপনি যে পেঁয়াজকে মসলা বললেন, সব বাঙালি কি আপনার সাথে একমত হবে? অনেকে তো বলেন পেঁয়াজ শস্য, মসলা না!
ছবির উৎস, Barcroft Media
লক ডাউনের সময় মতিঝিল: ঢাকা বিশদ পরিকল্পনা কাজ করবে কি?
একটি অনুরোধ করে লিখেছেন ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম:
''আমি আপনাদের কাছে একটি অনুরোধ করবো যা হলো, ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অথবা Detailed Area Plan (DAP) নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করুন। এই প্ল্যানের ভবিষ্যৎ কী এবং এরকম প্ল্যান অতীতে কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে। যে প্ল্যানটা তৈরি করা হয়েছে ওই প্ল্যানটা কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য, সাধারণ জনগণ কীভাবে বেনিফিটেড অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
''একটা খসড়া প্ল্যান রাজউক অনলাইনে পাবলিশ করেছে এবং কারো কোন অভিযোগ থাকলে ওই প্ল্যান এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর জন্য চৌঠা নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আপনারা সাংবাদিক আপনাদের প্রতিবেদন অনেক সুন্দর হয় । আপনাদের ভিডিও প্রতিবেদনগুলো রেগুলার দেখে থাকি এবং মনে মনে ভাবি কেন আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো এত সুন্দর প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে না।''
আমাদের কাজের প্রশংসা করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মি. ইসলাম। ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা নিয়ে আমরা অতীতে কাজ করেছি, তবে এখন আরেকটু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কী কী সমস্যা হয় আর সেগুলো কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
আরেকটি অনুরোধ করে লিখেছেন ঢাকার কাকরাইল থেকে শেখ মাহফুজুল বাসার:
''বিবিসি বাংলা বিভাগকে অনুরোধ করছি বাংলাদেশের সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষে স্কুলের বেতন আংশিক মওকুফের জন্য একটি যুগোপযোগী প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য। অর্থাৎ, এ বছর বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের বেতন যাতে ১০০% না নেয়া হয়। করোনা কালে দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
''এ সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনেক রকম খরচ করার প্রয়োজন হয়নি। যেমন বিদ্যুৎ বিল, ষ্টেশনারি, মিটিং- আপ্যায়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণ-বেক্ষণ খরচ করার তেমন প্রয়োজন হয়নি। তাই সরকার যাতে সব ধরনের স্কুল/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে ১০০% টিউশন ফি আদায় না করে ৫০% - ৬০% বেতন আদায় করে ছাত্র-ছাত্রীদের পরবর্তী শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ করে দেয়।''
আমরা করোনাভাইরাস মহামারির ফলে শিক্ষা খাতে জটিলতা, বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন করেছি। কিন্তু আগামী শিক্ষা বছরের বেতনের বিষয়টি নিয়ে কিছু করা হয়নি। তবে এখানে আমাদের অবশ্যই শিক্ষকদের বেতনের কথাটা মাথায় রাখতে হবে। স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকদের বেতন নিশ্চয়ই দেয়া হয়েছিল? তাছাড়া, নিরপেক্ষতার স্বার্থে আমরা কোন দাবিকে সমর্থন করে প্রতিবেদন প্রচার করতে পারি না। কিন্তু দাবির পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তিগুলো ব্যাখ্যা করে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন অবশ্যই করা যায়।
এবারে ছোট একটি অভিযোগ, লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে তাপস প্রামাণিক:
''আপনাদের ফেসবুক পেজে ইদানিং একটি বিষয় খুবই বেশি চোখে পড়ছে। ফেসবুকে প্রকাশিত খবরের নিচে কমেন্ট বক্সের কমেন্টগুলির অধিকাংশ অত্যন্ত অশ্লীল, বিদ্বেষমূলক, কুরুচি সম্পন্ন এবং কখনো কখনো হিংসাত্মক। যেগুলো শ্রোতা-দর্শকই করে থাকেন। বিবিসির মত প্লাটফর্মে এগুলি নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।''
আমি আপনার সাথে একমত মি. প্রামাণিক যে, এ'ধরনের অশ্লীল এবং বিদ্বেষমূলক কমেন্ট গ্রহণযোগ্য না। আমরা অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এ'রকম কুরুচি সম্পন্ন আচরণ থেকে বিরত রাখার জন্য কিন্তু সফল হতে আরো চেষ্টা করতে হবে। আমরা কাওকে নিষিদ্ধ করতে চাই না বা মুক্ত মতামত প্রকাশ করার অধিকারেও হস্তক্ষেপ করতে চাই না, কিন্তু হিংসাত্মক বা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ডিলিট করা ছাড়া আমাদের কাছে কোন রাস্তা খোলা থাকছে না।
বিবিসি বাংলাকে নিয়ে ছোট একটি প্রশ্ন করেছেন খুলনা থেকে মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম:
''প্রযুক্তির বিকাশ,তারুণ্যের ট্রেন্ডিং এর সাথে মিলিয়ে আজকের দিনে বিবিসি বাংলার আইডেন্টিটি কী- ভার্চুয়াল মিডিয়া, টিভি না রেডিও?''
আজকের দিনে শুধু মাত্র একটি প্লাটফর্মে নির্ভর করা যায় না মি. ইসলাম। আজকের দিনের মিডিয়া হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া, মাল্টি প্লাটফর্ম। আমাদের আইডেন্টিটি হচ্ছে তাই, একটি মাল্টি প্লাটফর্ম মিডিয়া।