বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে, মানবজাতির জন্য জাতিসংঘের 'লাল সংকেত'

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পৃথিবীতে এখন নানা জায়গায় দাবানল হচ্ছে

ছবির উৎস, EPA

ছবির ক্যাপশান,

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পৃথিবীতে এখন নানা জায়গায় দাবানল হচ্ছে

বিশ্বে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দ্রুতগতিতে বাড়ছে বলে সতর্ক করে দিয়ে জাতিসংঘ বলেছে এজন্য নিঃসন্দেহে দায়ী মানুষের কর্মকাণ্ড।

জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার কমিটি বা আইপিসিসি'র এক গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টে আজ বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন যে চরম তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টিপাত, খরা বা সাইক্লোন হতে দেখা যাচ্ছে - তাতে জলবায়ুর এই পরিবর্তন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

শিল্পযুগের আগে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যা ছিল, আগামী দু'হাজার তিরিশ সালের মধ্যে সেই তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে।

এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এর আগে যতটা সময় লাগবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, এখন বলা হচ্ছে তার দশ বছর আগেই সেটা ঘটে যাবে।

বিবিসি বাংলায় সম্পর্কিত খবর:

ছবির উৎস, Reuters

ছবির ক্যাপশান,

ইউরোপে সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টিপাতে জার্মানি সহ নানা দেশে নজিরবিহীন বন্যা হয়

জাতিসংঘ বলছে, এর ফলে সারা বিশ্বে চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়েই এই পরিবর্তনের গতি কমানো সম্ভব।

মার্কিন প্রেসিডেন্টে জলবায়ু সম্পর্কিত বিশেষ দূত জন কেরি বলেছেন, এখন বিশ্বের জন্য প্রকৃত ও জোরালো পদক্ষেপ নেবার সময় এসে গেছে।

ছবির উৎস, Justin Sullivan

ছবির ক্যাপশান,

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় খরার জন্য লেক ওরোভিলের পানি শুকিয়ে গেছে

আইপিসিসির রিপোর্ট মূল যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে তা হচ্ছে:

  • ২০১১-২০২০ এই এক দশক সময়কালে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ এই সময়কালের চেয়ে ১.০৯ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে ।
  • ১৮৫০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত থাকা রেকর্ড অনুযায়ী গত পাঁচ বছর ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম।
  • ১৯০১-১৯৭১ এই সময়কালের সাথে তুলনায় সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির সাম্প্রতিক হার প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
  • ১৯৯০এর দশক থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপি হিমবাহগুলো গলে যাওয়া, এবং আর্কটিকে সামুদ্রিক বরফস্তর কমে যাওয়া - এ দুটির পেছনে মানুষের কর্মকাণ্ডই যে দায়ী, এমন সম্ভাবনা খুবই জোরালো (৯০%)।
  • এটা এখন 'প্রায় নিশ্চিত যে ১৯৫০এর দশকের পর থেকে অতিরিক্ত গরম পড়া, এবং তাপপ্রবাহ অনেক বেশি ঘন ঘন ঘটছে। অন্যদিকে ঠাণ্ডা পড়ার তীব্রতা কমে যাচ্ছে এবং তা ততটা ঘন ঘন হচ্ছে না।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

জাপানে প্রচণ্ড গরম থেকে রেহাই পেতে অনেকে স্প্রে ব্যবহার করছেন

রিপোর্টে জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কর্মকান্ড পরিবেশের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে তা মানবসমাজের জন্য একটি 'লাল সংকেত।'

রিপোর্টের প্রণেতারা আরো বলছেন, এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাণ ২ মিটারের কাছাকাছি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা এখন আর উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

এশিয়াসহ বিভিন্ন মহাদেশে এখন নিয়মিত গুরুতর বন্যা হচ্ছে

রিপোর্টে বলা হয়, অতীতে এবং ভবিষ্যতে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটবে - তার ফলে জলবায়ুতে এমন সব পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে যা আর ঠেকানো যাবে না। এর প্রভাবে কয়েক শতাব্দী বা সহস্রাব্দ ধরে পৃথিবীর মহাসাগর, জমে থাকা বরফের স্তর ও সাগরের পানির স্তরের ওপর এর প্রভাব দেখা যাবে।

তবে রিপোর্টে এ কথাও বলা হয়েছে যে - কার্বন ডাইঅক্সাইড ও মিথেনের মত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বড় আকারে কমাতে পারলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে হয়তো স্থিতিশীল অবস্থায় আনা যাবে - এমন নতুন আশাবাদও সৃষ্টি হয়েছে।

বিবিসি বাংলায় আরো খবর: