কৃষি: বিদেশে জমি কিনে 'কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং' করতে চায় বাংলাদেশ, কতটা সম্ভব?

  • রাকিব হাসনাত
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
সুদানে কৃষিকাজ

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

সুদানে কৃষিকাজ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন বিদেশে কৃষি জমি নেয়া এবং দেশ থেকে সেখানে শ্রমিক নিয়ে চাষাবাদের সুযোগ তৈরির জন্য সরকার চেষ্টা শুরু করেছে।

ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে 'কন্ট্রাক্ট ফার্মিং অ্যান্ড জব অপরচুনিটি ফর বাংলাদেশ অ্যাব্রোড' বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বিদেশে জমি কিনে চাষাবাদ বা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর উপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ।

মি. মসিহ সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং ওআইসিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আফ্রিকার সুদানেরও দায়িত্বে ছিলেন।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন বিদেশে বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে জমি কিনে চাষাবাদ করতে পারলে এটি খাদ্য নিরাপত্তায় যেমন ভূমিকা রাখবে তেমনি বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানও তৈরি করবে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

কেনিয়ার একটি ধান ক্ষেত পোকামুক্ত রাখতে জাল পাতা হচ্ছে

কিন্তু কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বলতে কি বোঝানো হচ্ছে

রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বিবিসিকে বলেন সরকার উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশে কৃষি জমি কিনবে এবং পরে বাংলাদেশ থেকেই শ্রমিকরা গিয়ে সেখানে কাজ করবে ও ফসল ফলাবে।

"এটি সরকার সরাসরি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ক্রয় করতে পারে। আর এ জন্য আফ্রিকার দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি উপযোগী। কারণ তাদের প্রচুর কৃষিজমি অনাবাদী পরে আছে। দেশগুলোতে অভাবও অনেক। সুতরাং আমরা জমি নিয়ে চাষাবাদ করলে তারাও কম মূল্যে কিনতে পারবে আবার আমাদেরও কর্মসংস্থান হলো। আবার সেখানকার উৎপাদিত ফসল প্রয়োজনমতো বাংলাদেশেও আনা যাবে," মিস্টার মসিহ বলছিলেন।

তিনি বলেন ২০১০ সালে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো সরকারের তরফ থেকে এবং একটি টিম বিভিন্ন দেশ সফরও করেছিলো কিন্তু পরে আর তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

"নানা দিক থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে আমাদের কিছু মিল আছে। সেখানে প্রচুর ভারতীয় ও পাকিস্তানী আছে যা বাংলাদেশিদের জন্য সহজ পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। আফ্রিকার প্রচুর জমির পাশাপাশি পানি আছে। আবহাওয়াও আমাদের সাথে মিল আছে। এসব মিলিয়ে চিন্তা করলে বাংলাদেশের জন্য দারুণ সুযোগ অপেক্ষা করছে," বলছিলেন মি. মসিহ।

তিনি জানান কিছু বাংলাদেশি এখনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আফ্রিকার নানা দেশে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি লিজ নিয়ে কাজ করছে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

উগান্ডায় ধান চাষ

সরকার সুযোগ খুঁজছে, বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

২০১২ সালে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে নিজের সফরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে সাড়ে ৫ গুণ বড়, কিন্তু ফসল ফলে না এবং যুদ্ধের কারণে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে তারা।

তিনি বলেন, "সেখানে আমাদের দেশের মতো বৃষ্টি হয় ও মাটি উর্বর। আমি সেখানকার প্রেসিডেন্টকে বলেছিলাম আপনার জমি আমাদের দিন, আমরা কৃষক আনবো যারা এখানে ফসল ফলাবে। জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন দশ হাজার লোকের জন্য জমি বর্গা দিতে রাজি আছেন তারা। কিন্তু তারপর আর বিষয়টি এগোয়নি"।

তিনি জানান যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তারা অনেকগুলো দেশে গেছে কৃষিকাজ দেখার জন্য কিন্তু সেগুলোও বেশি অগ্রসর হয়নি।

"এখন আমাদের সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। কৃষি জমি নিতে হবে। নিজেদের লোক সেখানে নিতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে সেই সুযোগ তৈরি করা যায়। সুদানের সাথে আলাপ করেছি। কেনিয়া জমি দেবে এমন প্রস্তাব আসছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কোনো টাকাও লাগবে না।"

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

চাষাবাদের ক্ষেত্রে জমি, পানি ও আবহাওয়াগত মিল আছে আফ্রিকা ও বাংলাদেশের

১০ বছর আগে তানজানিয়ায় শুরু করেছে বাংলাদেশী একটি সংস্থা

কর্মকর্তারা বলেছেন সরকারি উদ্যোগে না হলেও বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশীরা ইতোমধ্যেই আফ্রিকার নানা দেশে কাজ শুরু করেছেন।

বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান, ভুট্টা ও ডালের আবাদ শুরু করে ২০১১ সালে।

তখন যেই চুক্তি হয়েছিলো দু পক্ষের মধ্যে তাতে সেখানে প্রয়োজনীয় শ্রমিকের ৭০ শতাংশ বাংলাদেশ থেকেই নেয়ার কথা ছিলো।

এর আগের বছর থেকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা বিষয়ক অনুবিভাগ মহাদেশটির বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ পতিত জমিতে আবাদের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শুরু করে।

কর্মকর্তারা বলছেন, যথাযথ উদ্যোগ নিলে কেনিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া, সেনেগাল, লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট এবং গানার মতো দেশগুলোতেও কৃষিজমি নিয়ে চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

তবে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলছেন, সরকারিভাবে কিছু করার বিষয়টি এখনো ধারণা পর্যায়ে আছে।

"তবে সরকার ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে, এটি বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে বিরাট সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।