এডিটার'স মেইলবক্স: মুরাদ হাসান-এর অপরাধ আর বুয়েট হত্যার বিচার নিয়ে প্রশ্ন

  • সাবির মুস্তাফা
  • সম্পাদক, বিবিসি নিউজ বাংলা
মোহাম্মদ মুরাদ হাসান

ছবির উৎস, PID

ছবির ক্যাপশান,

মোহাম্মদ মুরাদ হাসান (সাম্প্রতিক চিত্র)

বিগত কয়েক দিন ধরে আমাদের শ্রোতা পাঠকদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি আলোড়ন ফেলেছে বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের কিছু মন্তব্য ঘিরে প্রবল বিতর্ক এবং তার প্রেক্ষিতে মিঃ হাসানের পদত্যাগ।

সম্প্রতি একটি লাইভ অনুষ্ঠানে মিঃ হাসান বিএনপি নেতা তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে যেসব কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন, সেগুলো অনেকেই বর্ণবাদী এবং নারী বিদ্বেষী হিসেবে দেখেছেন। তখন তার দল আওয়ামী লীগ বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারে নি, বা বুঝেও না বোঝার ভান করেছিল বলে মনে হয়ে।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি মুরাদ হাসানের। কারণ, ক'দিন পরেই একটি পুরনো টেলিফোন কথোপকথন সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস করা হয়, যেখানে মিঃ হাসানকে একজন চিত্রনায়িকাকে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করতে এবং ধর্ষণের হুমকি দিতে শোনা যায়। সেদিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী মিঃ হাসানকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন।

বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার

এই ঘটনা প্রবাহ ঘিরে বেশ কয়েকটি চিঠি এসেছে, প্রথমে লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার: 

''এখানে বেশ কিছু প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন মুরাদ হাসান সম্পর্কে কি আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের কোনো ধারণা ছিল না? এমন নোংরা মানসিকতার একজন মানুষ আওয়ামীলীগের মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন ঠিক কেমন করে?

''মুরাদ হাসান দীর্ঘ দিন ধরে অশালীন এবং বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার করে আসলেও সেটি আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের নজরে কেন পড়ল না? মুরাদ হাসানের মতো লোকেরা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কি যথেষ্ট নয়?''

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের: মুরাদ হাসানের ঘটনা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।

তথ্য প্রতিমন্ত্রীর আচরণ, বিশেষ করে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে হুমকি দেবার ঘটনা, সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে এবং তাতে দলের ভাবমূর্তি যে একেবারে ধুলোয় মিশে গেছে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই মিঃ সরদার। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী একটু দেরিতে হলেও তাকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আমি এখানে দেরি বলছি কারণ, এই পদক্ষেপ জাইমা রহমান সম্পর্কে তার মন্তব্যর পরপরই নেয়া উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়।

বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:

মিডিয়ার নীরবতা

পরের চিঠি লিখেছেন যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল থেকে মোবারক হোসেন:

''প্রথমেই বিবিসিকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরার জন্য। আমি খুবই অবাক হয়েছি বাংলাদেশের মিডিয়ার নীরবতা দেখে। গোটা দেশে ভাইরাল একটা বিষয়ে মিডিয়াতে কোন নিউজ নাই, কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।

''এভাবে আর কতদিন সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখবে? ক্ষমতা একজনের কাছে থাকতেই হবে, কোন সমস্যা নেই, কিন্তু যোগ্য লোককে সঠিক জায়গায় বসিয়ে অযোগ্য লোকদেরকে বহিষ্কার করুন। তাহলে তাদের দল সুন্দর হবে এবং আমাদের দেশও সুন্দর হবে।''

ছবির উৎস, MUNIR UZ ZAMAN

ছবির ক্যাপশান,

বাংলাদেশে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিচ্ছেন

পদত্যাগ যথেষ্ট নয়

আপনি ঠিকই বলেছেন মিঃ হোসেন, ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, যোগ্য ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভায় বা সংসদে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রাখার কোন বিকল্প নেই। তবে মুরাদ হাসানের ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার দক্ষতা নিয়ে যত না প্রশ্ন উঠেছে, তার চেয়ে বেশি উঠেছে তার নৈতিক যোগ্যতা নিয়ে।

বগুড়ার শেরপুর থেকে সম্পদ কুমার পোদ্দার বলছেন, তথ্যমন্ত্রী মুরাদ হাসানের জন্য শুধু পদত্যাগই যথেষ্ট নয়:  

''ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও অন্যান্য নারীদের নিয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ নানা মন্তব্য করে পদ হারিয়েছেন আলোচিত এক প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু এটিই তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়।

''তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা অথবা নারী নির্যাতন আইনে মামলা করে বিচারের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এতে করে অন্যান্য নেতাকর্মী ও জনগণ একটা বার্তা পাবে বলে আমি মনে করি।''

ছবির উৎস, Roberto Machado Noa

ছবির ক্যাপশান,

কানাডার টরন্টো শহর।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী:

''আওয়ামী লীগের প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের যে অডিও বের হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে চলচ্চিত্র জগতের অনেক অভিনেত্রী তাদের লালসার শিকার। মন্ত্রীরা যে নানা রকম অপকর্ম করে এবং তাদের কোন বিচার হবে না, সেটি তার বক্তব্য থেকে বোঝা যায়।

''আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাদেরকে কি আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে? আর তা না হলে কি আইনের প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে?''

আপনাদের দু'জনের বক্তব্যে মূলত একটি কথা ফুটে উঠেছে আর তা হল, মিঃ হাসান যা করেছেন, বিশেষ করে চলচ্চিত্র নায়িকার সাথে, সেটা শুধু অশালীন আচরণ না, অপরাধমূলকও বটে।

হয়তো দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে, সেখানে আইনগত ব্যবস্থা নেবার কোন সুযোগ আছে কি না। তবে মিঃ হাসান ইতোমধ্যেই কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি যাবার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মিঃ হাসানের বিদেশ যাওয়া নিয়ে কোন বাধা নেই, যেহেতু তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।

ঘটনা প্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তো পরের কথা, আদৌ মামলা হবে কি না, তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহর অবকাশ আছে।

আরো পড়ুন:

ছবির উৎস, boonchai wedmakawand

ছবির ক্যাপশান,

কার কথা কে গোপনে রেকর্ড করছে?

ব্যক্তিগত তথ্যে গোপনীয়তা

তবে যে টেলিফোন কথোপকথন প্রতিমন্ত্রীর পতন নিশ্চিত করে, সেটা নিয়ে ছোট প্রশ্ন করেছেন পটুয়াখালীর মৌকরণ থেকে শাহিন তালুকদার:

''তথ্য মন্ত্রীর তথ্য ফাঁস। তাহলে তথ্যের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে কি না? নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি নয় কি?''

ভাল প্রশ্ন করেছেন মিঃ তালুকদার। বাংলাদেশে প্রায় দেখা যায় কারো না কারো ব্যক্তিগত তথ্য বা টেলিফোন কথোপকথন অনলাইনে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারা গোপনে তাদের টেলিফোন কল রেকর্ড করেছে, তাদের আইনগত কোন অধিকার ছিল কি না, কোন উদ্দেশ্যে সেটা ফাঁস করা হল, এসব নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না।

মন্ত্রীদের বেলায় সরকারি নিয়ম-কানুন অবশ্যই আছে, যার মধ্যে তাদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি থাকতে পারে। কিন্তু বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক, লেখক, এনজিও কর্মীসহ সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যর গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আইনগত সহায়তা কতটুকু আছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

জাতীয় সংসদ: নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক।

আওয়ামী লীগের জবাবদিহিতা

মুরাদ হাসানকে ঘিরে পুরো ঘটনাকে বাংলাদেশে শাসন ব্যবস্থার ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন মঈনুল আহমদ মুঈন, যিনি সাতক্ষীরার আশাশুনির বাসিন্দা:

''কোন দেশে যদি আইনের শাসন না থাকে, গণতন্ত্র না থাকে, আদালত বা বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণই ভেঙে পড়ে, তাহলে সেটার পরিণতি হয় খুবই ভয়াবহ। বর্তমানে বাংলাদেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন নেই বিধায়, আওয়ামী লীগের নেতা - নেত্রীরা যা ইচ্ছা তাই বলছে, যা খুশী তাই করতে চাচ্ছে। জনগণ যদি সুষ্ঠু নিয়মে ভোট দিতে পারতো তাহলে তাদের ভেতর ভয় থাকতো।''

আপনি ঠিকই বলেছেন মিঃ আহমদ, মন্ত্রী-এমপিদের যদি নিয়মিত পাবলিকের কাছে ভোটের জন্য যেতে না হয়, তখন তাদের অনেকে নিজেদের জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করেন।

নিয়মিত নির্বাচন এই জবাবদিহিতার ভয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ঢুকায় ঠিকই, কিন্তু তাছাড়াও মিডিয়া এই ভূমিকা পালন করতে পারে। সব চেয়ে কার্যকর হয় আইনের সুষ্ঠু প্রয়াগ, যাতে কেউ নিজেদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে না মনে করেন।

আইনের প্রসঙ্গে যখন আছি, তখন আইনের কঠোর প্রয়োগ নিয়ে একটি চিঠি নেয়া যাক।

ছবির উৎস, ABRAR FAHAD/FACEBOOK

ছবির ক্যাপশান,

ফেসবুকে প্রকাশ করা আবরার ফাহাদের একটি সেলফি

মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর

সম্প্রতি ঢাকার এক আদালত বুয়েট-এর ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, আরো পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

সে বিষয়ে লিখেছেন ভোলার চরফ্যাশন থেকে মুহাম্মদ মাসুদুল হক মাশুক: 

''রায়ের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট, তবে যে পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, তাদেরও মৃত্যুদণ্ড চান তারা। তার মায়ের সাথে আমরাও রায়ে সন্তুষ্ট।

''যাদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, তাদের রায় দ্রুত কার্যকরের জন্য পরের ধাপগুলোও যত দ্রুত সম্ভব তা পার করে এ রায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক। ছাত্র রাজনীতির নামে যাতে কেউ অপরাজনীতি করার সুযোগ না পায়, এ রায় নিশ্চয়ই তাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।''

বিচার কাজ সম্পন্ন হওয়া এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য মিঃ হক। তবে যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, সেখানে দ্রুত রায় কার্যকর করাটা অগ্রাধিকার পেতে পারে না। কারণ, মৃত্যুদণ্ড এমন একটি শাস্তি যেটা একবার কার্যকর হলে আর সংশোধন করা যায় না।

মৃত্যুদণ্ড আদৌ ন্যায় বিচার, না কি প্রতিশোধ, তা নিয়েও বিতর্ক আছে। তাছাড়া, যেখানে ২৫জন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেখানে মৃত্যুদণ্ড কতটা যৌক্তিক, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে।

ছবির উৎস, BBC

ছবির ক্যাপশান,

আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চেয়ে বুয়েটে দেয়ালচিত্র (ফাইল চিত্র)

বিষয়টি ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন ঝিনাইদহ থেকে কাজী সাঈদ:

''বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার রায় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, শুধু আবরার ফাহাদ মারা যায়নি, মারা গেছে হত্যাকারীরা সহ প্রত্যেকের পরিবার আর বাবা মায়ের স্বপ্ন।

''বুয়েটের মত জায়গায় যারা পড়ার সুযোগ পায়, তারা আর যাই হোক এমন নৃশংস হত্যাকারী গোছের কেউ, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তাহলে তাদের এই পথে যেতে হল কেন? যেতে হচ্ছে কেন?''

কঠিন প্রশ্ন করেছেন মিঃ সাঈদ। এক দিকে আপনি ঠিক বলেছেন যে, যাদের অবহেলায় বা প্ররোচনায় ক্যাম্পাসে এরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিত।

কিন্তু অন্যদিকে, যারা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মেরেছে, তারা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের কর্মের জন্য তাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

বাংলাদেশ পুলিশে: বিচারের আগে 'বন্দুকযুদ্ধে' আসামী নিহত।

এক দিকে, বিচারে আসামী মৃত্যুদণ্ড পাচ্ছে, অন্যদিকে আসামী বিচারের আগেই পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে। সেরকম ঘটনা সর্বশেষ ঘটলো কুমিল্লায়। সে বিষয়ে লিখেছেন সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় গাজী মোমিন উদ্দিন:

''সম্প্রতি কুমিল্লায় কাউন্সিলর সোহেল হত্যার দু'জন আসামী বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এই ঘটনা নিয়ে বিবিসিতে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় জনৈক মানবাধিকার কর্মী মামলার অগ্রগতি নিয়ে হতাশা ও সংশয় প্রকাশ করেন, যাতে আমি বিস্মিত হয়েছি।

''যেখানে বিচার নানা কারণে বিলম্বিত হয়; অনেক সময় বিচারের রায় খুনের শিকার ব্যক্তির পরিবারের লোকজন দেখে যেতে পারে না; সাক্ষীর অভাবে বিচারকার্য সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে; সেখানে এই ঘটনায় অন্তত সোহেলের পরিবার কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে, এটা কি ঠিক নয়?

''তাছাড়া বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা কমে যাবার কারণে দেশে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে না? কোন নিরপরাধ মানুষ বন্দুক যুদ্ধে কেন কোনভাবে মারা যাক তা আমরা চাই না।''

আপনি যদি নাই চান যে কোন নিরপরাধ মানুষ বন্দুক যুদ্ধে নিহত হোক, তাহলে তো আপনি এই তথাকথিত বন্দুক যুদ্ধ সমর্থন করতে পারেন না মিঃ মোমিন উদ্দিন। কারণ, অভিযুক্ত আসামী আদালতে দোষী না প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ হিসেবে গণ্য করতে হয়।

তার মানে, প্রতিটি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একটি নির্দোষ প্রাণ কেড়ে নেয়। নির্দোষ, কারণ আদালতে তার অপরাধ প্রমাণিত হয় নি।

জামায়াতে ইসলামী আর মিডিয়া

বিবিসি বাংলা কি জামায়াতে ইসলামীকে বর্জন করে? পরের চিঠি পড়ে সেরকম মনে হতে পারে, লিখেছেন ঝিনাইদহর বারোবাজার থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ:

''জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল, এই দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে, কিন্তু দেশে অন্য নিবন্ধনহীন যে দলগুলো আছে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবিসি সহ মূল ধারার গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, কিন্তু জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কেন প্রকাশ পায়না? এই বিষয়ে আইন কি বলে?''

কোন দলের কর্মকাণ্ড রিপোর্ট করা বা না করা নিয়ে বাংলাদেশে কোন আইন আছে বলে আমার জানা নেই মিঃ আহমেদ। তবে আমি আপনার কথার সাথে একমত না। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড বিবিসি বাংলায় সব সময় প্রচার করা হয়, যদি সেটা গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে।

অর্থাৎ তার নিউজ ভ্যালু যাচাই করে প্রচার করা হয় বা না করা হয়। তার সাথে জামায়াতের নিবন্ধনের কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া, নিবন্ধনটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার, মিডিয়ার ব্যাপার না।

ছবির উৎস, Photo by Tanvir Ibna Shafi

ছবির ক্যাপশান,

ঢাকার লালবাগ কেল্লা

পঞ্চাশে বাংলাদেশ ধারাবাহিক

এবারে আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে একটি প্রশ্ন, লিখেছেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে মেনহাজুল ইসলাম তারেক:

''গত কিছুদিন থেকেই আপনাদের অনুষ্ঠানে পঞ্চাশে বাংলাদেশ নামের একটি বিশেষ ধারাবাহিক প্রচারের বিজ্ঞাপন শুনছি। এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো উদ্যোগ। আমার জানতে চাওয়ার বিষয় হচ্ছে, এটা কত পর্ব চলবে এবং এটা প্রচারের জন্য নতুন করে আমাদের অন্য কোন অনুষ্ঠানকে হারাতে হবে না তো?''

আমাদের অনুষ্ঠানের সময় যেহেতু বাড়ছে না মিঃ ইসলাম, তাই নতুন কিছু দিতে হলে পুরাতন কিছু বাদ দিতেই হবে। পঞ্চাশে বাংলাদেশ ১০ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন একটি পর্ব প্রচার করা হবে, মোট ছ'টি পর্ব। পর্বগুলো প্রবাহ এবং পরিক্রমা, দুটো অধিবেশনেই দেয়া হবে।

অর্থাৎ, এই ছয় দিন নিয়মিত ফিচারগুলো বাদ যাবে। আর প্রতিটি পর্ব যেহেতু প্রায় ১৫ মিনিট লম্বা, তাই এই ছয় দিন প্রবাহতে নিউজের পরিবেশনা কিছুটা সীমিত করা হবে।

সব শেষে, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে প্রতিবেদন সম্পর্কে লিখেছেন ঢাকার গ্রিন রোড থেকে পার্থ ঘোষ: 

''প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সানজানা চৌধুরীর রিপোর্ট থেকে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি আমরা। বিবিসি বাংলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে এই ধরনের বিশেষ রিপোর্ট করায় এবং সানজানা চৌধুরীকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।

''প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়ায় নানা রকম রিপোর্ট হয়েছে, কিন্তু বিবিসি বাংলার এই রিপোর্টটা কেন জানি আমার কাছে মনে হয়েছে অনন্য সাধারণ। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে অনেক তথ্য সমৃদ্ধ রিপোর্ট ছিল এই রিপোর্টটি। ধন্যবাদ।''

আপনাকেও ধন্যবাদ মিঃ ঘোষ, আমাদের পরিবেশনা ভাল লাগার জন্য এবং আমাদের চিঠি লেখার জন্য। আপনার অভিনন্দন সানজানার কাছে পৌঁছে দেব।

এবারে কিছু চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা যাক:

ফয়সাল আহমেদ সিপন, ঘোড়াদাইড়, গোপালগঞ্জ

শামীমা আক্তার লিপি, তালা, সাতক্ষীরা।

মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, কাউনিয়া, বরিশাল।

মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা।

দিপক চক্রবর্তী, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়।

মোহাম্মদ লিয়াকত আলী, পার্বতীপুর দোলাপাড়া, রংপুর।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন, খটখটিয়া, রংপুর ।

মোহাম্মদ মহসিন আলী, লালবাগ, রংপুর।

শিমুল বিল্লাল বাপ্পী, কপিলমুনি, খুলনা।