পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদসহ র‍্যাব কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে ঢাকায় মার্কিন দূত আর্ল আর মিলারকে তলব

রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার

ছবির উৎস, Embassy of the United States of America, Dhaka

ছবির ক্যাপশান,

ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার (ফাইল ফটো

পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ ও কয়েকজন র‍্যাব কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় বাংলাদেশ অসন্তোষ জানিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারকে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে তলব করে এই অসন্তোষের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

"মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে সকালে আমরা ডেকে নিয়েছি। আমার পররাষ্ট্র সচিব আলোচনা করেছেন। উনিও অনেকটা সারপ্রাইজের মতো যে এরকম হয়েছে," মন্ত্রী শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন।

এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন তার সাথেই ছিলেন, তবে এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

তবে পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারের কাছে পুলিশ ও র‍্যাব প্রধানের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশের অসন্তুষ্টি জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রাষ্ট্রদূত মি. মিলার বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগ তার সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছেন।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

বাংলাদেশের বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত র‍্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। (ফাইল ফটো)

শুক্রবার মার্কিন অর্থ দফতরের 'ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস' (ওএফএসি) বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে - যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের মধ্যে র‍্যাব এবং এর সাবেক ডিজি হিসেবে বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ ও র‍্যাবের বর্তমান ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোন সম্পদ থাকলে তা বাজেয়াপ্তও হতে পারে।

বাংলাদেশে শুক্রবার রাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলেও সরকার, পুলিশ বা র‍্যাবের দিক থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এ কে আবদুল মোমেন যা বললেন:

সকালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূতকে তলবের বিষয়টি প্রকাশ করেন মি. মোমেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান ও র‍্যাব ডিজির ওপর নিষেধাজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, "এটা খুবই দুঃখজনক। কিছু এনজিও ও হিউম্যান রাইটস গ্রুপ নাকি অভিযোগ করেছে"।

ছবির ক্যাপশান,

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন

মি. মোমেনের দাবি, আমেরিকাতে প্রতি বছর ছয় লাখ মানুষ নিখোঁজ হয় কিন্তু কিভাবে নিখোঁজ হয় সেটা মার্কিন সরকারই জানে না।

এছাড়া প্রতিবছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমেরিকার পুলিশ হাজার খানেক লোককে মেরে ফেলে, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, "বাংলাদেশে দশ বছরে ৬০০ লোক নাকি র‍্যাব মেরেছে। কিন্তু কাকে মেরেছে সে তথ্য আমাদের কাছে নেই। তারা একটা কিছু বলে দেন আর কি। আমরা আশা করবো যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তথ্যভিত্তিক হওয়া"।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আমেরিকাতে যে ছয় লাখ লোক নিখোঁজ হয় সেজন্য সেখানকার কোন হেড অফ অথরিটির শাস্তি হয় না"।

"আর এখানে নতুন ঢং বের হল যে হেড অফ দা ইন্সটিটিউশনকে - এগুলো লোক দেখানো অপচেষ্টা। সব দেশেই কিছু লোক নিখোঁজ হয়। এগুলো দুঃখজনক"।

তিনি বলেন, "আমেরিকার মতো উন্নত ও পরিপক্ব দেশ অনেক পদক্ষেপ নেয় যা অপরিপক্ব। অনেক দেশে তাদের পদক্ষেপ কারও জন্য মঙ্গলকর হয়নি এমনকি আমেরিকার জনগণের জন্যও না"।

"আসলে যে দেশগুলো উন্নতি করে, যেসব দেশের সরকার ভালো কাজ করে অনেক সময় তাদের ওপর আক্রমণ হয়। আপনি ভালো কাজ করলে তখন সমস্যা হয়। অনেক দেশে লোকজন সন্তুষ্ট ছিলো সেসব দেশ বিভিন্ন অজুহাতে তারা ধ্বংসই করে দিয়েছে। আপনি মঙ্গল করলে অনেকে জেলাসি থেকে অনেক কিছু করে"।

ইচ্ছে করে ক্রসফায়ার হয় না - স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এদিকে, র‍্যাব যে মন্ত্রনালয়ের অধীনে সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রধান আসাদুজ্জামান খান র‍্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে সরাসরি কোন প্রতিক্রিয়া না দিলেও বলেছেন, বাংলাদেশে কেউ ইচ্ছে করে ক্রসফায়ার বা কেউ ইচ্ছে করে গুলি করতে পারে না।

"আমাদের সিস্টেম সুন্দর। কেউ ইচ্ছে ক্রসফায়ার বা কেউ ইচ্ছে করে গুলি করতে পারে না। এসব ঘটনার পেছনে যথাযথ কারণ ছিলো বলেই প্রতীয়মান হয় আমাদের কাছে", ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে একথা বলেন মি. খান।

তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি না দেখে কোন মন্তব্য করা যাবেনা। তবে নিষেধাজ্ঞা যে কারণে দিয়েছে সেটি কিন্তু যে ঘটনাই ঘটেছে তার জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি হয়, যে এক্সিডেন্টের পেছনে দুর্ঘটনা নাকি গাফিলতি ছিল"।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীরা যখন আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে তখন নিরাপত্তা বাহিনী জীবন রক্ষার্থে হয়তো অনেক সময় গুলি করেন।

"কিন্তু সেটা যুক্তিসঙ্গত ছিল কিনা সেটা নিয়ে তদন্ত হয়। এখন আমরা আগে দেখে নেই কেন দিয়েছে (নিষেধাজ্ঞা)। কি উদ্দেশ্যে করেছে," বলছিলেন তিনি।

যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা:

'গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার' অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন অর্থ দফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়, শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের এই দিনে মার্কিন অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস (ওএফএসি) বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে - যারা মানবাধিকার লংঘন এবং নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ছয় জন কর্মকর্তা হচ্ছেন: চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক), বেনজির আহমেদ (সাবেক র‍্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ (বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স), তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন২০১৯), এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)।

এতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে জড়িত থাকার জন্য আজ বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর - যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।