দিনে ১০ ঘণ্টা বন্ধ শাহজালাল বিমানবন্দর, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

  • সায়েদুল ইসলাম
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
তীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজের অংশ হিসাবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে আগামী তিনমাস রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত রানওয়ে বন্ধ থাকছে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

তীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজের অংশ হিসাবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে আগামী তিনমাস রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত রানওয়ে বন্ধ থাকছে।

বাংলাদেশের ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে ১০ ঘণ্টা করে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা।

তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজের অংশ হিসাবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে আগামী তিনমাস রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত রানওয়ে বন্ধ থাকছে।

সেই সঙ্গে বিজয় দিবসের ফ্লাইং পাস্টের প্রস্তুতির জন্য ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচদিন বিমানবন্দরের রানওয়ে সোয়া দুই ঘণ্টা করে বন্ধ থাকছে। অর্থাৎ প্রতিদিন এখন ১০ ঘণ্টা করে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ থাকছে।

এর ফলে বাংলাদেশের প্রধান এই বিমানবন্দর ব্যবহারকারী এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের সময়সূচি পুনর্বিন্যাস করতে হয়েছে। কিন্তু যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, স্বল্প সময়ে বেশি ফ্লাইটের চাপ থাকায় তারা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

উম্মে কুলসুম আক্তারের ভাই গতকাল মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গিয়েছেন।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ''তিনবার আমার ভাইয়ের ফ্লাইট চেঞ্জ হয়েছে। শেষবার আট ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে ঢুকতে বলে। বিকালের ফ্লাইট, আমার ভাই ভোর রাতে ঢুকেছে। সেখানে নাকি খাবার খেতেও লম্বা লাইন দিতে হয়েছে।''

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

কোভিড টেস্টের জন্য বিমানবন্দরের বাইরে যাত্রীদের অপেক্ষা।

প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম শনিবার তার ফেসবুক পাতায় বিমানবন্দরের ভেতরের কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সময়সূচি বলতে কিছু নেই, পর্যাপ্ত খাবার নেই, অনেকের কোভিড টেস্টের মেয়াদ ফুরাতে বসেছে। খাবারের জন্যও লম্বা সারিতে তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

বিমানবন্দরে হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণকাজের জন্য ১০ই ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে আট ঘণ্টা শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ট্রাভেল এজেন্সির একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তাদের সবগুলো ফ্লাইটের সময়সূচি পরিবর্তন করতে হয়েছে। আবার দিনের বেলায় দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার ফলেও এতে বড় পরিবর্তন হয়েছে।

''আমরা সবাইকে ফোন করে জানাচ্ছি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যারা যান, তারা তো সবাই ইমেইল বা ফোন নিয়মিত ব্যবহার করেন না। যাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা হয়তো ফ্লাইট মিস করছেন। এরকম বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রেই ঘটেছে,'' তিনি বলছিলেন।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি যাত্রী আসা যাওয়া করে।

ব্রিটেনে বসবাস করেন এরকম এক প্রবাসী বাংলাদেশি, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি, বিবিসিকে তিনি বলছেন ডিসেম্বর মাসেই তার বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। তিনি বলছিলেন, ''ডিসেম্বর মাসে স্কুলে লম্বা ছুটি পাওয়া যায় বলে প্রবাসীরা এসময় বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনেক আগে থেকে এসব টিকেট কিনে রাখা হয়।

''কিন্তু এয়ারলাইন্স থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, ঢাকার বিমানবন্দরে নির্মাণ কাজ চলার কারণে আমার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। যে সময় তারা ফ্লাইট দিতে চায়, সেই সময় আমার ছুটি নেই, অথবা বাচ্চাদের স্কুল রয়েছে। আমার পরিচিত আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গেই এরকম হয়েছে।''

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গড়ে প্রতিদিন ২৭টি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে। আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রতিদিন ১০০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে এবং সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি যাত্রী আসা যাওয়া করে।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান,

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে দূরপাল্লার বড় বড় এয়ারলাইন্সগুলো সাধারণত মধ্যরাতে বা ভোর রাতে তাদের বিমান পরিচালনা করে। কিন্তু সেই সময়েই শাহজালাল বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় তাদের ফ্লাইটগুলো দিনের বেলায় নিয়ে আসতে হয়েছে।

ফলে একই সময়ে অনেক যাত্রীর চাপ পড়েছে বিমানবন্দরে। এছাড়াও কিছু কিছু দেশে যাওয়ার আগে কোভিড-১৯ টেস্টের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেখানেও তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ বিড়ম্বনার। পিসিআর টেস্টের কাগজ পরীক্ষা, চেকিং, স্বাস্থ্য, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন বা বোর্ডিং পাস সংগ্রহের ক্ষেত্রেও লম্বা লাইনের তৈরি হয়েছে। এমনকি ট্রলি সংকটেও পড়ছেন যাত্রীরা।

তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ''অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলানোর জন্য আমরা ইমিগ্রেশনের সবগুলো কাউন্টার চালু আছে। কাস্টমসকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেন তারা তাড়াতাড়ি করে কাজ করতে পারে। বিমান বন্দরের অন্যান্য ফ্যাসিলিটি বাড়ানোর জন্য জনবল বাড়ানোর বিশেষ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।''

ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি এবং ফ্লাইট বিলম্ব কমে আসছে বলে তিনি জানান।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: