ভাইরাল ভিডিও: নির্যাতন করে, ইয়াবা গুঁজে দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করলেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক

  • রাকিব হাসনাত
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
হাতকড়া পরা আসামী

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

প্রতিকী ছবি

**সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের কিছু কিছু অংশ আপনার কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে

বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বরিশালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কার্যালয়ের ভেতরেই এক যুবককে নির্যাতন করছেন ওই অফিসেরই পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

হাতকড়া পড়িয়ে মেঝেতে ফেলে লাঠি দিয়ে প্রহার করে শেষ পর্যন্ত ওই যুবকের হাতে ইয়াবা গুঁজে দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের পর ওই যুবক বেশ কিছুদিন জেলও খেটেছেন।

দেশটির মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলছেন তারা ঘটনাটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন তারা।

"আসামি ধরে তদন্ত বা জিজ্ঞাসাবাদের সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। কাউকে মারধর করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। তদন্ত করে দেখি আসলে কী ঘটেছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মিস্টার জব্বার বলেন তিনিএ ব্যাপারে বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় পরিচালকের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। এজন্য তিনি বিভাগীয় পরিচালককে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়েছেন।

"তবে প্রাথমিকভাবে যেটুকু জানা গেছে যে আটক হওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে আগেও তিনটি মামলা ছিলো। কিন্তু সেজন্য কাউকে মারধরের সুযোগ নেই। তথ্য আসুক আমরা দেখে সিদ্ধান্ত নিবো," বলছিলেন তিনি।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

ইয়াবা খোঁজে প্রায়ই পুলিশ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালায়

ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হাতকড়া পড়ানো এক যুবককে মেঝেতে ফেলে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন একজন কর্মকর্তা।

এক পর্যায়ে পা দিয়ে মাথা চেপে ধরে পেটানো হয় তাকে এবং এরপর হাতকড়া খুলে ওই যুবকের হাতে ইয়াবা দিয়ে স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য বলা হয়।

ভিডিওতে নির্যাতিত যুবক শেষ পর্যন্ত পানি পান করতেও চাইলেও তাও দেয়া হয়নি।

জানা গেছে কয়েকদিন আগে এই ভিডিওটি আগে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে আসে এবং এরপর এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

তবে ঘটনাটি বেশ কয়েকমাস আগের।

কর্মকর্তারা বলছেন গত ২২শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর এক যুবককে আটকের পর তার কাছ থেকে পাঁচটি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে বলে অভিযোগ করে কাউনিয়া থানায় মামলা করেন বরিশাল মাদক অফিসের একজন কর্মকর্তা।

এই মামলাতেই আটক হওয়ার পর সতের দিন হাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হন ওই যুবক। তার বাবা-মা দুজনেই পেশায় দিনমজুর।

তবে তার আগে নির্যাতনের মুখে তিনি ইয়াবা রাখার কথা স্বীকার করেন বলে ভিডিওতে দেখা যায়।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

এক যুবককে নির্যাতন করে তার হাতে ইয়াবা গুঁজে দেয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে

মাদক গুঁজে ফাঁসানোর অভিযোগ বাড়ছে

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে মাদক গুঁজে লোকজনকে ফাঁসানোর চেষ্টার বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে ।

সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর অভিযোগ করেছেন যে, তাকে বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার সময় একটি লাল ট্যাবলেটের প্যাকেট ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র তার বইয়ের ফাঁকে গুজে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিলো।

গত কয়েক বছর ধরেই এ ধরণের অভিযোগ বাড়ছে।

২০১৮ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে এমন এক ঘটনায় এক নারী সাতজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন যেখানে তিনি তার ছেলের পকেটে ইয়াবা ঢুকয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ আনেন।

২০১৯ সালের নভেম্বরে পকেটে ইয়াবা দিয়ে এক ব্যক্তিকে আটক চেষ্টার অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্য ও তাদের একজন সোর্সকে আটক করা হয়েছিলো। তখন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিলো পুলিশ বিভাগ।

যদিও পুলিশ বিভাগ থেকে বরাবরই এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করে এগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন তারা সাধারণত মামলা করে আসামিদের আদালতে পাঠানো ও সাক্ষ্য দেয়ার কাজ করেন।

"এর বাইরে কাউকে এভাবে আটকে মারধর করে নির্যাতনের সুযোগ নেই," বলছিলেন একজন কর্মকর্তা।