করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনে হঠাৎ সমস্যা: পেছনের কারণ কী?

ছবির উৎস, Getty Images
ভারতে উ'পাদিত এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সারা পৃথিবীতে যাচ্ছে
ইউরোপের যে দেশটিতে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি চলছিল - সেই যুক্তরাজ্য কয়েকদিন আগে ঘোষণা করে যে এপ্রিল মাসে তাদের টিকার সরবরাহ কমে যাবে।
এতে ব্রিটেনে টিকা দেবার গতিও ঝিমিয়ে পড়তে পারে - এমন আশংকাও দেখা দেয়।
কয়েকদিন পর জানা যায়, এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো ভারত থেকে টিকার সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়া।
ভারত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় করোনাভাইরাস টিকা উৎপাদক।
টিকার ঘাটতির সম্ভাবনার কারণ কী?
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট - তৈরি করছে কোটি কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকা ও নোভাভ্যাক্সের টিকা।
শুধু এটিই নয় - আরো অনেকগুলো ভারতীয় কোম্পানি বিভিন্ন দেশে উদ্ভাবিত টিকা তৈরির চুক্তি করেছে - যেমন ভারত বায়োটেক ( কোভ্যক্সিন ও কোরাভ্যাক্স), বায়োলজিক্যাল ই (জনসন এ্যান্ড জনসন), জাইডাস কাডিলা (জাইকোভ-ডি) হেটেরো বায়োফার্মা এবং ড. রেড্ডি'স ল্যাব (স্পুটনিক ভি)।
কিন্তু ভারত সম্প্রতি বলছে, ইতোমধ্যেই যে রপ্তানির অর্ডারগুলো নেয়া হয়েছে - তা প্রতিশ্রুতিমত সরবরাহ করতে গিয়ে তারা সমস্যায় পড়েছে।
আরও পড়তে পারেন:
ছবির উৎস, AFP
টিকা তৈরি হচ্ছে সিরাম ইনস্টিটিউটে: এর জন্য বিশেষ ধরণের উপাদান প্রয়োজন হয়
সিরাম ইনস্টিটিউট বলছে, যুক্তরাজ্যে তাদের যে টিকার চালান পাঠানোর কথা তা হয়তো স্থগিত করতে হতে পারে। নেপালের জন্য একটি বড় চালান ইতোমধ্যেই স্থগিত করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউট বলছে, এর বড় কারণ হলো কাঁচামালের ঘাটতি।
যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাই কি আসল কারণ?
সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদার পুনাওয়ালা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এমন কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যা টিকা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়, যেমন - বিশেষ ধরণের ব্যাগ ও ফিল্টার।
ইনস্টিটিউট বলছে, তারা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থ, একবার-ব্যবহার্য টিউব এবং সেল-কালচারের মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগানো হয় - এমন কিছু টিকার কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
ছবির উৎস, EPA
ভারতের ব্যাঙ্গালোরে টিকা সংরক্ষণের জন্য নির্মীয়মাণ একটি কেন্দ্র
এসব কাঁচামাল টিকা তৈরির অত্যাবশ্যকীয় উপাদান এবং এর অব্যাহত সরবরাহ নিশ্চিত করতে সিরাম ইনস্টিটিউট ভারত সরকারকে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ করে এক চিঠি দিয়েছে।
একই ধরণের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বায়োলজিক্যাল ই নামে আরেকটি ভারতীয় টিকা নির্মাতা।
উৎপাদন বাড়াতে পারেনি সিরাম ইন্সটিটিউট
ভারতে এখন দুটি ভ্যাকসিন উৎপাদিত হচ্ছে - একটি হলো অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এবং কোভ্যাক্সিন।
সেখানকার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো নানাভাবে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে টিকা উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছে।
জানুয়ারি মাসে সিরাম ইনস্টিটিউট বলেছিল, তারা প্রতিমাসে ৬ থেকে ৭ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করছে, এবং তা আগামী কয়েক মাসে বাড়িয়ে ১০ কোটিতে উন্নীত করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু অতি সম্প্রতি তারা জানায়, এখনো তারা ৬-৭ কোটি ডোজ টিকাই উৎপাদন করছে - এ সংখ্যা বাড়ে নি।
যুক্তরাষ্ট্র টিকার কাঁচামালের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে কেন?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার প্রশাসনকে এক নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা টিকা উৎপাদনের কোন কোন উপাদানে সম্ভাব্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে - তা চিহ্নিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ডিফেন্স প্রোডাকশন এ্যাক্ট বা ডিপিএ নামে ১৯৫০-এর দশকের একটি আইন আছে - যা জরুরী পরিস্থিতিতে কিছু পণ্য রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার ক্ষমতা দিয়েছে প্রেসিডেন্টকে ।
ছবির উৎস, AFP
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ায় এর চাহিদাও বেড়ে গেছে
বাইডেন প্রশাসন বলেছে, মার্কিন ভ্যাকসিন উৎপাদকরা যাতে কিছু পণ্য পাবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায় - সে জন্য এই ডিপিএ ব্যবহার করা হবে।
এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বের বিভিন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী কোম্পানি হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে 'এ ধরণের বিধিনিষেধ বিশ্বব্যাপি টিকা উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।'
লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা সরবরাহ বিশেষজ্ঞ ড . সারা শিফলিং বলছেন, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল।
তিনি বলছেন, এখানে কোন বিশেষ পণ্যের বিশ্বব্যাপি চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেলে সরবরাহের ঘাটতি এড়ানো কঠিন।