ই-অরেঞ্জ: ভারতে আটক বাংলাদেশি ইন্সপেক্টর সোহেল রানাকে ঢাকায় আনা কতটা সহজ হবে

  • ফারহানা পারভীন
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
অনুপ্রবেশ দুই দেশেই অপরাধ বলে গণ্য

ছবির উৎস, Getty

ছবির ক্যাপশান,

অনুপ্রবেশ দুই দেশেই অপরাধ বলে গণ্য

ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ঢাকার বনানী থানার পরিদর্শক শেখ মো. সোহেল রানাকে বিএসএফ আটক করার পর বাংলাদেশের পুলিশ বলছে তারা মি. রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

শুক্রবার ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন মি. রানা।

তাকে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ রবিবার আদালতে হাজির করে।

আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছে। মি. রানা এখন মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, শেখ সোহেল রানার আটকের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ভারতের পুলিশের কাছ থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে পারেননি। তবে গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পারার পর তারা মি. রানাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

মি. আসাদুজ্জামান বলেন, ই-অরেঞ্জ সংক্রান্ত দুইটা মামলা হয়েছে, যার একটিতে সোহেল রানার নাম আছে।

"ই-অরেঞ্জের সত্ত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিনের ভাই এবং তিনি (সোহেল রানা) পালিয়ে গেছেন। সব মিলিয়ে আমরা তদন্ত করছি। এবং প্রোপারলি আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করার কাজ করছি", বিবিসিকে বলেন মি. আসাদুজ্জামান।

"আমাদের দেশে যেহেতু তার নামে ফৌজদারি মামলা আছে সেহেতু আমাদের হাতে তাকে হ্যান্ডওভার করার জন্য বলবো"।

আরো পড়ুন:

ছবির উৎস, Courtesy: BSF

ছবির ক্যাপশান,

সোহেল রানার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত পাসপোর্ট এবং ব্যাংক কার্ড।

২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করা অনলাইন শপ ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে সম্প্রতি গ্রাহকরা টাকা নিয়ে সময়মত পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগ করেছেন।

পণ্য ডেলিভারি না দেয়া এবং অগ্রিম অর্থ ফেরত না দেয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান এখন কারাগারে।

বিএসএফ জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা শুক্রবার বিকেলে শেখ মো. সোহেল রানাকে চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করেছে।

দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল দিয়ে তিনি দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন বলে বিএসএফ বলছে।

বিএসএফ কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতারের পর মি. রানা তাদের জানিয়েছেন যে পুলিশ বিভাগ থেকে সাত দিনের ছুটি নিয়ে তিনি সীমান্তের দিকে রওনা হন।

তার গন্তব্য ছিল নেপালের কাঠমান্ডু। সেখানে তার এক বোন থাকেন।

বোনের স্বামীর ভারতের শিলিগুড়িতে এসে তাকে নেপালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

আটক পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড এবং ব্রিটেনের একটি ব্যাংকের কার্ড পাওয়া গেছে বলে বিএসএফ জানিয়েছে।

তার পাসপোর্টে থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ফ্রান্স, চীনসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা রয়েছে বলে বিএসএফ বলছে।

তবে ই-অরেঞ্জের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে সোহেল রানা বিএসএফকে জানিয়েছেন যে তিনি নিরপরাধ এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বাংলাদেশর কোন আদালতে প্রমাণিত হয়নি।

সোহেল রানাকে দেশে আনা যাবে কীভাবে?

ই-অরেঞ্জের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে সোহেল রানা বিএসএফকে জানিয়েছেন যে তিনি নিরপরাধ এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বাংলাদেশর কোন আদালতে প্রমাণিত হয়নি।

এবং তিনি সাত দিনের ছুটি নিয়ে তিনি সীমান্তের দিকে রওনা হন।

তার গন্তব্য ছিল নেপালের কাঠমান্ডু। সেখানে তার এক বোন থাকেন। বোনের স্বামীর ভারতের শিলিগুড়িতে এসে তাকে নেপালে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

তবে বিএসএফ তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ করছে।

এখন বাংলাদেশে মি. রানার বিরুদ্ধে মামলা এবং একই সঙ্গে অনুপ্রবেশের অভিযোগ থাকায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে আইনজীবীরা বলছেন।

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন সোহেল রানার বিরুদ্ধে যেহেতু ফৌজদারি মামলা আছে দেশে তাই তাকে ফিরিয়ে আনা জটিল কিছু হবে না। তবে সেটা নির্ভর করছে আন্তরিকতা এবং কূটনৈতিক লেভেলে আলোচনার উপর।

"অনুপ্রবেশ ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশের আইনে একটা সুনির্দিষ্ট অপরাধ। তবে সেটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে এটা নিশ্চয়তায় দেয়া যায় তাহলে এটা করা সম্ভব"।

বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা এক্সট্রা টেরিটরিয়াল জুরিসডিকশন অব বাংলাদেশ ল'য়ের উল্লেখ করে মি. বড়ুয়া বলেন, "অর্থাৎ বাংলাদেশ করলে অপরাধ হবে, এমন কোন অপরাধ যদি বিদেশে বসে করেন তাহলে সেটার বিচার বাংলাদেশে করা সম্ভব। তবে সেটার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের লিখিত অনুমোদন লাগে। এই বিষয়গুলো উল্লেখ করেই যদি আলোচনা করা হয় তাহলে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য খুব বেশি জটিলতা নেই"।

"তবে পুরো ব্যাপারটা কূটনৈতিক লেভেলে আলাপ আলোচনা করে কত দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে পারেন সেটার উপর নির্ভর করবে"।

বাংলাদেশের নাগরিক ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযুক্ত হলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়।

এর আগে বিএনপির একজন নেতা সালাউদ্দিন আহমদকে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করা হয় ২০১৫ সালে। ২০১৮ সালে তিনি খালাস পান অনুপ্রবেশের দায় থেকে।

কিন্তু পাসপোর্ট ভিসা না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ফলে এখনো দেশে ফিরতে পারেননি বিএনপির ঐ নেতা।

বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: