আফগানিস্তান: কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পর বিদেশি সৈন্যসহ লোকজনকে সরিয়ে আনার কাজ শুরু

ছবির উৎস, Getty Images
হামলার পর ব্রিটিশ সেনাদের উপস্থিতি।
কাবুল বিমানবন্দরে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর সেখান থেকে বিদেশি নাগরিকসহ আফগানদের উদ্ধার করে আনার কাজ আবার শুরু হয়েছে।
দেড় সপ্তাহ আগে তালেবানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেওয়ার পর আফগানিস্তান থেকে পালাতে যারা হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছে তাদেরকে লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বোমা হামলা চালানো হয়।
বিমানবন্দরের বাইরে চালানো এই হামলায় ৯০ জন নিহত এবং আরো ১৫০ জন আহত হয়েছে বলে কাবুলের একজন ঊর্ধ্বতন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন কাবুলের হাসপাতালগুলো আহত লোকজনে উপচে পড়ছে। তাদের চিকিৎসা দিতে সারা রাত ধরে কাজ করেছে ডাক্তার ও নার্সরা। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর হাসপাতালের লোকবলও অনেক কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলছে নিহতদের মধ্যে রয়েছে তাদের ১৩ জন সৈন্য।
হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার কাবুল বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে তাদের নাগরিকদের বিমানবন্দর থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল।
ইসলামিক স্টেট গ্রুপের আফগানিস্তান শাখা আইএস-কে এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হামলাকারীদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আরো পড়তে পারেন:
ছবির উৎস, AFP via Getty Images
কাবুল বিমানবন্দরে হামলার পরের দৃশ্য।
হামলার পর শুক্রবার কাবুল বিমানবন্দর থেকে লোকজনকে উদ্ধার করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান পুনরায় শুরু হয়েছে। এজন্য তাদের হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। তালেবানের সাথে হওয়া সমঝোতা অনুসারে ৩১শে অগাস্টের মধ্যে বিদেশি সৈন্যদের সরিয়ে নিতে হবে।
বিমানবন্দরে হামলার ঘটনায় রিপাবলিকান পার্টির নেতারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করছেন।
সন্ত্রাস-বিরোধী একজন বিশেষজ্ঞ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলের একজন বিশেষ দূত ন্যাথান সেলস বলেছেন, আরো হামলা যাতে না হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের অনতিবিলম্বে কাবুল বিমানবন্দরের চারপাশের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে।
তিনি বলেন, "নিরাপত্তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য কোনো সভ্য দেশ তালেবানের ওপর আস্থা রাখবে সেটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।"
তিনি বলেন, ৩১শে অগাস্টের সময়সীমার ব্যাপারেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিন্তা করে দেখা দরকার।
"প্রত্যেক আমেরিকানকে আফগানিস্তান থেকে না আনা পর্যন্ত সেখানে আমাদের সামরিক উপস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে," বলেন তিনি।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, ব্রিটেনও কাবুল থেকে লোকজনকে উদ্ধারের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুরু করেছে। তিনি জানান, আজ শুক্রবার এক হাজারের মতো লোককে সরিয়ে আনা হতে পারে।
ছবির উৎস, Getty Images
বিস্ফোরণের পর পরই বিমানবন্দর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
তিনি জানান, বিমানে আরো বেশি জায়গা তৈরি করার জন্য ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কিছু যন্ত্রপাতি ধ্বংস করে ফেলা হবে বা সেখানে রেখে আসা হবে।
তিনি বলেন, উদ্ধারকাজ শেষ করতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি রয়েছে এবং দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে প্রত্যেককেই হয়তো নিয়ে আসা সম্ভব হবে না।
হোয়াইট হাউজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর ৯৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে তাদের উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে কানাডা, নেদারল্যান্ডস এবং ডেনমার্ক।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের উদ্ধার অভিযান আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে।