থোয়েইটস: অ্যান্টার্কটিকার যে অতিকায় হিমবাহ নাটকীয় পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে
- জনাথন অ্যামোস
- বিজ্ঞান সংবাদদাতা

ছবির উৎস, ALEKSANDRA MAZUR
থোয়েইটস এত বড় হিমবাহ যে সেটির সীমানা দেখা যায় না
অ্যান্টার্কটিকার সবচেয়ে বড় হিমবাহগুলোর একটিতে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিচ্ছেন।
তারা বলছেন, থোয়েইটস হিমবাহের সামনের যে অংশটি পানিতে ভাসতে দেখা যাচ্ছে, আপাতত সেটি স্থির থাকলেও যেকোনো সময় এটি ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যেতে পারে, যেমনি ফাটল ধরার পর ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে পড়ে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন।
যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা এই হিমবাহটি পর্যবেক্ষণ করছেন। কারণ এটি খুব দ্রুত গতিতে গলে যাচ্ছে।
বর্তমানে বিশালাকার এই হিমবাহ থেকে প্রতিবছরে পাঁচ হাজার টন বরফ মহাসাগরে মিশে যাচ্ছে।
ছবির উৎস, NOC
সামনের বছর একটি স্বয়ংক্রিয় ডুবোজাহাজ গিয়ে বিজ্ঞানীরা এই হিমবাহের নীচে গিয়ে পানির তাপমাত্রা, বর্তমান গতি ইত্যাদি নিয়ে আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবে।
বিশ্বের সমুদ্র সীমায় এর প্রভাব এখনো সামান্য। কিন্তু এই হিমবাহের ওপরের দিকে যত বরফ রয়েছে, তার সব যদি গলে যায়, তাহলে সমুদ্র সীমা ৬৫ সেন্টি মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
এরকম ভয়াবহ বিপর্যয় শত বছরে একবার আসতে পারে। কিন্তু গবেষক দল দেখতে পেয়েছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এই হিমবাহে জমে থাকা বরফ গলার হার অনেক বেড়েছে।
''সম্ভবত আগামী এক দশকের কম সময়ের মধ্যেই এই হিমবাহের সামনের অংশে নাটকীয় একটি পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত সব গবেষণায় সেই ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে,'' বলছেন হিমবাহ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক টেড স্ক্যামবোস। ইন্টারন্যাশনাল থোয়েইটস গ্লেসিয়ার কোলাবরেশন প্রকল্পে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সমন্বয়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উত্তর মেরুর তুষারে পাওয়া গেছে প্লাস্টিকের কণা। এত প্লাস্টিক কীভাবে আসলো সেখানে?
থোয়েইটস একটি অতিকায় হিমবাহ। এটির আকার কমবেশি ব্রিটেন অথবা ফ্লোরিডার সমান। গত ৩০ বছর ধরে এটির গলে যাওয়ার গতি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
কেন এটি ঘটছে, সেটিও শনাক্ত করতে পেরেছেন গবেষকরা। এর মূল কারণ হলো সমুদ্রের উষ্ণ পানি এর নিচে প্রবেশ করছে এবং পানিতে হিমবাহটির সামনের অংশকে গলিয়ে দিচ্ছে।
উষ্ণ পানি এটির জমে থাকা বরফকে সংকুচিত আর দুর্বল করে তুলছে। যার ফলে হিমবাহটির গতি বাড়ছে এবং যেখানে হিমবাহ ভেসে থাকে, সেই এলাকা থেকে সরে যাচ্ছে।
''এটাকে আমি একটা গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের সঙ্গে তুলনা করতে পারি, যেখানে কয়েকটি ফাটল দেখা দিয়েছে এবং আস্তে আস্তে সেটা বাড়ছে। হঠাৎ করে গাড়ি একটা ধাক্কা লেগে পুরো কাঁচটা ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে পড়তে পারে,'' বলছেন অরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির ড. এরিন পেটিট।
হিমবাহের আকার হিসেবে বিবেচনা করলে প্রভাবিত এলাকা তেমন বড় নয়। কিন্তু এটি নতুন এলাকার দিকে যাচ্ছে, যার মানে হল হিমবাহ থেকে আরও বরফ গলে যাবে। সেটির ফলে গুরুতর প্রভাব পড়বে।
বর্তমানে হিমবাহের ৪০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের পূর্বের এলাকাটি প্রতি বছর ৬০০ মিটার করে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতি বছর উত্তর মেরুতে গ্রীষ্মের সময় বিজ্ঞানীরা হিমবাহগুলোর গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করেন। এজন্য তারা হিমবাহতে অবস্থান করে এবং জাহাজ ও স্যাটেলাইট থেকে নজরদারি করে থাকেন।
সামনের বছর একটি স্বয়ংক্রিয় ডুবোজাহাজ গিয়ে বিজ্ঞানীরা এই হিমবাহের নীচে গিয়ে পানির তাপমাত্রা, বর্তমান গতি ইত্যাদি নিয়ে আরও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।