ব্রিটেনের করোনাভাইরাস ঝুঁকির লিস্টে ভারত কেন 'কমলা' আর পাকিস্তান কেন 'লাল?'- ক্ষিপ্ত ইসলামাবাদ
- শাকিল আনোয়ার
- বিবিসি বাংলা

ছবির উৎস, Twitter
কোয়ারেন্টিন সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হন নাজ শাহের মত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ক'জন ব্রিটিশ এমপি
ব্রিটেন তাদের ‘রেড লিস্ট‘ অর্থাৎ কোভিড নিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকা থেকে সম্প্রতি ভারতকে সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানকে রেখে দেওয়ায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিদের পর এখন ইসলামাবাদ পক্ষ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি আজ (সোমবার) – তার ভাষায় - “ভারত-পন্থী প্রভাবিত“ ব্রিটিশ সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
ব্রিটেনে ভ্রমণের লাল তালিকা থেকে গত সপ্তাহে ভারতকে সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানকে রেখে দেওয়ার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিরা বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে সরকারের ওপর চড়াও হয়।
চাপে পড়ে ব্রিটেনের সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে পাকিস্তানের কাছ থেকে টিকা এবং সংক্রমণের সর্বশেষ তথ্য তাদের দেওয়া হয়নি।
সম্পর্কিত আরো খবর:
ছবির উৎস, Getty images
'ভারত-পন্থী প্রভাবিত ব্রিটিশ সরকার ভারতকে অ্যাম্বার লিস্টে ঢোকালো কিন্তু পাকিস্তানকে লাল তালিকায় রেখে দিল' - পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি
কিন্তু পাকিস্তানের মন্ত্রী শিরিন মাজারি আজ (সোমবার) বলেন, ব্রিটিশ সরকার “খোঁড়া যুক্তি“ দেখিয়ে পাকিস্তানকে রেড-লিস্টে রেখে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানের কাছ থেকে টিকা বা সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কিত কোনো তথ্য কখনই চায়নি।
টুইটারে তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানি মন্ত্রী বলেন, “সারা বিশ্ব জানে কোভিড প্যানডেমিক মোকাবেলায় ভারতের ভূমিকা কতটা সর্বনেশে ছিল। অথচ ভারত-পন্থী প্রভাবিত ব্রিটিশ সরকার ভারতকে অ্যাম্বার লিস্টে ঢোকালো কিন্তু পাকিস্তানকে লাল তালিকায় রেখে দিল। এখন বিরোধী এমপিদের চাপে সরকার বলছে পাকিস্তানে তাদেরকে তথ্য দেয়নি।“
মন্ত্রী শিরিন মাজারি বলেন, কোভিড বিষয়ে পাকিস্তানের সমস্ত তথ্য অনলাইনে রয়েছে এবং যে কেউ তা যখন কখন দেখতে পারে। “(পাকিস্তানের) ন্যাশনাল কম্যান্ড অ্যান্ড অপারেশন সেন্টারের সমস্ত তথ্য তাদের ডেটাবেজে রয়েছে এবং প্রতিদিন তা আপডেট করা হয়।“
ছবির উৎস, Twitter
ইয়াসমিন কোরেশি এমপির টুইট
“এর আগে ব্রিটিশ সরকার আরেকটি যুক্তি হাজির করেছিল যে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের চেয়ে পাকিস্তান থেকে আসা যাত্রীদের ওপর কোভিড পরীক্ষায় উঁচু হারে পজিটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে! গোলপোস্ট বদলানো হচ্ছে!“ স্পষ্টতই ক্ষোভের পাশাপাশি এভাবে শ্লেষ প্রকাশ করতেও ছাড়েননি পাকিস্তানি মন্ত্রী।
ব্রিটেনের কোয়ানেন্টিন ‘ট্রাফিক লাইট‘
দেশের বাইরে থেকে কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে ব্রিটিশ সরকার বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কিত একটি “ট্রাফিক লাইট“ পদ্ধতি অনুসরণে করছে - যেখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে লাল তালিকায় রাখা হয়েছে।
এসব দেশ থেকে কেউ ব্রিটেনে এলে তাদের নিজ খরচে ১০ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়, এবং এই দশদিনের মধ্যে কমপক্ষে দুবার নিজের খরচে কোভিড পরীক্ষা করাতে হয়।
অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অ্যাম্বার তালিকা অর্থাৎ কমলা তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব দেশে থেকে আসা যাত্রীদের বাড়িতে পাঁচদিন কোয়ারেন্টিন করলেই চলে।
গ্রিন লিস্ট বা সবুজ তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে কেউ এলে তাদের কোয়ারেন্টিন করা লাগেনা যদি তাদের টিকা দেওয়া থাকে।
ছবির উৎস, Getty images
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল রার দাবিতে লন্ডনে বিক্ষোভ করছেন পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন
এপ্রিলে ব্রিটিশ সরকার উপমহাদেশের তিনটি দেশকেই অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে লাল তালিকায় ঢোকায়।
কিন্তু রোববার থেকে বাহরাইন, কাতার এবং ইউএই‘র সাথে ভারতকে লাল তালিকা থেকে সরিয়ে কমলা তালিকায় নেওয়া হলেও পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে লাল তালিকায় রেখে দেওয়া হয়।
ক্ষিপ্ত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপিরা
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সরকারের কোয়ারেন্টিন সম্পর্কিত এই সিদ্ধান্তের পরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বেশ কজন এমপি।
তাদের সবারই বক্তব্য - ভারতের কোভিড পরিস্থিতি পাকিস্তানের চেয়ে এখনও অনেক খারাপ হওয়া সত্ত্বেও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় ভারতকে সুবিধা দেয়া হয়েছে।
উত্তর ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড শহরের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপি নাজ শাহ সরকারের সিদ্ধান্তে “বিস্ময়“ প্রকাশ করে বলেন, কোয়ারেন্টিনের জন্য ট্রাফিক লাইট পদ্ধতির ব্যবস্থাপনায় ব্রিটেন আবারও “আহাম্মকি আচরণ“ করলো।
বিরোধী লেবার পার্টির এই এমপি এক বিবৃতিতে বলেন, “এর আগও বার এই সরকার বিজ্ঞানকে কলা দেখিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনার পথ নিয়ে কোভিড ব্যবস্থাপনাকে বিপদগ্রস্ত করেছে। তারা অনেকদিন পর্যন্ত ভারতকে রেড-লিস্টে ঢোকায়নি।“ যার ফলে, তিনি বলেন, ব্রিটেনে কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে।
বোল্টন শহর থেকে নির্বাচিত আরেক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপি ইয়াসমিন কোরেশি বলেন, “পাকিস্তানে বিপজ্জনক কোনো ভ্যারিয়েন্ট না থাকা স্বত্বেও“ দেশটিকে লাল তালিকায় রেখে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক স্বার্থের বিবেচনায় ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে...এটা পাকিস্তানের প্রতি নগ্ন বৈষম্য।“
ছবির উৎস, Twitter
পাকিস্তানের মন্ত্রী শিরিন মাজারির টুইট
পাকিস্তানি অধ্যুষিত লুটন নর্থ আসনের চীনা বংশোদ্ভূত এমপি সারা ওয়েন বলেন - সরকারের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের যুক্তি তিনি কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না।
“আপনি যদি তথ্য পরিসংখ্যানের দিকে তাকান তাহলে ব্রিটিশ মন্ত্রীদের ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন ভারত অ্যাম্বার তালিকায় এবং পাকিস্তান এবং অন্য আরো কিছু দেশ লাল তালিকায়।“
পাকিস্তানের দৈনিক ডনের এক রিপোর্ট বলছে,. পাকিস্তান বংশোদ্ভূত বেশ কজন ব্রিটিশ এমপি শুক্রবার পাকিস্তানের পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী আসাদ উমর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারি ড. ফয়সল সুলতানের সাথে শুক্রবার এক বৈঠক করেন।
বৈঠকে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা ব্রিটিশ ঐ এমপিদের জানান, সমস্ত সর্বশেষ তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সাইট ছাড়াও টুইটার ইউটিউবেও রয়েছে যা ব্রিটিশ সরকার চাইলে সহজেই দেখতে পারে।বৈঠকের পর পাকিস্তানের পরিকল্পনা মন্ত্রী এক টুইট করে বলেন, কোভিড বিষয়ক সব তথ্য ব্রিটিশ এমপিদের দেওয়া হয়েছে।
“আমরা ব্রিটিশ সরকারকেও তা দেব এবং বোঝানোর চেষ্টা করবো যে লাল তালিকার সিদ্ধান্ত যেন রাজনৈতিক বিবেচনায় না হয়ে বিজ্ঞানের বিবেচনায় নেওয়া হয়।“
বাংলাদেশকে ব্রিটেনের লাল তালিকা থেকে প্রত্যাহারের জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিদের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ সরকারের সাথে দেন-দরবারের কোনো তৎপরতা এখনও চোখে পড়েনি।