আফগানিস্তান: তালেবান দেশ থেকে বিদেশিদের বহিষ্কারকে ‌গোটা জাতির জন্য 'গর্বের মুহূর্ত' বলছে

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।

আফগানিস্তানে বিজয়ের পর তালেবান বাদবাকি বিশ্বকে আশ্বস্ত করে বলেছে যে সে দেশ কোন ধরণের সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের জন্য ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।

কাবুলে এই গোষ্ঠীর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ১৯৯০য়ের দশকের মতো আফগানিস্তানে নারীদের আবার দমন করা হবে বলে যে আশংকা তৈরি হয়েছে, তাও দূর করার চেষ্টা করেন।

শরিয়া আইন মেনে চললে মেয়েরা লেখাপড়া ও চাকরি করতে পারবে এবং সমাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

‌'দেশের মুক্তি ... গর্বের মুহূর্ত'

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

সংবাদ সম্মেলনে তালেবান নেতৃত্ব।

আরও পড়তে পারেন:

কাবুলে এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান যে আফগানিস্তানে তাদের লড়াই শেষ হয়েছে।

"বিশ বছরের সংগ্রামের পর আমরা (দেশকে) মুক্ত করেছি এবং বিদেশিদের বহিষ্কার করেছি," তিনি বলেন, "গোটা জাতির জন্য এটা গর্বের মুহূর্ত।"

প্রতিপক্ষের প্রতি আপাত শান্তি প্রস্তাব দিয়ে মি. জাবিউল্লাহ বলেন যে 'আফগানিস্তান যাতে একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র বা সংঘাতের দেশ না হয় তালেবান সেটা নিশ্চিত করতে চায়।

"আমাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছে, তাদের সবাইকে আমরা ক্ষমা করেছি," তিনি বলেন, "আমরা শত্রুতার অবসান চাই … আমরা ঘরে ও বাইরে কোথাও কোন শত্রু চাই না।"

নতুন সরকারের রূপরেখা

ছবির উৎস, Reuters

আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালেবানের নতুন সরকারের কাঠামো সম্পর্কে কোন তথ্য না দিয়েই তিনি জানান, সরকারে তালেবানের যোদ্ধা, সাধারণ জনগণ এবং সবগুলো পক্ষ ও উপদলের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে।

তালেবানের এই মুখপাত্র বলেন, "সরকার গঠনের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব এবং দেশের জনগণকে জানাব দেশ কোন আইনে চলবে।

"আমি স্পষ্ট বলতে চাই সরকার গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কাজ সম্পূর্ণ হলে আমরা এ বিষয়ে ঘোষণা করবো।"

নারী অধিকার‍ নিয়ে কী বলছে তালেবান?

পুরো সংবাদ সম্মেলন জুড়েই তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ আফগানিস্তানের নারীদের শিক্ষা, কর্ম এবং তাদের অধিকারের প্রশ্নগুলোতে ভাসাভাসা জবাব দেন।

"আমরা নারীদের বাইরে কাজ করার এবং পড়াশোনার অনুমতি দেব," তিনি বলেন, "তবে সেটা হতে হবে আমাদের কাঠামোর মধ্যে।"

ভিন্ন দেশের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, ভিন্ন নিয়ম, ভিন্ন বিধানের কথা উল্লেখ করে মি. মুজাহিদ বলেন, আফগানদেরও নিজস্ব মূল্যবোধের নিরীখে তাদের নিজস্ব আইন এবং বিধান আছে।

তবে তিনি বলেন, "শরিয়া আইনের অধীনে নারীর অধিকার রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"

"নারীরা আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েকে আমরা এই আশ্বাস দিতে চাই যে নারীদের প্রতি কোন বৈষম্য করা হবে না।"

সম্পর্কিত খবর:

জঙ্গি রপ্তানি ঘটবে না

পশ্চিমা বিশ্বের একটি প্রধান শঙ্কার প্রসঙ্গ এই সংবাদ সম্মেলনে বার বার করে ফিরে আসে। আফগানিস্তান আল-কায়দা যোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার ঝুঁকি আছে কিনা, সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করলে মি. মুজাহিদ বলেন, "আফগানিস্তানের মাটি কারো বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না … আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমরা এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।"

তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অপহরণ ও হত্যার ঘটনা খবর প্রসঙ্গে তালেবানকে প্রশ্ন করা হলে তালেবান মুখপাত্র বলেন: "সারা দেশে পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় রয়েছে।"

"কেউ কাউকে অপহরণ করতে পারবে না। প্রত্যেকদিন আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করব।"

তিনি বলেন, আমরা চাই না কেউ দেশ ছেড়ে যাক। "সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কোনরকম শত্রুতা বা প্রতিশোধ নেয়া হবে না।"

যারা বিদেশিদের জন্য অনুবাদকের কাজ করেছে বা বিদেশিদের সাথে চুক্তিতে কাজ করেছে তাদের প্রতি ভবিষ্যত আচরণ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মি. মুজাহিদ বলেন: "কারোর প্রতি প্রতিশোধ নেয়া হবে না।"

"যারা এদেশে বড় হয়ে উঠেছেন তারা এদেশেরই সন্তান। আমরা চাই না তারা চলে যাক। তারা আমাদের সম্পদ।"

মি. মুজাহিদ আরও বলেন: "কেউ কারোর বাসার দরজায় টোকা মেরে জিজ্ঞেস করবে না 'আপনি কাদের সাথে কাজ করতেন?'"

তারা নিরাপদ থাকবে। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না, কাউকে হয়রানি করা হবে না বলে সংবাদ সেম্মলনে তালেবান মুখপাত্র আশ্বাস দেন।

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর: