বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অক্টোবরে খুলছে, তবে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি

  • কাদির কল্লোল
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
স্কুল, অনলাইনে ক্লাস, বাংলাদেশ।

ছবির উৎস, ফেরদৌসি রেজা চৌধুরী

ছবির ক্যাপশান,

স্বশরীরে স্কুলে যাওয়া যাচ্ছে না, এই শিশু মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনের ক্লাসে যুক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে পাবলিক এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১৫ই অক্টোবরের পর থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুলতে পারবে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর উর্ধ্বতনদের অংশগ্রহণে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে স্কুল কলেজ খোলার ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি এমাসের পর ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন:

গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে বা সরাসরি ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।

সতের মাস ধরে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে এখন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

সেই প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

স্কুল বন্ধ রয়েছে সতেরো মাস ধরে।

বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কোন শর্তে

বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিভিন্ন পক্ষ এবং বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে যে বৈঠক করেছেন, তাতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমিতির নেতৃবৃন্দও অংশ নিয়েছেন।

এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য ড: মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, ১৫ই অক্টোবরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আবাসিক হল এবং স্বশরীরে ক্লাস খুলে দিতে পারবে।

এই সিদ্ধান্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, মধ্য অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সবাইকে টিকা দেয়া নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে ১৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার একটি শর্ত রাখা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকেদের ৯০ শতাংশই টিকা নিয়েছেন।

তবে টিকার নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর হার অনেক কম। যদিও এই সময়ের মধ্যে তাদের টিকা নেয়া শেষ করা সম্ভব হবে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।

কিন্তু দেশে এমুহূর্তে টিকার জন্য তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় দুই কোটি মানুষ এখনও প্রথম ডোজ টিকা পাননি। সেখানে টিকার ঘাটতি রয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে জানা যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সবার টিকা নিশ্চিত করার প্রশ্নে কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের জন্য টিকা তাদের হাতে রয়েছে।

সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামার শর্ত কি শিথিল হচ্ছে?

টিকা দেয়ার বিষয়টির বাইরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশে নামার শর্তটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে রাখা হয়নি।

স্কুল কলেজ খোলার ব্যাপারেও এই শর্ত শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

স্কুল খোলা না খোলার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী সপ্তাহে আবারও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার কথা বলছে। (ফাইল ফটো)

বাংলাদেশের বাস্তবতায় সংক্রমণের হার দশ শতাংশ হলেই স্কুল কলেজ খোলা যায় কিনা-শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই প্রশ্নে সরকারের কারিগরি বা বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত চেয়েছে।

স্কুল খুলবে কবে

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ শে অগাস্টের পর ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু এখনও আঠারো বছরের নিচে এখন টিকা দেয়া যাচ্ছে না, সেজন্য স্কুল খোলার ক্ষেত্রে সংক্রমণের হারের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচ বছর থেকে বারো বছর বয়সী শিশুদের মাস্ক পরানো যাবে না।

এই বিষয়টিকেও স্কুল খোলার ক্ষেত্রে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

তবে সরকারের কারিগরি কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, শিশুরা স্কুলে মাস্কের বদলে ফেস শিল্ড ব্যবহার করতে পারে কিনা এবং শিশুরা তা মুখে রাখবে কিনা অথবা সেটা কতটা বাস্তবসম্মত- এসব প্রশ্নে তাদের আলোচনা হয়েছে।

এই বিষয়গুলোতে এবং সংক্রমণের হার দশ শতাংশে নামলে স্কুল খোলা যাবে কিনা- এখন এসব প্রশ্নে সরকারের কারিগরি কমিটি মতামত তৈরি করবে।

তার ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহের বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় আবার বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্কুলো খোলা না খোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

সরকারের কারিগরি কমিটির একজন সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া যেতে পারে।

কিন্তু তিনি মনে করেন, স্কুল খোলার ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার আরও কমতে হবে এবং কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক সকলেরই দায়িত্ব নিতে হবে।

"বাচ্চাদের নিয়েই আমরা সমস্যায় পড়েছি। এখনকার সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের স্কুল খুলে দিলে স্বাস্থ্যবিধি কতটা নিশ্চিত করা যাবে- সে বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হয়ে দাঁড়িয়েছে" বলেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

দেশে এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার পনেরো শতাংশের নিচে নেমেছে।

কিন্তু দোকানপাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং গণপরিবহণ সহ সবকিছুই এখন খোলা রয়েছে।

সেখানে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা নিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা বলেছেন, "লম্বা সময় ধরে স্কুল বন্ধ রাখার কারণে শিশুদের অনেকে পড়াশুনা করছে না। অনেকে অন্য অনেক বিষয়ে আসক্ত হয়েছে।"

তিনি মনে করেন, এখন স্কুল আর বন্ধ রাখা উচিত নয়।